এ বারের আইপিএল নিলামে ক্রিকেটারদের কিনতে দলগুলির খরচ হয়েছে ১৪৫ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে ১৪টি আইপিএলে ক্রিকেটারদের পিছনে মোট খরচের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল। এ বারের নিলামের শেষে টাকার অঙ্কটা ৬ হাজার ১৪৪ কোটি।
এ বার ৮টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মোট ৫৭ জন ক্রিকেটার কিনেছে। তাঁদের মধ্যে ২২ জন বিদেশি। সব আইপিএল মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ৭৮৯ জন ক্রিকেটারকে কেনা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ভারতীয় ৫৬.৭ শতাংশ।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ৬ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার অধিকাংশটাই ব্যয় হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য। এই তালিকায় এর পরেই রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারত: ১৪টি আইপিএল মিলিয়ে বিরাট কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, যুবরাজ সিংহদের জন্য দলগুলির খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য ব্যয় হওয়া এই টাকার অঙ্কটা সার্বিক ভাবে ব্যয় হওয়া টাকার ৫৬.৭ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বের সব দলের ক্রিকেটারদের জন্য সম্মিলিত ভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির যে টাকা খরচ হয়েছে, শুধু ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য খরচ হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি।
অস্ট্রেলিয়া: ভারতের পরেই এই তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সবক’টি আইপিএল মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মোট ৯৪ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, প্যাট কামিন্সের মতো অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা বিভিন্ন দল থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ৯০৫ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ভারত, অস্ট্রেলিয়ার পরেই রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। এ বার ক্রিস মরিসকে রেকর্ড সওয়া ১৬ কোটি টাকায় নিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। সব আইপিএল মিলিয়ে মরিস, এবি ডিভিলিয়ার্সরা এখনও পর্যন্ত ৫৩৯ কোটি টাকা আয় করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ৫৬ জন ক্রিকেটার খেলেছেন আইপিএলে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: টেস্ট বা এক দিনের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রমরমা এখন আর না থাকলেও আইপিএলে তাঁদের কদর রয়েছে। মোট ৩৩ জন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার খেলেছেন আইপিএলে। ক্রিস গেল, সিমরন হেটমেয়ারদের মোট আয় ৪৫৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। শুধু আইপিএল নয়, অন্যান্য দেশের ক্রিকেট লিগেও চাহিদা রয়েছে গেলদের।
ইংল্যান্ড: শুরুতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এবং ইংরেজ ক্রিকেটারদের আইপিএল নিয়ে নাক সিঁটকানো ব্যাপার ছিল। কিন্তু তাঁরা মুক্তমনা হতেই কদর বেড়েছে তাঁদের। এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩ জন ইংরেজ ক্রিকেটার খেলেছেন আইপিএলে। অইন মর্গ্যান, বেন স্টোকসরা পকেটে পুরেছেন ২৮৫ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা।
নিউজিল্যান্ড: এ বারের নিলামে নিউজিল্যান্ডের কাইল জেমিসনের দর উঠেছে ১৫ কোটি টাকা। তাঁকে নিয়েছে বিরাট কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। তিনি ক্রিস মরিসের ঠিক পরেই রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মোট ৩১ জন ক্রিকেটার আইপিএলে খেলেছেন। কিউই ক্রিকেটারদের জন্য সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২১১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।
শ্রীলঙ্কা: শুরুতে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা আইপিএলে বেশি সংখ্যায় খেললেও পরের দিকে তাঁদের অংশগ্রহণ কমে যায়। এখনও পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মোট ২৭ জন ক্রিকেটার বিভিন্ন সময়ে আইপিএলে খেলেছেন। তাঁদের জন্য মোট খরচ হয়েছে ১৯৫ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা।
আফগানিস্তান: এখনও পর্যন্ত আইপিএলে আফগানিস্তানের মোট ৪ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। তার মধ্যে সবথেকে বেশি নজর কেড়ে নিয়েছেন রশিদ খান। সব মিলিয়ে আইপিএল থেকে রশিদ, নবিদের মোট আয় ৫৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
বাংলাদেশ: ১৪টি আইপিএল মিলিয়ে বাংলেদেশের মোট ৬ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। শাকিব আল হাসান এ বার দ্বিতীয় বারের জন্য আসছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। শাকিব, মুস্তাফিজুর রহমানরা এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে পকেটে পুরেছেন ৩৪ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা।
পাকিস্তান: শুরুর দিকে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আইপিএলে খেলার অনুমতি ছিল। কিন্তু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হতে হতে এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর জেরে এখন আর পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আইপিএলে খেলতে দেওয়া হয় না। যে ১১ জন পাকিস্তানি ক্রিকেটার আইপিএলে খেলেছেন, তাঁদের মোট আয় ১২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা।
নেদারল্যান্ডস: এখনও পর্যন্ত মাত্র ২ জন ডাচ ক্রিকেটারের আইপিএলে খেলার সুযোগ হয়েছে। যে দু’জনের ভাগ্যে আইপিএল শিকে ছিঁড়েছে, তাঁরা মোট ৫ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা আয় করেছেন।
জিম্বাবোয়ে: নেদারল্যান্ডসের মতোই অবস্থা জিম্বাবোয়েরও। তাদের মাত্র ৩ জন ক্রিকেটার আইপিএল খেলেছেন। সেটাও একেবারে শুরুর দিকে। এই দু:জনের মোট আয় ১ কোটি টাকা।
দেখা যাচ্ছে ক্রিকেটারদের কেনার ক্ষেত্রে বা পারিশ্রমিক দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগুলির কোনও কার্পণ্য নেই। যে গতিতে আইপিএল এগচ্ছে, তাতে ক্রিকেটারদের জন্য বিনিয়োগের অঙ্কটা খুব তাড়াতাড়ি ১০ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।