১৫ জানুয়ারি, ২০২২। ঠিক এক বছর আগে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। অধিনায়ক হিসাবে অবসর ঘোষণার পরেও অবশ্য পাঁচ দিনের ক্রিকেটে খেলেছেন।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে টেস্ট সিরিজ খেলতে ভারতে আসছে অস্ট্রেলিয়া। তিনটি টেস্টের সেই সিরিজে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেবেন রোহিত শর্মা।
বিরাট কোহলি পরবর্তী ভারতীয় দলে টেস্টের নেতা হিসাবে রোহিতকে বেছে নিয়েছিলেন নির্বাচকরা। কিন্তু এক বছরে দেখা গিয়েছে, নেতৃত্বে স্থায়িত্বের অভাব বেশ প্রকট।
এক বছরে পাঁচ দিনের ক্রিকেটে কোনও নেতাই স্থায়ী হননি। চোটের জন্য বার বার দলের বাইরে থেকেছেন রোহিত। ফলে কখনও লোকেশ রাহুল কখনও যশপ্রীত বুমরা ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অধিনায়ক বিরাটকে ছাড়া কেমন খেলেছে ভারত? গত এক বছরে বাইশ গজে তাদের প্রদর্শন কেমন? বিরাটহীন নেতৃত্ব কি দুর্বল হয়ে পড়েছে?
পরিসংখ্যান বলছে, কোহলি নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ভারতীয় দল তিনটি দেশের সঙ্গে টেস্ট খেলেছে— শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশ।
বিরাটের নেতৃত্ব ছাড়ার পর গত বছর মার্চ মাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে ভারত। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঘরের মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। দলের নেতৃত্ব দেন নতুন নেতা রোহিত শর্মা।
দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ সহজেই জিতেছিলেন রোহিতরা। মোহালি এবং বেঙ্গালুরুর মাঠে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয় ভারত। উভয় ক্ষেত্রেই জয় এসেছিল বড় ব্যবধানে।
রোহিতের নেতৃত্বাধীন দলে এই শ্রীলঙ্কা সিরিজেই নিজের ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলেন বিরাট। মোহালির প্রথম টেস্টেই তৈরি হয় সেই নজির। বিরাটের শততম টেস্টটি রোহিতের কাছে প্রথম নেতৃত্বের আস্বাদ হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
মোহালিতে শ্রীলঙ্কাকে ২২২ রানে হারিয়েছিল রোহিতের ভারত। বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় টেস্টে জয় এসেছিল ২৩৮ রানে। ফলে টেস্টের নেতা হিসাবে রোহিতের শুরুটা ভালই হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, বিরাটের অভাব ঘোচাবেন রোহিত।
কিন্তু ধাক্কা আসে পরের টেস্টেই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পঞ্চম ম্যাচটি পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী আয়োজিত হয় বার্মিংহ্যামে। রোহিত সেই ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে পারেননি।
ম্যাচের আগেই করোনা আক্রান্ত হন ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক। তাঁর অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টটির নেতা হন জোরে বোলার যশপ্রীত বুমরা।
সাত উইকেটে ম্যাচটি হেরে যায় ভারত। প্রথম নেতৃত্বেই হার হজম করতে হয় বুমরাকে। এই ম্যাচ হেরে যাওয়ার ফলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই সিরিজ ড্র হয়ে যায়।
জুলাইয়ের সেই টেস্টের পর আবার ডিসেম্বর মাসে পাঁচ দিনের ক্রিকেট খেলে ভারত। বাংলাদেশ গিয়ে দু’টি টেস্ট খেলে তারা। এই সিরিজেও নেতৃত্বে স্থায়িত্বের অভাব ছিল স্পষ্ট।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ভারতের অধিনায়ক হিসাবে রোহিত বা বুমরাকে দেখা যায়নি। এই সিরিজের নেতৃত্ব দেন লোকেশ রাহুল।
দু’টি ম্যাচেই অবশ্য জয় এসেছে। প্রথম টেস্টে ১৮৮ রানে জিতেছেন রাহুলরা। পরের টেস্টটিতে জয় আসে ৩ উইকেটে। তবে সিরিজের এই দ্বিতীয় ম্যাচটিতে প্রায় হারের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল রাহুলের ভারত।
বাংলাদেশ টেস্টে চোটের কারণে থাকতে পারেননি রোহিত। যে কারণে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাতে হয় রাহুলকে। তবে তিনি অধিনায়ক হিসাবে নতুন ছিলেন না। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোহলির চোটের কারণে টেস্টের নেতৃত্ব দিতে হয়েছিল তাঁকে।
কোহলি পরবর্তী জমানায় টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে স্থায়ী নেতৃত্বের অভাব ভারতীয় দলে স্পষ্ট। বিরাট দলের সঙ্গে রয়েছেন, খেলছেন, কিন্তু নেতা বিরাটকে পাচ্ছে না ভারত।
সেই ২০১৪ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অনুপস্থিতিতে প্রথম দেশকে টেস্ট খেলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিরাট। তার পর তিনিই স্থায়ী অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন।
সাত বছর ধরে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়ার পর গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ১-২ ফলে হারার পর অধিনায়ক হিসাবে সরে দাঁড়ান বিরাট। কিছু দিন ফর্মে না থাকলেও সম্প্রতি বাইশ গজে আবার তাঁকে স্বমহিমায় দেখা যাচ্ছে। রবিবারই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে ১১০ বলে ১৬৬ রানের ‘বিরাট’ ইনিংস খেলেছেন তিনি।