বিশ্বকাপের রাউন্ড রবিন লিগে শনিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের। সেমিফাইনালে বাবর আজ়মদের দেখা যাবে কিনা, তা নির্ভর করছিল এই ম্যাচের ফলাফলের উপর। পাকিস্তান ইনিংসের ৬.৪ ওভার হয়ে যেতেই সরকারি ভাবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় বাবরের দল।
সেমিফাইনাল খেলার জন্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে শুধু জিতলেই হত না। বাবরদের সামনে ছিল কঠিন অঙ্ক। সবার আগে দরকার ছিল টস জেতা। কিন্তু পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম টস হেরে যান। সেখানেই পাকিস্তানের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। ইডেনে এক বলও হওয়ার আগে বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় নেয় পাকিস্তান।
অঙ্কটা ছিল এরকম—প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ২০ রানে অলআউট হয়ে গেলে পাকিস্তানকে ১.৩ ওভারে ম্যাচ জিততে হত। অর্থাৎ, ৯ বলে করতে হত ২১ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগে এই হিসাব খুব কঠিন মনে না হলেও বিষয়টি খুব একটা সহজও ছিল না। ইংল্যান্ড ৫০ রান করলে ২ ওভারে ম্যাচ জিততে হত বাবরদের। অর্থাৎ, ১২ বলে করতে হত ৫১ রান। ইংল্যান্ড যত বেশি রান করত, পাকিস্তানের সেমিফাইনালের অঙ্ক তত কঠিন হত।
ইংল্যান্ড ১০০ রান করলে পাকিস্তানকে সেই রান তুলতে হত ২.৫ ওভারে। বাটলারেরা ১৫০ রান তুললে বাবরদের ম্যাচ জিততে হত ৩.৪ ওভারে। ইংল্যান্ড ২০০ রান করলে ৪.৩ ওভারে ২০১ রান করতে হত পাকিস্তানকে। আবার ইংল্যান্ড ৩০০ রান করলে জয়ের জন্য পাকিস্তান পেত ৬.১ ওভার। পাকিস্তান টস হারার সঙ্গে সঙ্গে পুরোটাই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
আসলে শুধু শেষ ম্যাচে টস হারার জন্যই যে বাবরেরা বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন, তা নয়। পাকিস্তান একেবারেই ভাল খেলতে পারেনি প্রতিযোগিতায়। শেষ ম্যাচে খেলতে নামার আগেই তাদের বিদায় মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। আটটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিততে পেরেছিল পাকিস্তান।
শুরুটা অবশ্য খারাপ হয়নি পাকিস্তানের। প্রথম দু’টি ম্যাচেই জিতেছিল তারা। যদিও তুলনায় দুর্বল দুই প্রতিপক্ষ পেয়েছিলেন বাবরেরা। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান ৮১ রানে হারিয়েছিল নেদারল্যান্ডসকে। ৫২ বলে ৬৮ রান করে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন সাউদ শাকিল।
দ্বিতীয় ম্যাচে বাবরদের সামনে ছিল শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তান ৬ উইকেটে জেতে। মহম্মদ রিজওয়ান ১২১ বলে অপরাজিত ১৩১ রানের ইনিংস খেলেন।
এর পরেই সমস্যা শুরু হয় পাকিস্তানের। টানা চারটি ম্যাচে হেরে যায় তারা। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হারতে হয় পাকিস্তানকে। এ ছাড়াও তাদের হারিয়ে দেয় প্রতিযোগিতার বিস্ময় আফগানিস্তান।
এ বারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মনোবল বড় ধাক্কা খায় ভারতের কাছে হেরে। মাত্র ১৯১ রানে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তান। ১১৭ বল বাকি থাকতে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রোহিত শর্মার দল। রোহিত ৬৩ বলে ৮৬ রান করেন। যশপ্রীত বুমরা ৭ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।
পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নারের ১২৪ বলে ১৬৩ রানের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া ৩৬৭ রান তোলে। পাকিস্তানের ইনিংস ৩০৫ রানে শেষ হয়ে যায়।
পাকিস্তান হেরে যায় আফগানিস্তানের কাছেও। ৮ উইকেটে হারেন বাবররা। আফগানিস্তানের নুর আহমেদ ৩ উইকেট নেন। ইব্রাহিম জাদরান ৮৭ রান করেন। এক ওভার বাকি থাকতে পাকিস্তানকে হারায় আফগানিস্তান।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করে পাকিস্তান। ২৭১ রানের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। ১ উইকেট বাকি থাকতে জিতে যায় তারা। ২৫০ রানে ৮ উইকেট পড়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। সেখান থেকে ম্যাচ বার করে নেয় টেম্বা বাভুমার দল।
পরের দু’টি ম্যাচে জিতে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে পাকিস্তান। তারা হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ এবং নিউ জ়িল্যান্ডকে। অঙ্কের বিচারে শেষ চারে যাওয়ার একটা আশা তৈরি হয় পাকিস্তানের।
বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে নেট রানরেট অনেকটাই ভাল করে পাকিস্তান। ১০৫ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে জেতে তারা। ফখর জামান ৭৪ বলে ৮১ রান করেন। শাহিন আফ্রিদি ও মহম্মদ ওয়াসিম ৩টি করে উইকেট নেন।
নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হারলেই বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে যেত পাকিস্তানের। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যচে পাকিস্তান ২১ রানে জেতে। ৪০১ রান করেও হেরে যেতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
পাকিস্তানের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায় নিউ জ়িল্যান্ড তাদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়ায়। প্রায় ২৭ ওভার বাকি থাকতে জেতে কিউয়িরা। সে দিনই বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় হয়ে যায় পাকিস্তানের।