চলতি বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছে ভারত। টানা ১০টি ম্যাচে জিতে রবিবার আমদাবাদে ফাইনাল খেলবেন রোহিত শর্মারা। তাঁদের মুখোমুখি পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনাল শুরুর আগে থেকেই ক্রিকেট জ্বরে কাবু গোটা দেশ। বিশ্বকাপ নিয়ে চেনা উন্মাদনা চোখে পড়ছে পাড়ার মোড়ে মোড়ে। ১২ বছর পরে রোহিতদের হাতেই আবার কাপ দেখতে চান দেশবাসী।
ভারতীয় ক্রিকেট দল দর্শকদের হতাশ করেনি। প্রথম থেকেই দুরন্ত ক্রিকেট খেলে ফাইনালে উঠেছে তারা। এখনও পর্যন্ত ভারতই একমাত্র দল, যারা চলতি বিশ্বকাপে অপরাজিত।
বিরাট কোহলি থেকে মহম্মদ শামি, রবীন্দ্র জাডেজা থেকে শুভমন গিল, ভারতের জার্সিতে এ বার প্রত্যেকেই সফল। ফর্মে আছেন দলের প্রায় সকলেই। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলকে ফাইনালে হারানো সহজ হবে না বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ভারতীয় খেলোয়াড়েরা বিশ্বকাপের শুরু থেকে কে কেমন খেললেন, ফাইনালেই বা কে সেরা হয়ে উঠতে পারবেন, তা নিয়ে নানা রকম জল্পনা চলছে। ফাইনালের আগে রোহিত, বিরাটদের নম্বর দিল আনন্দবাজার অনলাইন।
ভারত যে ফর্মে রয়েছে, তাতে ফাইনালে দলে খুব একটা বদল করা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেমিফাইনালের ১১ জনকেই আমদাবাদের মাঠে নামাবেন রাহুল দ্রাবিড়েরা। এক ঝলকে এ বারের বিশ্বকাপে ভারতের ১১ জনের রিপোর্ট কার্ড।
ভারত-অধিনায়ক রোহিত বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছেন। একটি ম্যাচে শতরান পেয়েছেন। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেই রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৪ বলে ১৩১ রান। এ ছাড়া, আরও তিনটি ম্যাচে তিনি অর্ধশতরান করেন।
একই ভাবে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন রোহিত। তাঁকে ইনিংসের শুরুতেই ফিরিয়ে ভারতকে দু’বার ধাক্কা দিয়েছে বিপক্ষ। বিশ্বকাপের ১০ ম্যাচে রোহিতের মোট রান ৫৫০। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৭।
ভারতের অপর ওপেনার শুভমন গিল। তিনিও এ বারের বিশ্বকাপে নজর কেড়েছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে চারটি অর্ধশতরান। প্রথম থেকে শুভমন খেলার সুযোগ পাননি। তৃতীয় ম্যাচ থেকে ভারতের হয়ে ওপেন করেছেন তিনি।
বিশ্বকাপে আটটি ম্যাচ খেলে শুভমনের মোট রান ৩৫০। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সব ঠিক থাকলে হয়তো প্রথম শতরানটিও তিনি পেয়ে যেতেন। কিন্তু চোটের কারণে তাঁকে মাঝপথে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। ওই ম্যাচে ৮০ রান করে অপরাজিত ছিলেন শুভমন। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৬।
বিশ্বকাপে শুধু ভারতের হয়ে নয়, গোটা টুর্নামেন্টেই সবচেয়ে বেশি রান রয়েছে বিরাট কোহলির পকেটে। ১০ ম্যাচে তাঁর মোট রান ৭১১। পেয়েছেন তিনটি শতরান। যে কোনও বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে বিরাট সফল।
ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড় হিসাবে বিশ্বকাপে বিরাটের নাম উঠে এসেছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি শূন্য রানে ফেরেন। রান পাননি পাকিস্তান ম্যাচেও। এ ছাড়া প্রায় সব ম্যাচেই বিরাটের ব্যাট থেকে রান এসেছে। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৯।
