জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছিলেন কৃষক। আদালতের রায়ে যা পেয়েছিলেন, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি ৪৫ বছরের সেই ব্যক্তি। যদিও পেয়ে খুব একটা লাভ হয়নি তাঁর। কারণ ক্ষতিপূরণের জিনিস ঘরে তুলতে পারেননি তিনি।
নর্দার্ন রেল জমি অধিগ্রহণ করেছিল। সেই নিয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলা করেছিলেন লুধিয়ানার কৃষক। ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাঁকে আস্ত ট্রেন দিল আদালত।
জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস পেয়েছিলেন ওই কৃষক। ট্রেনটি নয়াদিল্লি থেকে অমৃতসর পর্যন্ত চলে।
কৃষকের নাম সম্পূর্ণ সিংহ। লুধিয়ানা জেলার কাটানা গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
রায়টি দিয়েছিলেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক যশপাল বর্মা। তিনি নির্দেশে জানান, লুধিয়ানা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনটি (১২০৩০) দিতে হবে ওই কৃষককে।
২০১৫ সালে কৃষককে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ নর্দার্ন রেলওয়েকে দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই ২০১৭ সালে দায়রা বিচারক যশপাল ওই কৃষককে ট্রেন দেওয়ার নির্দেশ দেন। সঙ্গে স্টেশন মাস্টারের ঘরটিও দিতে হবে বলে জানান।
এই নির্দেশের ফলে ট্রেনের মালিক হন কৃষক সম্পূর্ণ। স্বাভাবিক ভাবেই সেটি বাড়ি নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন।
আদালতের নির্দেশের পর ট্রেনটি লুধিয়ানা স্টেশনে পৌঁছনোর এক ঘণ্টা আগেই সেখানে পৌঁছে যান সম্পূর্ণ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আইনজীবী রাকেশ গান্ধী।
নির্দিষ্ট সময় মেনে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে স্টেশনে পৌঁছয় স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস। তখন চালকের হাতে আদালতের নির্দেশ তুলে দেন সম্পূর্ণ। সেখানে লেখা ছিল, তিনিই ওই ট্রেনের মালিক।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আদালতের এক আধিকারিক। তাঁর থেকে সুপারদারি নিয়ে ট্রেনটিকে সম্পূর্ণের হাত থেকে নিয়ে নেন সেকশন ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ কুমার। এর অর্থ, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ট্রেন সম্পূর্ণের পরিবর্তে আদালতের হেফাজতে থাকবে।
গোটা প্রক্রিয়া শেষ হতে ৫ মিনিট সময় লেগেছিল। বলা যায়, পাঁচ মিনিটের জন্য ট্রেনের মালিক হয়েছিলেন ওই কৃষক।
সম্পূর্ণ জানিয়েছিলেন, তিনি ট্রেনটিকে আটকাতে চাননি। কারণ তাতে বিপদে পড়তেন যাত্রীরা।
ঠিক কী হয়েছিল? ২০০৭ সালে লুধিয়ানা-চণ্ডীগড় রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এক একর জমির জন্য ২৫ লক্ষ টাকা দর দেওয়া হয়। পরে তা বৃদ্ধি করে ৫০ লক্ষ করা হয়।
সেই হিসাবে সম্পূর্ণের ১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। যদিও নর্দার্ন রেল তাঁকে দিয়েছিল ৪২ লক্ষ টাকা। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে বকেয়া ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তার পরেও সেই টাকা না মেলায় আদালতে আবার আবেদন করেন সম্পূর্ণ।
রেলের তৎকালীন ডিভিশনাল ম্যানেজার অনুজ প্রকাশ জানান, কৃষকের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে রফা হয়েছে। এ ধরনের রায় আদালত দিতে পারে কি না, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক বিচার করবে। কটাক্ষের সুরেই তিনি বলেন, ‘‘৩০০ মিটার দীর্ঘ একটা ট্রেন নিয়ে এক জন কৃষক কী করবেন? তিনি কী বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন সেই ট্রেন?’’ সেই জবাব যদিও অধরাই থেকেছে।