বিশ্ব জুড়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠান করবে কোল্ডপ্লে ব্যান্ড। আগামী বছরের প্রথম মাসে অনুষ্ঠান করার কথা ভারতেও। কিন্তু তারিখ ঘোষণার পর ওয়েবসাইটে অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় জমে যায় সঙ্গীত অনুরাগীদের। হাজারের গণ্ডি থেকে শুরু হয়ে টিকিটের দাম পেরিয়ে যায় লাখের সীমারেখাও।
২০২৫ সালের ১৮ এবং ১৯ জানুয়ারি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করার কথা কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের সদস্যদের। কিন্তু অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের কথা ঘোষণা করার মুহূর্তের মধ্যেই ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করে যায়। ২০ মিনিট পর সমস্যার সমাধান হলে দেখা যায়, দু’দিনের সমস্ত টিকিট বুক হয়ে গিয়েছে।
সঙ্গীত অনুরাগীদের হতাশ করতে চায়নি কোল্ডপ্লে। তাই শুধু দু’দিন নয়, সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য যে আরও এক দিন ব্যান্ডের সদস্যেরা মুম্বইয়ের স্টেডিয়ামে পারফর্ম করবেন তা জানানো হয়। তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে থাকবেন এক বিশেষ অতিথিও। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ব্যান্ডের তরফে এমনটাই জানানো হয়।
প্রায় ন’বছর পর আবার ভারতে অনুষ্ঠান করছে কোল্ডপ্লে। ২০১৬ সালে মুম্বইয়েই সঙ্গীত পরিবেশন করতে এসেছিলেন ব্যান্ডের সদস্যেরা।
জানা গিয়েছে, এ বার টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য আড়াই হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওয়েবসাইটে টিকিট বিক্রি হয়েছে।
কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের অনুষ্ঠানের শোয়ের টিকিট বিক্রি নিয়ে উঠেছে কালোবাজারির অভিযোগও। অভিযোগ, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মূল্যের টিকিটগুলি ৩ থেকে ৭ লক্ষ টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে অনলাইনে।
তিনটি শো থাকা সত্ত্বেও কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের বহু অনুরাগী টিকিট কিনতে পারেননি বলে সমাজমাধ্যমে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রির অনুমোদন শুধুমাত্র একটি সংস্থার কাছেই ছিল। কিন্তু সেই সংস্থায় টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর অন্য এক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নাকি চড়া দামে বিক্রি করা হয়েছে অনুষ্ঠানের টিকিট। অভিযোগ, অনুমোদিত সংস্থা থেকে কেনা টিকিটই নাকি অবৈধ ভাবে অন্য প্ল্যাটফর্মে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভায়াগোগোতে ১৮ জানুয়ারির শোয়ের টিকিট ৩৮ হাজার থেকে তিন লক্ষ টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। কোল্ডপ্লের শোয়ে ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের ‘লাউঞ্জ’ বিভাগের টিকিটের দাম ‘বুক মাই শো’য়ে ধার্য করা হয়েছিল ৩৫ হাজার। সেই একই টিকিট ভায়াগোগোতে তিন লক্ষ থেকে সাত লক্ষ টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। অবশ্য সংস্থার তরফে বিবৃতি জারি করে এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে।
আধুনিক রক সঙ্গীতের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম কোল্ডপ্লে। নব্বইয়ের দশকে ব্যান্ডটি গঠিত হয়। লন্ডন শহরে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ব্যান্ডের সদস্যেরা লন্ডনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন।
কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ক্রিস মার্টিন। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্রিসের সঙ্গে আলাপ হয় জনি বাকল্যান্ডের। গিটার বাজান জনি। গোড়ার দিকে ক্রিস এবং জনি মিলে গান লিখতে শুরু করেন।
ক্রিস এবং জনি প্রতি রাতে নতুন গান লিখে তাতে সুর দিয়ে চর্চা করতেন। পরে তাঁদের সঙ্গে ব্যান্ডের তৃতীয় সদস্য হিসাবে যোগ দেন গায় বেরিম্যান।
কণ্ঠশিল্পী এবং গিটারবাদক থাকলেও কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের তিন সদস্যের মধ্যে ড্রামবাদক ছিলেন না। ১৯৯৮ সালে তাঁদের ব্যান্ডে ড্রামবাদক হিসাবে যুক্ত হন উইল চ্যাম্পিয়ন।
১৯৯৮ সালের ১৬ জানুয়ারি লন্ডনের কামডেন শহরে প্রথম পারফর্ম করেন ব্যান্ডের চার সদস্য। তবে তাঁদের ব্যান্ডের কোনও নির্দিষ্ট নাম ছিল না। ‘স্টারফিশ’ নামে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁরা। কয়েক সপ্তাহ পর তাঁরা নিজেদের ব্যান্ডের নাম কোল্ডপ্লে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
২০০০ সালে ‘প্যারাশুট্স’ অ্যালবাম মুক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে কোল্ডপ্লে। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে দু’দশক। ব্যান্ডের সাফল্যের পালক হিসাবে জুটেছে গ্র্যামির মতো পুরস্কারও। প্রথম সারির ব্রিটিশ রক ব্যান্ডের আগামী অনুষ্ঠানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সঙ্গীতপ্রেমীরা।