আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে সোনার দাম। কলকাতায় সম্প্রতি ৬২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে ১০ গ্রাম সোনার দাম। এর আগে শহরে কখনও পাকা সোনা এত মহার্ঘ হওয়ার নজির নেই।
শনিবার এক ধাক্কায় পাকা সোনার (১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট) দাম বেড়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। কলকাতায় এই মূহূর্তে সোনার দাম ৬০ হাজার ৪৫০ টাকা। জিএসটি প্রযুক্ত হওয়ার পর সেই দাম পৌঁছেছে ৬২ হাজারে।
পাশাপাশি, গয়না সোনার (১০ গ্রাম ২২ ক্যারাট) দামও ক্রমাগত মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কলকাতায় গয়না সোনা বিকোচ্ছে ৫৭ হাজার ৩৫০ টাকায়।
সোনার লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির জেরে ব্যবসায় মন্দার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ‘সাধ্যাতীত’ সোনা আর সে ভাবে ছুঁয়েও দেখতে পারছেন না মধ্যবিত্ত ক্রেতা। বড় বা মাঝারি দোকানে কিছুটা বিকিকিনি হলেও মাথায় হাত ছোট দোকানিদের।
পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কলকাতায় সোনার দামে যে বৃদ্ধি হয়েছে, তা নজিরবিহীন। এক ধাক্কায় ১২ হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে হলুদ ধাতুর দাম।
২০২১ সালের শেষ দিন, কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৪৮ হাজার ৬০০ টাকা। তার পর থেকে মৃদুমন্দ গতিতে এই দাম বেড়েছে।
দেখা যায়, এক বছরের মধ্যে সোনার দাম প্রায় ৭ হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছিল। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় ওই দিন ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৫৫ হাজার ৭৫০ টাকা।
এর পরেই সোনার দামের আগুনে যেন কেউ ঘি ঢেলে দিয়েছেন। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই আরও ৫ হাজার টাকা চড়েছে দামের পারদ। সোনার ব্যবসায় যা চিন্তা বাড়িয়েছে।
২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি কলকাতায় পাকা সোনার দাম ছিল ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা। তার ঠিক ১০ দিন পর আরও মহার্ঘ হয় হলুদ ধাতু। জানুয়ারির ১৩ তারিখ সোনার দাম পৌঁছে যায় ৫৭ হাজারে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৫৮ হাজার টাকা। তার পর ২ ফেব্রুয়ারি দাম পৌঁছে যায় ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায়।
মূল্যবৃদ্ধির জেরে শনিবার ১৮ মার্চ সোনার দাম এসে পৌঁছেছে ৬০ হাজার ৪৫০ টাকায়। জিএসটি যোগ করে ১০ গ্রাম পাকা সোনার মোট দাম দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ২৬৩ টাকা ৫০ পয়সায়।
বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্ব অর্থনীতি সমস্যায় পড়লেই সুরক্ষিত লগ্নি হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে গিয়ে এই ধাতুর দামকে ঠেলে তোলে। কোভিডের সময় থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, নানা সময় দাম নজির গড়েছে এই কারণেই।
আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক ও সিগনেচার ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হওয়া এবং ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাঙ্কের আর্থিক সমস্যা গোটা বিশ্বকে ব্যাঙ্কিং শিল্পের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় ফেলেছে। ফলে নড়বড়ে হয়েছে শেয়ার বাজার। সুরক্ষিত লগ্নির খোঁজে বিশ্ববাজারে দ্রুত বেড়েছে সোনার চাহিদা। বিদেশে সোনার দাম আউন্স পিছু ২০০০ ডলারের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়লে ভারতেও তার প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগামী ২১ মার্চ তাদের ঋণনীতি বৈঠকে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ করতে পারে। তা না করলে বিশ্বের বাজারে আরও দামি হতে পারে হলুদ ধাতু। ভারতেও এর দাম আরও বাড়তে পারে।
সোনার দাম কমার কোনও সম্ভাবনা আপাতত দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা। ভবিষ্যতে আরও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় কেউ কেউ সোনা কিনতে ছুটছেন বটে। তবে সেই ক্রেতার সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। ফলে সোনার ব্যবসায়ীদের মাছি তাড়াতে হচ্ছে। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশার দিকেও ঝুঁকছেন।