আট বলে দরকার ছিল ২৮ রান। হ্যারিস রউফের চতুর্থ বলে এক রান নিয়ে হার্দিক স্ট্রাইক দেন কোহলিকে। তার পরই যেন বাকি ছিল ‘ভয়ঙ্কর খেলা’। ফর্মে থাকা বিরাট দেখিয়ে দিলেন কেন তাঁকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার।
রউফের পঞ্চম বল ছিল কোমরের উচ্চতায়। স্রেফ টাইমিংয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে হেলায় বিরাট ছয় মারলেন কোহলি। মেলবোর্নের মতো একটি বড় মাঠে গ্যালারিতে গিয়ে পড়ল যে বল, তাতে প্রাণ পেলেন তামাম ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
৭ বলে প্রয়োজন ২২ রান। স্ট্রাইকে বিরাট। এ বার ফ্লিক করে অসাধারণ মুন্সিয়ানায় সোজা গ্যালারিতে পড়ল বল। ননস্ট্রাইকে দাঁড়ানো হার্দিকের চোখেও বিস্ময়। এ ভাবেও ছয় মারা যায়! ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে দক্ষ শিল্পীর তুলির মোচড়় যেন।
৬ বলে দরকার ১৬ রান। স্ট্রাইকে হার্দিক। মহম্মদ নওয়াজের প্রথম বলকে গ্যালরিতে ফেলতে গিয়ে তালুবন্দি হয়ে ফিরতে হল হার্দিককে। পিঞ্চ হিটার হার্দিকের এ দিনের খেলা একেবারেই পাণ্ড্য-সুলভ ছিল না। গ্যালারিতে তখন নিস্তব্ধতা।
৫ বলে দরকার ১৬ রান। স্ট্রাইকে এলেন দীনেশ কার্তিক। প্রথম বলটা ছিল ফুলটস। কার্তিক লং অনে ঠেলে স্ট্রাইক দিলেন বিরাটকে।
স্ট্রাইকে বিরাট তখন আত্মবিশ্বাসে ফুটছেন। লং অনে ঠেলে দিয়ে ২ রান নিলেন কোহলি। দ্রুত গতিতে দৌড়লেন কার্তিক।
কোমরের উপরের উচ্চতার বলকে ডিপ স্কোয়ার লেগে পুল করে মাঠের বাইরে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে হাবেভাবে বোঝালেন, ‘ম্যায় হুঁ না।’ আম্পায়ার ডাক দিলেন ‘নো’। অর্থাৎ, পরের বলটি ফ্রি হিট।
পঞ্চম বলে স্ট্রাইকে কার্তিক। সুইপ মারতে গেলেন। কিন্তু মিস করলেন। আর দেরি করেননি উইকেট রক্ষক রিজ়ওয়ান। স্ট্যাম্প আউট হলেন কার্তিক।
নামলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দরকার তখন ২ রান। ম্যাচ কি যাবে সুপার ওভারে? অশ্বিন পারবেন ম্যাচ বের করতে? অন্তত একটা রান নিয়ে বিরাটকে স্ট্রাইক দেন। আপামর দর্শক যখন তখন সেটাই ভাবছে।
রিজ়ওয়ানের পঞ্চম বল ওয়াইড! এক রান। একই সঙ্গে ম্যাচ হল ড্র। ভারতের হারার অন্তত ভয় নেই আর। নন স্ট্রাইকে বিরাট তখন স্থির থাকতে পারছেন না।
বাবর আজ়ম সব ফিল্ডারকে তুলে আনছেন সার্কেলের মধ্যে। তিনিও বুঝে গিয়েছেন কী ভাবে নতুন নামা অশ্বিনের উপর চাপ তৈরি করতে হবে।
নওয়াজ় বল করলেন। অশ্বিন স্কুপ করলেন মিড অফে। ফিল্ডারের পাশ দিয়ে ধীর গতিতে বল চলে যাচ্ছে আউটফিল্ডে। দৌড়লেন কোহলি।
অশ্বিন রান নেওয়ার দৌড়ের মাঝেই মুষ্টিবদ্ধ হাত তুললেন এক বার। রান নিয়েই ছুটে গেলেন বিরাটের দিকে।
বিরাটও যেন এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এত ক্ষণের লড়াই শেষ হল। বড় ইনিংস মূল্য পেল দলের জয়ের মাধ্যমে। গত বারের পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধ তুলল ‘টিম ইন্ডিয়া’।