এ বারের বিশ্বকাপে রান পেয়েছেন শ্রেয়স আয়ারও। শেষ দু’টি ম্যাচে পর পর শতরান পেয়েছেন তিনি। নামের পাশে রয়েছে তিনটি অর্ধশতরানও। ভারতের মিডল অর্ডারের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে শ্রেয়সের ব্যাটে। ১০ ম্যাচে তাঁর মোট রান ৫২৬। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৭।
পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে লোকেশ রাহুলও রান পাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই চার, ছয় হাঁকাচ্ছেন। একটি ম্যাচে শতরান পেয়েছেন তিনি। তা ছাড়া, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ৯৭ রান করেছিলেন। নয় ম্যাচে রাহুলের মোট রান ৩৮৬। উইকেটের পিছনেও বেশ সপ্রতিভ। কয়েকটি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৭।
ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে ছয় নম্বরে আছেন সূর্যকুমার যাদব। তিনি সব ম্যাচে সুযোগ পাননি। সুযোগের সদ্ব্যবহারও ঠিকমতো করতে পারেননি। বাকিদের সাফল্যে তাঁর রানের খরা কিছুটা হলেও চাপা পড়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপের একটি ম্যাচেই রান পেয়েছিলেন সূর্য। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪৭ বলে ৪৯ রান করেন। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৪।
রবীন্দ্র জাডেজা ভারতের প্রথম একাদশে একমাত্র অলরাউন্ডার। ব্যাট এবং বল হাতে ভাল ফর্মে রয়েছেন বাঁহাতি জাডেজা। দলের ভারসাম্যের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চারটি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। রান করেছেন ১১১।
বল হাতেও ভেল্কি দেখিয়েছেন জাডেজা। ১০ ম্যাচে তাঁর প্রাপ্ত উইকেট ১৬টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিনি একাই পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে জেতান। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে জাডেজা পাচ্ছেন ১০-এ ৬।
উইকেট পাচ্ছেন কুলদীপ যাদবও। তাঁর স্পিন খেলতে গিয়ে অনেক সময়েই বিপক্ষ দলের ব্যাটারদের বিপদে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ১০ ম্যাচে কুলদীপ মোট ১৫টি উইকেট নিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৫।
ভারতীয় বোলিং আক্রমণের অন্যতম স্তম্ভ যশপ্রীত বুমরা। ১০ ম্যাচে তিনি পেয়েছেন ১৮টি উইকেট। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চারটি উইকেট নিয়েছেন তিনি একাই। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৭।
বুমরার সঙ্গে সাধারণত ভারতের বোলিং আক্রমণের শুরুটা করেন মহম্মদ সিরাজ। তিনিও ফর্মে রয়েছেন। ১০ ম্যাচে পেয়েছেন ১৩টি উইকেট। মাঠে সিরাজের ফিল্ডিংয়ের দুর্বলতা চোখে পড়ছে বার বার। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ তিনি ফেলে দিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৫।
ভারতের বোলিং আক্রমণে এই মুহূর্তে সবচেয়ে চর্চিত নাম মহম্মদ শামি। প্রথম চারটি ম্যাচে তিনি খেলার সুযোগ পাননি। সুযোগ পেতেই জ্বলে উঠেছেন। পর পর প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই শামি উইকেট পেয়েছেন।
বিশ্বকাপের পঞ্চম ম্যাচে বল হাতে নেমেই পাঁচ উইকেট তুলে নেন শামি। ছ’টি ম্যাচে তাঁর মোট প্রাপ্ত উইকেট ২৩টি। এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে যা সর্বোচ্চ। সেমিফাইনালে শামি একাই সাতটি উইকেট নিয়ে নিউ জ়িল্যান্ডকে দুরমুশ করেছেন। তাঁর কোনও খুঁত ধরার জায়গা নেই। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ১০।