Uttarkashi Tunnel Rescue Operation

১৫ সংস্থা, ৬৫২ জন কর্মী, ৪০০ ঘণ্টার লড়াই! তবু সুড়ঙ্গযুদ্ধে জয় এল অন্য এক ‘শক্তি’র জোরে

১৭ দিন পর হাসি ফিরেছে আটকে থাকা শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনের মুখেও। তবে এই হাসি ফেরানোর নেপথ্যে ছিল ১৫টি সংস্থা, ৪০০ ঘণ্টার লড়াই, ৬৫২ জন উদ্ধারকারীর নিরলস পরিশ্রম।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০১
Share:
০১ ২১

১৭ দিন ধরে উত্তরকাশীর অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকে থাকার পর উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ জনকে। দীর্ঘ সময় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে দিন কাটানোর পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেরিয়ে শান্তির শ্বাস নিয়েছেন তাঁরা।

০২ ২১

১৭ দিন পর হাসি ফিরেছে আটকে থাকা শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনের মুখেও। তবে এই হাসি ফেরানোর নেপথ্যে ছিল ১৫টি সংস্থা, ৪০০ ঘণ্টার লড়াই, ৬৫২ জন উদ্ধারকারীর নিরলস পরিশ্রম। তবে সবার উপরে ছিল অন্য এক শক্তি— ‘টিমগেম’।

Advertisement
০৩ ২১

৪০০ ঘণ্টা ধরে নিরলস পরিশ্রমের পর ওই ৪১ জনকে উদ্ধার করে সুড়ঙ্গের বাইরে বার করে আনতে পেরেছেন ৬৫২ জন উদ্ধারকারী।

০৪ ২১

ওই ৬৫২ জন উদ্ধারকর্মী আলাদা আলাদা ১৫টি সংস্থায় কাজ করেন। কিন্তু উদ্ধারের সময় এক জোট হয়ে লড়াই চালান তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্য ছিল স্থির।

০৫ ২১

গত ১২ নভেম্বর, দীপাবলির দিন ভোরবেলা উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওয়ের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সুড়ঙ্গটি প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০ ফুট চওড়া। ধ্বংসস্তূপের পিছনে ভাঙা সুড়ঙ্গের ভিতরেই আটকে পড়েন কর্মরত ৪১ জন কর্মী।

০৬ ২১

সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় প্রশাসন। আটকে পড়া কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে খবর দিয়ে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় বাহিনী।

০৭ ২১

উদ্ধারকাজে হাত লাগায় ইন্দো-টিবেটান পুলিশ এবং বর্ডার রোডওয়েজ়ের বাহিনীও। লড়াই শুরু হয় সুড়ঙ্গের দু’প্রান্তে। এক প্রান্তে কর্মীদের সুস্থ ভাবে উদ্ধার করার লড়াই। অন্য প্রান্তে অন্ধকার সুড়ঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই।

০৮ ২১

উদ্ধারকাজ চালানোর পাশাপাশি সুড়ঙ্গে আটকে পড়া কর্মীদের খাবারদাবার, ওষুধপত্র-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহও করে গিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। আটকে থাকা কর্মীদের মনোবল অটুট রাখতে নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও করতেন উদ্ধারকারীরা। কথা বলিয়ে দেওয়া হত পরিবারের সঙ্গেও। অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়।

০৯ ২১

রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ইন্দো-টিবেটান পুলিশ, বর্ডার রোডওয়েজ়ের বাহিনী ছাড়াও উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিল এনডিআরএফ, এসডিআরএফ সহ দেশ-বিদেশের বহু সংস্থা। ছিলেন মোট ৬৫২ জন উদ্ধারকর্মী।

১০ ২১

এই ৬৫২ জনের মধ্যে এনডিআরএফ কর্মী ছিলেন ৬২ জন। রাজ্য মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) কর্মী ছিলেন ৩৯ জন। পাশাপাশি ইন্দো-টিবেটান পুলিশের ১২ এবং ৩৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের মোট ৭৭ জন কর্মী কাজ করছিলেন উদ্ধারস্থলে। উপস্থিত ছিলেন উত্তরকাশীর দমকল বিভাগের ১২ কর্মীও।

১১ ২১

জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বাহিনী (ডিডিএমএ)-র ২৪ জন কর্মীও সুড়ঙ্গে আটকে পড়া কর্মীদের উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন উত্তরকাশীর জল সংস্থান এবং জল নিগম বিভাগের ৫৩ জন কর্মী। উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন ৯ জন জেলা সরবরাহ আধিকারিকও।

