গাজ়ার হাসপাতালে কারা হামলা চালাল? হামাস বলছে, ইজ়রায়েল এই হামলার জন্য দায়ী। ইজ়রায়েলের দাবি, এই হামলা তারা করেনি। হামলা চালিয়েছে হামাসই। সঙ্গে আরও একটি জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধেও এই হামলার অভিযোগ তুলেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ।
হামাস ছাড়া এই হামলার জন্য যে জঙ্গি সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ইজ়রায়েল সেটির নাম প্যালেস্তিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)। ১৭ সেপ্টেম্বর গাজ়ার অহলি অরব হাসপাতালে রকেট হামলা চালানো হয়েছিল। যে হামলায় ৫০০ জন নিহত হয়েছেন। কিন্তু কারা এই হামলা চালাল, তা নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপের পালা এখনও চলছে।
হামাসের দাবি, গাজ়ার হাসপাতালে হামলার জন্য ইজ়রায়েল ‘স্মার্ট বম্ব’ ব্যবহার করেছে। যদিও সেই দাবিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়ে ইজ়রায়েল পাল্টা দাবি করেছে, হামাসের ছোড়া রকেটই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালে পড়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে এর আগে সাদা ফরফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে হামাস। এ বার ‘স্মার্ট বম্ব’ ব্যবহারের অভিযোগ তুলল। কী এই ‘স্মার্ট বম্ব’? কতটা শক্তিশালী এই বোমা?
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর আমেরিকার সংস্থা বোয়িং ইজ়রায়েলকে এক হাজার ‘স্মার্ট বম্ব’ সরবরাহ করেছে। এ ছাড়াও ইজ়রায়েলের কাছে নিজেদের তৈরি ‘স্পাইস বম্ব’ও রয়েছ। এই ‘স্পাইস বম্ব’ও স্মার্ট বম্ব গোত্রের মধ্যেই।
স্মার্ট বম্বকে ‘গাইডেড বম্ব’ও বলা হয়। এই বোমা নিখুঁত ভাবে লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারে। বিমান থেকে এই বোমা ফেলা হয়। এই বোমার বিশেষত্ব হল, শুধুমাত্র লক্ষ্যবস্তুকেই ধ্বংস করবে এটি। আর এমন ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে যাতে আশপাশের এলাকার কোনও ক্ষতি না হয়।
বিপুল মাত্রায় এই বোমা তৈরি করে আমেরিকা। রেথিয়ান টেকনোলজিস কর্পোরেশন এবং বোয়িং ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স সিস্টেমস নামে দু’টি সংস্থা এই বোমা বানায়।
স্মার্ট বম্বের আর এক নাম ‘প্রিসিসন গাইডেড মিউনিশন’। কিছু বোমায় ছোট রকেট মোটর লাগানো হয়। এই রকেট মোটর শুধু বোমার রেঞ্জই বৃদ্ধি করে না, তার সঙ্গে বোমার ফ্লাইট কন্ট্রোল বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
৯০৭ কেজির এই বোমায় নানা ধরনের মারণাস্ত্র লাগানো হয় যাতে অভিঘাতের প্রভাব আরও বেশি হয়। বিভিন্ন মারণাস্ত্র লাগনোর পর সেই বামাকে ‘জয়েন্ট ডায়রেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন সিস্টেম’ বলা হয়। এই ধরনের স্মার্ট বম্ব আমেরিকার হাইটেক বম্বার বি-৫২ এবং বি-১ ল্যান্সরের মাধ্যমে ফেলা হয়।
মিলিটারি অ্যানালিসিস নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, একটি স্মার্ট বম্বের তিনটি অংশ থাকে। সেগুলি হল, ওয়েপন— এটি এক ধরনের বিস্ফোরক। টার্গেটিং সিস্টেম—এই অংশটি নেভিগেশনে সহায়তা করে। আর তৃতীয়টি হল অ্যান্টি জ্যামিং ডিভাইস— শত্রুপক্ষকে গাইডেন্স সিগন্যালে বাধা দেয়।
এই তিনটি অংশ ছাড়াও স্মার্ট বম্বে রয়েছে রেডিয়ো কমান্ড গাইডেন্স। টেলিভিশন গাইডেন্স। ইনফ্রারেড হোমিং গাইডেন্স। লেজ়ার গাইডেন্স এবং জিপিএস রিসিভার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বোমার প্রথম ব্যবহার করেছিল আমেরিকা। পশ্চিম ইউরোপ এবং তৎকালীন বর্মায় (বর্তমান মায়ানমার) সেনা অভিযান চালাতে ১৯৪৪ সালে আমেরিকার বায়ুসেনা ভিবি-১ অ্যাজ়ন স্মার্ট বোমা ব্যবহার করে।
এক একটি বোমার ওজন ছিল ৪৫০ কেজি। জায়রোস্কোপিক অটোপাইলটের সঙ্গে এই বোমা জুড়ে দেওয়া হয় যাতে লক্ষ্যবস্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয় এবং নিখুঁত ভাবে তাতে হামলা করতে পারে। উচ্চতা, হাওয়ার গতিবেগ এবং বাতাসের চাপ— সব দিক লক্ষ রেখে এই বোমা ফেলা হয়।
স্মার্ট বম্বে ‘সাইট’ নামে যন্ত্র লাগানো হত সেই সময়। ফলে ওই যন্ত্রের সাহায্যেই নিশানায় নিখুঁত ভাবে আঘাত হানতে পারত এই বোমা। রাতে এই বোমা ফেলার পর তা চিহ্নিত করতে বোমার উপর আলো লাগানো হত। সেই আলো চিহ্নিত করেই অপারেটর বোমার দিশা এবং গতি চিহ্নিত করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভিবি-১ অ্যাজ়ন বোমা ব্যবহার বন্ধ করে আমেরিকা। তার জায়গায় নিয়ে আনা হয় র্যাজ়ন স্মার্ট বম্ব।
স্মার্ট বম্ব ছাড়াও স্পাইস বম্বের ব্যবহার করছে বলে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। এই বোমা তৈরি করে রাফেল অ্যাডভান্স ডিফেন্স সিস্টেমস লিমিটে়ড। ৯০৭ কেজির এই বোমা ফেলার জন্য মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়। স্পাইস-২০০০ বোমার রেঞ্জ ৬০ কিলোমিটার।