ভারতে বসে প্রতিরক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নথি পাকিস্তানে চালান করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও)-র বিজ্ঞানী। মহারাষ্ট্রের জঙ্গি দমন শাখা বা এটিএস বুধবার ওই বিজ্ঞানীকে গ্রেফতার করেছে।
এটিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ধৃত বিজ্ঞানীর নাম প্রদীপ কুরুলকার। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে অনুমান, ‘মধুফাঁদ’-এ আটকা পড়েই প্রতিবেশী দেশে গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন তিনি।
কে এই প্রদীপ? তাঁর গ্রেফতারির পর থেকেই দেশের আনাচকানাচে ঘোরাফেরা করছে এই প্রশ্ন।
৬০ বছর বয়সি প্রদীপ পুণে ডিআরডিও-র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রদীপের জন্ম ১৯৬৩ সালে। পুণের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে খুব ভাল নম্বর পেয়ে কলেজের গণ্ডি পেরোন প্রদীপ।
১৯৮৮ সালে ডিআরডিও-তে যোগ দেন প্রদীপ। তামিলনাড়ুর আভাডিতে ডিআরডিও-র ‘কমব্যাট ভেহিক্যালস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্ট্যাবলিশমেন্ট ’ বিভাগের হয়ে তিনি কাজ করতেন।
কাজে যোগ দিয়ে আরও পড়াশোনার ইচ্ছা জন্মায় প্রদীপের। কাজ করতে করতেই আইআইটি কানপুরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে যান তিনি।
আইআইটি কানপুরে প্রদীপ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন। মিসাইল লঞ্চার, মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, অত্যাধুনিক রোবোটিক্স এবং মানবহীন ক্ষেপণাস্ত্রের নকশা তৈরিতে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে তাঁর।
পড়াশোনা শেষে প্রদীপ আবার ডিআরডিও-তে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে খুব তাড়াতাড়ি পদোন্নতি হয় তাঁর। ভারতের হয়ে বেশ কিছু প্রতিরক্ষা সামগ্রীর নকশা তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন।
প্রধান ডিজ়াইনার হিসাবে প্রদীপ হাইপারবারিক চেম্বার, মোবাইল পাওয়ার সাপ্লাইয়ের মতো প্রযুক্তিতে কাজ করেছেন।
একই সঙ্গে এমআরএসএএম, নির্ভয় সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল সিস্টেম, প্রহর, কিউআরএসএএম এবং এক্সআরএসএএম এর জন্য মিসাইল লঞ্চার তৈরির কাজেও অবদান রয়েছে প্রদীপের।
সেই প্রদীপকেই গ্রেফতার করেছে মহারাষ্ট্রের এটিএস। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছে, সমাজমাধ্যমে সুন্দরী মহিলাদের ছবি দেখিয়ে প্রদীপের সামনে ফাঁদ পাতা হয়। এর পরই নাকি তিনি গত বছর ছদ্মবেশী পাক গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
পুলিশের মতে, অভিযুক্ত প্রদীপ সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো কল এবং হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে পাক গোয়েন্দা সংস্থা ‘পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ (পিআইও)’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
প্রদীপ ডিআরডিও-র অন্যতম শীর্ষ পদে ছিলেন। তাই অনেক গোপন নথি সম্পর্কেও জানতেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রদীপ পদের অপব্যবহার করায় সংবেদনশীল সরকারি নথি পাকিস্তানের হাতে চলে যেতে পারে, যা পরবর্তী কালে ভারতের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মুম্বইয়ের কালাচৌকি এটিএস পুলিশ স্টেশনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এক এটিএস আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে।
বুধবার গ্রেফতার করার পর বৃহস্পতিবার প্রদীপকে আদালতে পেশ করা হয়। আদালত তাঁকে এটিএস হেফাজতে পাঠিয়েছে।