খেতে কে না ভালবাসেন? দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় খাবার চেখে দেখার মজাই আলাদা। যদি কখনও সুযোগ পান বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো রেস্তরাঁয় গিয়ে খাবারের স্বাদ নিতে তবে সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন ক’জন? পুরনো রেস্তরাঁগুলি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের অন্দরসজ্জাও তাকলাগানো। সেই সব রেস্তরাঁর ঠিকানা জানেন কি?
১৭২৫ সালে দরজা খুলেছিল স্পেনের মাদ্রিদের সোবরিনো দে বোটিন রেস্তরাঁ। ৩০০ বছর ধরে চালু এই রেস্তরাঁয় এক দিনের জন্যও রান্নাঘর বন্ধ থাকেনি। বিশ্বের পুরনো রেস্তরাঁ হিসাবে নজির গড়ে গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলেছে স্পেনের এই রেস্তরাঁ। চার তলার এই রেস্তরাঁয় ব্রিক ওভেনে তৈরি করা হয় ‘সাকলিং পিগ’। এই খাবারটির জন্যও বিখ্যাত সোবরিনো দে বোটিন।
জার্মানির রেগেন্সবার্গের ওয়ার্স্টকুচ রেস্তরাঁর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। এই রেস্তরাঁ বর্তমানে তাদের সসেজ কেকের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও বিভিন্ন সময়ে এই রেস্তরাঁকে বিভিন্ন ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মানির স্টোন ব্রিজের কাছে রয়েছে এই রেস্তরাঁ। ১১৩৫ সাল থেকে ১১৪৬ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সেতু নির্মাণের সময় এই রেস্তরাঁকে দফতর হিসাবে ব্যবহার করা হত। তার পর এলাকার বন্দর এবং খনির কর্মীদের জন্য রান্না করা হত সেখানে। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কিচেন অন দ্য ক্রেন’। এখনও রেস্তরাঁটি খোলা রয়েছে।
জাপানের খাবারের তালিকায় চোখ বোলালে সোবা নুডল্সের নাম সবার প্রথমে লক্ষ করা যায়। জাপানের কিয়োটোয় হঙ্কে ওয়ারিয়া নামে একটি পুরনো রেস্তরাঁ রয়েছে যা সোবা নুডল্স বিক্রির জন্য বিখ্যাত। ১৪৬৫ সালে খাবারের ছোট দোকান হিসাবে খুলেছিল হঙ্কে ওয়ারিয়া। তার পর ১৭০০ সাল পর্যন্ত এই রেস্তরাঁ থেকে মন্দিরে বাকউইট নুডল্স তৈরি করে পাঠানো হত। আজও নিচু টেবিল এবং মাদুরের আসনে বসে অতিথিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে এই রেস্তরাঁয়।
চিনের কাইফেং এলাকায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম পুরনো রেস্তরাঁ মা ইউ চিং’স বাকেট চিকেন হাউস। ১১৫৩ সালে এই রেস্তরাঁটি খোলা হয়। বহু যুদ্ধের সাক্ষী থেকেছে এই রেস্তরাঁ। বহু বার স্থানবদলও হয়েছে। ১৮৬৪ সাল থেকে কাইফেং এলাকায় স্থায়ী ভাবে গড়ে তোলা হয় রেস্তরাঁটি। তবে এখানে বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেই। বিশেষ এক ধরনের সস বিক্রির জন্য এই রেস্তরাঁ বিখ্যাত।
ইউরোপের লিয়েকটেনস্টেইনে ভাডুজ় এলাকায় রয়েছে হোটেল গাস্তফ লায়ন রেস্তরাঁটি। ১৩৮০ সালে এই রেস্তরাঁটি খোলা হয়। ৬০০ বছরের ইতিহাস সাক্ষী বয়ে চলা এই রেস্তরাঁয় বহু খ্যাতনামী খেতে গিয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার সাল্জ়বার্গে রয়েছে সেইন্ট পিটার স্টিফট্সকুলিনারিয়াম রেস্তরাঁ। বিশ্বের পুরনো রেস্তরাঁগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই রেস্তরাঁয় থাকার জায়গাও রয়েছে। ৮০৩ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠা এই রেস্তরাঁয় রয়েছে ১১টি ঘর। একসঙ্গে ১০০ জনের বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
জার্মানের সন্ন্যাসীরা ১৪২১ সালে সুইডেনের স্টকহোমে জুম ফ্রানজিসকানের রেস্তরাঁটি খোলেন। প্রতিষ্ঠার পর এই রেস্তরাঁটি বহু বার নতুন রূপে সাজানো হয়। ১৯০৬ সালে পুনর্নির্মাণের পর আর নতুন করে রেস্তরাঁর সজ্জার কাজে হাত দেওয়া হয়নি।
বিশ্বের অন্যতম পুরনো ক্যাফে রয়েছে টিউনিশিয়ায়। ১৬২৮ সালে জায়টুনা মসজিদের কাছে তৈরি করা হয় এল এম রাবেত ক্যাফেটি। ক্যাফের বাইরে একটি সুন্দর বাগানও রয়েছে। সন্ধ্যায় এখানে গানের অনুষ্ঠান হয়।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে দ্য ব্র্যাজ়েন হেড নামে একটি পাব রয়েছে যা ১১৯৮ সালে এটি তৈরি হয়। যদিও পুরনো তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, গোড়ার দিকে এটি ছাত্রাবাস হিসাবে ব্যবহৃত হত। ১৬৫৩ সালে এখানে সুরা বিক্রি শুরু হয়। জোনাথন সুইফ্ট, জেমস জয়েসের মতো লেখকেরা এই পাবে মাঝেমধ্যেই সময় কাটাতে যেতেন।
আমেরিকার নিউপোর্টে রয়েছে দ্য হোয়াইট হর্স ট্যাভার্ন। ১৬৭৩ সালে তৈরি হয় এই রেস্তরাঁ। বিশ্বসেরা সুরা থেকে শুরু করে উন্নত মানের মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার এখানে পাওয়া যায়।
১৪১৬ সাল থেকে পেকিং ডাক বানানোর জন্য পরিচিতি তৈরি করেছে চিনের বেজিংয়ের বিয়ানিফাঙ্গ। শোনা যায়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশও নাকি এই রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন।
১৫৮২ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে দরজা খোলে লা ট্যুর দি আর্জেন্ট রেস্তরাঁটি। শোনা যায়, ষোড়শ শতকে ফ্রান্সে প্রথম কাঁটা চামচের ব্যবহার শুরু হয়। সেই সময় থেকেই এই রেস্তরাঁয় অতিথিদের খাওয়ার জন্য কাঁটা চামচ দেওয়া শুরু হয়।
১৭৬২ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে খোলা হয় ফ্রন্সেস ট্যাভার্ন। এই রেস্তরাঁর সঙ্গে রয়েছে একটি সংগ্রহালয়ও। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন যেখানে তাঁর আধিকারিকদের বিদায় জানিয়েছিলেন এই রেস্তরাঁয় গেলে সেই জায়গাটিও দেখা যায়।
ব্রিটেনের এডিনবরায় রয়েছে দ্য শিপ হেইড ইন রেস্তরাঁটি। ১৩৬০ সালে এই রেস্তরাঁটি খোলা হয়।
ইউরোপের পোল্যান্ডে ১২৭৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল পিনিকা সিডনিকা রেস্তরাঁটি। রোক্ল এলাকার মেন মার্কেট স্কোয়ারের কাছে এই রেস্তরাঁ রয়েছে। বিয়ার এবং স্থানীয় খাবারের জন্য এই জায়গাটি জনপ্রিয়।
কলম্বিয়ার বোগোটায় ১৮১৬ সালে খোলা হয় লা পুয়ের্তা ফলসা। যদিও শুরুর দিকে এই রেস্তরাঁর কোনও নাম ছিল না। দেওয়ালের মধ্যে একটি গর্ত তৈরি করে সেখান দিয়ে ক্ষুধার্তদের খাবার দেওয়া হত। বর্তমানে এই রেস্তরাঁয় ২০ জন একসঙ্গে বসে খেতে পারেন।
তুর্কির আফইয়নকারাহিসার এলাকায় আসকি বাকাসিজ় নামে একটি রেস্তরাঁ রয়েছে। ১৮৪০ সালে নির্মিত এই রেস্তরাঁ ল্যাম্ব কাবাব তৈরির জন্য বিখ্যাত।
আমেরিকার বস্টনে রয়েছে ইউনিয়ন ওয়েস্টার হাউস। ১৮২৬ সালে এটি তৈরি হয়।
ফ্রান্সের রুয়েন এলাকায় রয়েছে লা কোরোন নামের রেস্তরাঁ। ১৩৪৫ সালে তৈরি করা হয় এই রেস্তরাঁটি। বর্তমানে ছ’টি ডাইনিং রুমবিশিষ্ট এই রেস্তরাঁয় একশো জন অতিথি একসঙ্গে বসে খেতে পারেন।