১২ ২১

উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছিলেন, উত্তরাখণ্ড পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের ৩২ জন, তথ্য বিভাগের তিন জন এবং পূর্ত বিভাগের এক জন আধিকারিক।

১৩ ২১

এ ছাড়াও মোট ১০৬ স্বাস্থ্যকর্মী এবং ১৯৬ জন পুলিশকর্মী দিনরাত এক করে কাজ করছিলেন ঘটনাস্থলে।

১৪ ২১

২০১৮ সালের জুন মাসে তাইল্যান্ডের একটি গুহা বন্যার জলে ভেসে যাওয়ায় আটকে পড়েন ১২ জন খুদে ফুটবলার এবং তাদের কোচ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাদের উদ্ধার করে এনে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয় তাইল্যান্ডের ওই উদ্ধারকারী সংস্থা। শ্রমিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে আনতে তাইল্যান্ডের সেই সংস্থাকেও ডেকে পাঠিয়েছিল উত্তরাখণ্ড সরকার।

১৫ ২১

পাশাপাশি, ডেকে পাঠানো হয়েছিল নরওয়ের এক সংস্থাকে। সাহায্যের জন্য ডাক পাঠানো হয় কোল ইন্ডিয়ার কর্মীদেরও। ক্রমেই সুড়ঙ্গের মুখের পাথর সরিয়ে সরিয়ে সুড়ঙ্গের আরও অন্দরে ঢুকতে শুরু করেন উদ্ধারকারীরা।

১৬ ২১

৪১ জন সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার ন’দিনের মাথায় উত্তরকাশীর উদ্ধারকাজে দায়িত্বে আসে আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞদের একটি দলও। তার নেতৃত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা আর্নল্ড ডিক্স। তাঁর তত্ত্বাবধানেই উদ্ধারকাজ গতি পায় উত্তরকাশীতে। টানেল থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে নিতে নানা ধরনের পরিকল্পনা করা হয়। কিছু পরিকল্পনা ব্যর্থও হয়। কিন্তু সংস্থাগুলি লাগাতার সুড়ঙ্গ খোঁজার কাজে চালিয়ে যায়। অনুভূমিক এবং উল্লম্ব— দু’ভাবেই চলে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ।

১৭ ২১

সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ডিক্সের। পৃথিবীর যে প্রান্তেই সুড়ঙ্গে বিপদ আসুক, ডিক্স সেখানেই হাজির হয়ে যান তাঁর দলবল নিয়ে। সাফল্য না মেলা পর্যন্ত হার মানেন না সহজে। উত্তরকাশীর ক্ষেত্রেও হার মানেননি।

১৮ ২১

তবে এই ৬৫২ উদ্ধারকারীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ‘র‌্যাট মাইনিং’ কর্মীরা। যখন একের পর এক অত্যাধুনিক খননযন্ত্র পাথরের মোটা দেওয়াল ভেদ করতে ব্যর্থ হয়, তখন দায়িত্ব দেওয়া হয় এই ‘ইঁদুর কর্মী’দের।

১৯ ২১

‘র‌্যাট মাইনিং’ কর্মীদের একটি দল ৮০০ মিলিমিটার ব্যাসের পাইপে প্রবেশ করে শেষ ১০-১২ মিটার খনন করেন শাবল-গাঁইতি নিয়ে। সুড়ঙ্গের মধ্যে ইঁদুরের মতো গর্ত করে করে একেবারে খনি শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যান তাঁরা।

২০ ২১

এর পর সেই গর্ত দিয়ে প্রবেশ করে আটকে থাকা শ্রমিকদের বার করে আনেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র কর্মীরা। যার ১৭ দিন পরে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন কর্মীরা।

২১ ২১

অনেক অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক, আশঙ্কা শেষে সেই সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ কর্মী বেরিয়ে আসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ১৭ দিনের উৎকণ্ঠার শেষে ‘মঙ্গল’ হয় মঙ্গলবারেই। কান্না-হাসি-আনন্দের মধ্যে মুক্তি উদ্‌যাপন করতে দেখা যায় দীর্ঘ দিন সুড়ঙ্গে আটকে থাকা কর্মীদের। যুদ্ধ জয়ের হাসি উদ্ধারকর্মীদের চোখেমুখেও। কারও চোখে চিকচিক করতে দেখা যায় আনন্দাশ্রু।

সব ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement