পাহাড়, সমুদ্র বা পুরনো কেল্লা— স্কটল্যান্ডের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছে ব্রিটেনের ইতিহাসের ছোঁয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও কোনও কোনও পর্যটন স্থান খুব বিখ্যাত। তবে, স্কটল্যান্ডের সব জায়গায় ঘুরতে গেলেও পার্থশায়ার অঞ্চলে যাওয়ার কথা চিন্তা করলেই যেন পর্যটকদের মনের ভিতর ভয় জাঁকিয়ে বসে।
পার্থশায়ারের ব্লেয়ারগোরির উত্তর দিকে এ৯৩ নামে একটি সড়ক রয়েছে। ব্রিটেনের এই রাস্তা বেশির ভাগ সময় জনবহুল থাকে। তবুও এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করার সময় কয়েক জন পথযাত্রী নাকি এমন দৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছেন যে দ্বিতীয় বার আর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেননি।
এ৯৩ সড়কপথ দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের মুখে মুখে একটি ‘ভূতুড়ে’ কুকুরের কথা শুনতে পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যেই নাকি বিশাল আয়তনের একটি লোমশ কুকুরকে ওই রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়।
কথিত রয়েছে যে, ব্লেয়ারগোরির ওই রাস্তায় অন্য কোনও কুকুর অথবা ঘোড়া টহল দিতে এলে নাকি ‘ভূতুড়ে’ কুকুরটি তাদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। ওই রাস্তার মালিক যেন তিনি একাই। আর কোনও প্রাণীকে সে রাস্তায় ভয় দেখায় না।
অনেক বার নাকি বিশালাকার এই কুকুরের অবয়ব দেখতে পেয়েছেন পথযাত্রীরা। কেউ কেউ ‘চোখের ভুল’ বলে মনে করলেও অনেকে বিশ্বাস করেন সত্যিই এ রকম কোনও ভয়ঙ্কর জন্তু ঘোরাফেরা করে এ৯৩ সড়কে। মাঝেমধ্যে ঘোড়া এবং কুকুরগুলির অস্বাভাবিক আচরণ দেখে ঘাবড়ে যান তাঁরা। কিন্তু এমন আচরণ করার অন্য কোনও কারণ তাঁরা খুঁজে পাননি। তাই এর জন্য ওই ‘অবয়ব’কে দায়ী করেন এলাকার বাসিন্দারাও।
অনেকে আবার বিশালাকার কুকুরটিকে ‘হেলহাউন্ড’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। ‘হেলহাউন্ড’-এর কাহিনি সে দেশের পুরাকথায় উল্লেখ করা রয়েছে। এই কুকুরটির লাল চোখ, দানবাকৃতি চেহারা। শরীর থেকে সবসময় পাঁশটে গন্ধ বেরোতে থাকে।
লোমশ এই কুকুরটি নাকি নরকের প্রবেশদ্বারের সামনে পাহারা দেয়। তীব্র গতিতে ছুটতে পারে সে। এই কুকুরের গায়ের জোরও প্রচুর। এ ছাড়াও নানা রকম অদ্ভুত এবং রহস্যজনক ক্ষমতার অধিকারী সে। ‘হেলহাউন্ড’ ছাড়াও বিভিন্ন নামে পরিচিত নরকের এই পাহারাদার। ‘ব্ল্যাক শাক’, ‘বার্ঘেস্ট’, ‘সারবেরাস’ প্রভৃতি নামে ডাকা হয় এই কুকুরকে।
অনেকের অনুমান, এই ‘হেলহাউন্ড’ই নরকের দ্বার থেকে উঠে আসে এ৯৩ সড়কপথে। এই ঘটনার সঙ্গে এলাকার ইতিহাসেরও যোগ রয়েছে বলে দাবি করেন অনেকে। প্রায় ৪০০ বছরেরও আগে হেলহাউন্ডের আবির্ভাব হয় এই এলাকায়। তার পর থেকে নাকি মাঝেমধ্যেই কুকুরটির দেখা মেলে।
১৫৭৭ সালের ঘটনা। ব্লেয়ারগোরি থেকে সামান্য দূরে বানগে এলাকায় একটি গির্জার দৃশ্য। সময় সকাল ৯টা কি ১০টা। হঠাৎ গির্জার চারদিক নাকি অন্ধকারে ঢেকে যায়। ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। গির্জার দেওয়ালগুলিও কাঁপতে থাকে। গির্জার ভিতরে যাঁরা ছিলেন তাঁরা দেখলেন যে চোখের সামনে এক দানবাকার কুকুর দাঁড়িয়ে রয়েছে। কুকুরটির সারা গায়ে আগুন জ্বলছে।
কুকুরটি কোথা থেকে হাজির হল, সে বিষয়ে কারও কোনও ধারণা ছিল না। দাবি করা হয়, কুকুরটি ঝড়ের বেগে গির্জার ভিতর ঢুকে পড়ে। দু’জনকে নাকি মেরেও ফেলে কুকুরটি। কুকুরের গায়ের আগুনে পুড়ে যান আরও এক জন।
একই ধরনের ঘটনা ঘটে ১১ কিলোমিটার দূরে আরও একটি গির্জায়। ওই গির্জার সামনেও একই ভাবে নাকি একটি কুকুর হাজির হয়। তার আক্রমণে গির্জায় উপস্থিত তিন জন মারা যান। গির্জার উত্তরমুখী দরজায় কুকুরটি আঁচড়ও কাটে। এখনও ওই গির্জার দরজায় আঁচড়ের দাগ লক্ষ করা যায়।
কয়েক বছর আগে বর্ষবরণের দিন এক চিত্রগ্রাহক ব্লেয়ারগোরি এলাকায় গিয়েছিলেন। সেই সময় এক অদ্ভুত জন্তু দেখে তার ছবি তোলেন তিনি। দূর থেকে একঝলক দেখলে মনে হয় যে, এই জন্তু কোনও বুনো শুয়োর। কিন্তু অনেকের দাবি, এটি কোনও শুয়োর নয়। এমন লোমশ, বিশাল চেহারা কোনও শুয়োরের হতে পারে না। ছবিতে ওই ‘হেলহাউন্ড’ই ফুটে উঠেছে বলে অনেকের অনুমান।
তবে এই ঘটনা আদৌ সত্যি কি না, তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকেই। কেউ কেউ গুজব বলে ঘটনাটি উড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার দাবি করেছেন যে, এই বিষয়টি সম্পূর্ণ মনগড়া। অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লোকজনকে এ ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। তবুও ‘হেলহাউন্ড’-এর ভয় যেন মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে।