কথায় আছে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। লোভের পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের গুনার একটি ঘটনা। ৩ নাবালককে খুন করে দেহ পোড়ানো হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন এক মহিলা এবং তাঁর পুত্র।
২০১৭ সালের কথা। সেই বছরই মধ্যপ্রদেশের গুনা এলাকায় ৩ বন্ধুকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল এক নাবালক এবং তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে। ওই নাবালকের নাম হানি দুবে। এই ঘটনা হানি দুবে মামলা বা গুনায় তিন খুন নামেও পরিচিত। ঠিক কী ঘটেছিল?
সেই সময় সেচ দফতরে কর্মরত ছিলেন অন্তর সিংহ মীনা নামে এক ব্যক্তি। তাঁর ১৭ বছরের পুত্র হেমন্তের নিখোঁজ হওয়া ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত। পুরনো বাইক কিনবে বলে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল হেমন্ত। কিন্তু আর ফেরেনি।
হেমন্তের বন্ধু ছিল হানি। তার সঙ্গেই ওই টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল হেমন্ত। নগদ ৪০ হাজার টাকার লোভ সামলাতে পারেনি হানি। পথে হেমন্তের কাছ থেকে ওই টাকা ছিনিয়ে নেয় হানি। তার পর মদের বোতল দিয়ে তার গলার নলি কেটে খুন করে।
খুনের পর প্রমাণ লোপাট করতে হেমন্তের দেহ পুড়িয়ে জঙ্গলে ফেলে দেয় হানি। তবে এই খুনে শুধুমাত্র হানিই জড়িত ছিল না। সবটা জানতেন তার মা পুনম দুবে।
হানির আরও দুই বন্ধু ছিল। তাদের নাম লোকেশ এবং হৃত্বিক। এই ঘটনার কথা জেনে গিয়েছিল তারাও। তাদের মুখ বন্ধ করতে লোকেশ এবং হৃত্বিককে টাকার লোভ দেখিয়েছিলেন পুনম।
হেমন্তকে খুনের পর তার বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায়ের ছক কষেছিলেন পুনম এবং হানি। সেই সূত্রে হেমন্তের মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছিল হৃত্বিককে। সেই ফোন নিয়ে গুনা থেকে হৃত্বিককে ইনদওরে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই থাকতেন হেমন্তের বাবা।
সেই মতো ইনদওরে গিয়ে হেমন্তের ফোন থেকে তার বাবাকে ফোন করে ৫০ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ চায় হৃত্বিক। এতে রাজিও হয়ে যান হেমন্তের বাবা। তবে সেই সঙ্গে তিনি সরাসরি পুলিশকে বিষয়টি জানান। সেই ফোনের সূত্র ধরে অভিযানে নামে পুলিশ। তবে তার আগেই ইনদওর থেকে গুনায় ফিরে যায় হৃত্বিক।
সেই সময় মুক্তিপণের টাকার ভাগ নিয়ে হৃত্বিকের সঙ্গে লোকেশের ঝামেলা বাধে। আগাম ওই টাকা চেয়েছিল লোকেশ। সেই টাকা না দিলে সবাইকে সবটা জানিয়ে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় সে। এর পরই লোকেশকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলে যায়। সেখানে তাকে খুন করা হয়।
হেমন্ত এবং লোকেশের খুনের কথা জানত হৃত্বিক। তাই তাকেও খুন করে হানি। তাদের খুনের প্রমাণ লোপাট করতেও দেহ পোড়ানো হয়েছিল।
তবে এই তিন হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথম ফাঁস হয় ২০১৭ সালের ২৭ মে। সে দিন পটেল নগর রেললাইনে কালভার্টের কাছে একটি অর্ধেক পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। যা দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন মিন্টু নামে এক ব্যক্তি।
পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দেহটি হৃত্বিকের। তদন্তকারীরা প্রথমে ভেবেছিলেন হৃত্বিকের খুনের নেপথ্যে তার বন্ধু লোকেশের হাত রয়েছে। কিন্তু এর পরই লোকেশেরও দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এ-ও জানতে পারে যে, হেমন্তকেও খুন করা হয়েছে।
তদন্তে উঠে আসে পুনম এবং তাঁর পুত্র হানির নাম। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। খুনের কথা স্বীকার করে হানি।
এর পরই পুনমকে নিয়ে সন্দেহ বাড়ে পুলিশের। খুনের নেপথ্যে যে পুনমও রয়েছেন, তা বুঝতে পারেন তদন্তকারীরা। তাঁকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, হানির বন্ধু হেমন্তের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পুনম। হেমন্তের বাড়ি থেকে টাকা, গয়না নিতেন তিনি। এমনকি, সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে মায়ের গয়নাও পুনমকে দিয়েছিল হেমন্ত। যা পরে গয়নার দোকানে বন্ধক রেখেছিলেন পুনম। পরে সেই গয়না উদ্ধার করে পুলিশ।
হেমন্তের সঙ্গে তার মায়ের ‘বন্ধুত্ব’ একেবারেই ভাল ভাবে নেয়নি হানি। ফলে হেমন্তকে খুনের নেপথ্যে এই কারণও রয়েছে বলে মনে করেছিল পুলিশ। এই ঘটনায় হানির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সাজা হয়েছিল তার মা পুনমেরও।