সত্যিই কি রয়েছে গুপ্তধন? ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওক দ্বীপে সন্ধান চালিয়ে আসছে বিভিন্ন দল। বার বার হতাশ হয়ে ফিরেছে তারা। তবু থামেনি অভিযান। ওক গাছের জঙ্গলে কি রয়েছে সেই সাত রাজার ধন?
কানাডার লোভা স্কটিয়ায় আটলান্টিক সমুদ্রের তীরে রয়েছে ওক দ্বীপ। মনে করা হয়, এই দ্বীপের ১৪০ একর অরণ্যভূমিতেই লুকিয়ে রয়েছে গুপ্তধন। অষ্টাদশ শতকে নাকি সে সব লুকোনো হয়েছিল।
কে লুকিয়ে রেখেছিল সে সব ধনসম্পদ? এই নিয়ে কিন্তু রয়েছে রহস্য, যার সমাধান আজও পুরোপুরি মেলেনি। প্রথম যখন এই ওক দ্বীপের সন্ধান পেয়েছিল মানুষ, তখন বেশ চমকেই গিয়েছিল। কারণ গোটা দুনিয়ায় একমাত্র এখানেই ছিল লাল ওকের জঙ্গল।
পরে কালো পিপড়ের দল খুবলে খেয়ে নিয়েছিল সেই লাল ওক গাছের সারি। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল জঙ্গল। এখন সেখানে রয়েছে ঝোপঝাড়।
কথিত ওক দ্বীপ সংলগ্ন সাগর তখন জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পথে কোনও বণিকের জাহাজ দেখলেই তা ডুবিয়ে সব লুট করা হত। সপ্তদশ শতকে বণিকদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন ক্যাপ্টেন কিড নামে এক জলদস্যু।
শোনা যায়, কিড নাকি একের পর এক বাণিজ্যিক জাহাজ লুট করে অঢেল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন। সেই সম্পত্তিই তিনি মৃত্যুর আগে লুকিয়ে রেখেছিলেন ওক দ্বীপে। মনে করা হয় কিডের ধনসম্পত্তির মূল্য ছিল ২০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা এখন ২০ কোটি টাকারও বেশি।
সেই সম্পদের খোঁজেই বার বার এই দ্বীপে অভিযান চালিয়েছেন মানুষ। শতাধিক বছর আগে এই জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে ৯০ ফুট গভীরে একটি পাথরখণ্ড মিলেছিল। সেই পাথরখণ্ডে খোদাই করা ছিল অদ্ভুত এক লিপি। বিজ্ঞানীরা সেই লিপির পাঠোদ্ধার করে দেখেন, তাতে লেখা, ‘‘১০ ফুট নীচে ২০ লক্ষ মিথ্যা পুঁতে রাখা হয়েছে।’’
এর পর ক্রমেই ওক দ্বীপ নিয়ে একের পর এক অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর গল্প ছড়াতে থাকে। বলা হয়, এই গুপ্তধন খুঁজতে এসে অন্তত সাত জন মারা না গেলে উদ্ধার হবে না ধনরত্ন। এখনও পর্যন্ত নাকি এই গুপ্তধন খুঁজতে এসে মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের।
১৭৬২ থেকে ১৭৬৫ সালের মধ্যে প্রথম বার এই ওক দ্বীপের সমীক্ষা করা হয়। ১৭৭৬ সালে এই দ্বীপের মানচিত্র তৈরি করেন ব্রিটিশ কার্টোগ্রাফার জেএফডব্লিউ ডেস বারেস।
১৭৯৫ সালে নৌকা চালিয়ে এই দ্বীপে এসে পৌঁছেছিলেন ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস এবং তাঁর দুই বন্ধু। দ্বীপে ঘুরতে ঘুরতে অদ্ভুত এক জায়গার সন্ধান পান তাঁরা। দেখে মনে হয়, সেই এলাকার মাটি খনন করে কিছু রাখা হয়েছিল।
ড্যানিয়েলের মনে হয়েছিল, দ্বীপের ওই জায়গায় মাটি খুঁড়ে কেউ হয়তো ধনসম্পত্তি পুঁতে রেখেছেন। জলদস্যুরাই এই কাজ করেছিল বলে মনে হয় তাঁর। কারণ ওক দ্বীপ সংলগ্ন মাহোন উপসাগরে তখন জলদস্যুদের দাপট ছিল।
দ্বীপের ওই অংশ খনন করতে শুরু করেন ড্যানিয়েল এবং তাঁর দুই বন্ধু। খনন করে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার হয় ওক গাছের গুঁড়ি, পাথরের চাই। দীর্ঘ দিন ধরে চলেছিল সেই খননকাজ। খরচ হয়েছিল প্রচুর টাকা। যদিও নিট ফল ছিল শূন্য।
এই নিয়ে বই লিখেছেন ড’আর্সি ও’কোনর। বইয়ের নাম ‘দ্য সিক্রেট ট্রেজ়ার অফ ওক আইল্যান্ড: দ্য অ্যামাজ়িং ট্রু স্টোরি অফ আ সেঞ্চুরি ওল্ড ট্রেজ়ার হান্ট’। তিনিই ড্যানিয়েলদের অভিযানের কথা নিজের বইয়ে লিখেছিলেন।
ড্যানিয়েলরা ওই দ্বীপে জমিও কিনে ফেলেন। তার পরেও বহু বছর চালিয়েছিলেন খননকাজ। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। ড্যানিয়েলের মতো ওক দ্বীপে জমি কেনেন স্যামুয়েল বেল নামে এক ব্যক্তি।
এককালে দাস ছিলেন স্যামুয়েল। কোনও ভাবে টাকা জুটিয়ে উনিশ শতকের শুরুতে ওক দ্বীপে জমি কেনার পর ক্রমে ধনী হতে থাকেন। মনে করা হয়, তিনি নাকি গুপ্তধনের হদিস পেয়েছিলেন। তবে সেই হদিস কাউকে দিয়ে যাননি।
এর পর দুশো বছর ধরে ওক দ্বীপে গুপ্তধনের সন্ধান চলে। সময় যত এগোতে থাকে, ততই আরও উন্নততর প্রক্রিয়ায় চলে খননকার্য। বিংশ শতকের শুরুতে বুলডোজ়ার দিয়ে খনন করা হয় মাটি।
যদিও উন্নত প্রযুক্তি, অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও বেশির ভাগ অভিযানকারী গুপ্তধনের সন্ধান থামিয়ে দেন। কারণ বন্যা। এই দ্বীপের মাটি চুনাপাথর দিয়ে তৈরি। সে কারণে বৃষ্টি পড়লেই ভূমিধস হত। ফলে বন্যা লেগেই থাকত।
যদিও তাতে গুপ্তধনের অনুসন্ধান থামেনি। ধীরে ধীরে বহু সংস্থা বিনিয়োগ করেন এই খননকাজে। শোনা যায়, তরুণ বয়সে আমেরিকার ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টও খননকারী একটি সংস্থার শেয়ার কিনেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই দ্বীপে ধনসম্পদের হদিস মেলেনি। তবে সম্পদ খোঁজার চেষ্টা এখনও চলছে।