বাচ্চাদের বিভিন্ন মোবাইল গেম খেলা নিয়ে বাবা-মা’দের উদ্বেগ থাকলেও এগুলি মোটেও বিশ্বের সব থেকে মারাত্মক খেলনা নয়। এমন এক খেলনাও পৃথিবীর বুকে ছিল, যা ‘সব থেকে বিপজ্জনক খেলনা’র তকমা পেয়েছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলনা তা হলে কী? ‘গিলবার্ট ইউ-২৩৮ অ্যাটমিক এনার্জি ল্যাব কিট’-ই বিশ্বের সব থেকে বিপজ্জনক খেলনা বলে কুখ্যাত হয়েছিল।
কিন্তু কেন এত বিপজ্জনক ছিল এই খেলনা? ‘গিলবার্ট ইউ-২৩৮ অ্যাটমিক এনার্জি ল্যাব কিট’ এমন এক খেলনা ছিল, যা থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটত।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটাতে পারে এমন তিনটি উৎস ছিল গিলবার্ট ইউ-২৩৮ অ্যাটমিক এনার্জি ল্যাব কিট-এ। এ ছাড়াও এই খেলনার বাক্সে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের চারটি আকরিকও থাকত।
১৯৫০ সালে এই খেলনা প্রথম বাজারে আসে। এই খেলনা বা ল্যাব কিটের সঙ্গে এটি ব্যবহারের একটি নির্দেশিকাও দেওয়া হত, যাতে লেখা ছিল এই ল্যাব কিট কী ভাবে ব্যবহার করা উচিত।
ইউরেনিয়াম থেকে সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কেও এই নির্দেশিকায় সাবধান করা হয়েছিল। এই খেলনা নিয়ে একাধিক বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও বাবা-মায়েরা সেই সময়ে এই খেলনা বাচ্চাদের কিনে দিতে পিছপা হননি।
নির্মাণ সংস্থার দাবি ছিল, এই ল্যাব কিট এবং এতে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম শিশুদের পরমাণু-বিজ্ঞানের জগৎ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সাহায্য করবে।
শিকাগো মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র এক আধিকারিক ভাউলা সারিডাকিস এই বিরল খেলনার চমকপ্রদ ইতিহাস ব্যাখ্যা করেছেন৷
তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে এই খেলনার নির্মাতারা দাবি করেছিলেন, এই খেলনা থেকে শিশুদের ক্ষতি হওয়ার বিশেষ কোনও সম্ভাবনা নেই।
তবে বিশেষজ্ঞেরা পরে এই খেলনা থেকে সম্ভাব্য তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সম্পর্কে সাবধান করেন।
লাল রঙের এই ল্যাব কিটের বাক্সটি খুললেই দেখা যেত এর বিভিন্ন সরঞ্জাম। বিকিরণের মাত্রা বোঝার জন্য দু’টি অণুবীক্ষণ যন্ত্রও গিলবার্ট ইউ-২৩৮ অ্যাটমিক এনার্জি ল্যাব কিটের সঙ্গে দেওয়া হত।
তেজস্ক্রিয় বিটা, আলফা এবং গামা বিকিরণের জন্য একটি কাচের গোলক ছিল এই ল্যাব কিটে। তবে এই গোলকের ভিতরে হাত না দেওয়ার ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল নির্দেশিকায়।
ছোটখাটো প্রায় দেড়শো বিভিন্ন পরীক্ষায় শক্তি জোগান দেওয়ার ক্ষমতা এই ল্যাব কিটের ছিল।
সেই সময়ে বেশ কিছু জায়গায় দাবি করা হয়েছিল, এই খেলনার বিকিরণের ফলে বাড়ির শিশুদের পাশাপাশি পোষ্যদেরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল।
১৯৫০ থেকে ১৯৫২, মাত্র দু’বছরের জন্য এই খেলনা বাজারে পাওয়া যেত। এর পর ধীরে ধীরে এই খেলনা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কারণে নয়, বরং অত্যাধিক দামের কারণেই বাজার থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় এই খেলনা।
সেই সময়ে এই খেলনার দাম ছিল ৫০ ডলার, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫২০ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার টাকা। মূলত ধনী পরিবারের বাচ্চারাই এই খেলনা ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল। এর পর চাহিদা কমে যায় এই বিপজ্জনক খেলনার।