বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় এক ধাক্কায় অনেকটা নেমে গেলেন গৌতম আদানি। নামতে নামতে একেবারে প্রথম দশের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন ভারতীয় ধনকুবের।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, আদানি ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় বর্তমানে রয়েছেন ১১ নম্বর স্থানে। গত কয়েক দিনে তাঁর সংস্থা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগেও ধনীতমদের তালিকায় আদানি ছিলেন ‘থার্ড বয়’। ক্রমে প্রথম স্থান দখলের দৌড়ে এগোচ্ছিলেন শিল্পপতি। কিন্তু সেই তৃতীয় স্থান এখন অতীত।
আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর প্রকাশিত রিপোর্টের পর থেকেই বিপর্যয়ের মুখে আদানি গোষ্ঠী। তাঁদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
গত বুধবার হিন্ডেনবার্গ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কৃত্রিম ভাবে আদানি গোষ্ঠী শেয়ার বাজারে নিজেদের দর বাড়িয়েছে। কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছে তারা।
আদানিদের বিরুদ্ধে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। হু হু করে কমে গিয়েছে শেয়ারের দাম। এলআইসি, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মতো সংস্থা আদানিদের সঙ্গে যুক্ত। ফলে শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষও উদ্বেগে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে প্রকাশিত যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আদানিরা। তাঁরা ওই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। জবাবে ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী।
তবে শেয়ার বাজারে আদানিদের অবস্থার উন্নতি হয়নি ৪১৩ পৃষ্ঠার ওই জবাবের পরেও। গত কয়েক দিন ধরে টানা ক্ষতির মুখে পড়েছেন গৌতম আদানি। তাঁর বিপুল সম্পত্তিহানি হয়েছে।
শুধু সোমবারেই ১ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার খুইয়েছেন আদানি। সব মিলিয়ে শেষ তিনটি বাণিজ্যিক পর্বে (ট্রেডিং সেশন) তাঁরা হারালেন ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার মূলধন।
বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, আদানির ঠিক পরে দ্বাদশ স্থানে রয়েছেন ভারতের আর এক ধনকুবের মুকেশ অম্বানী। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৬ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা।
অন্য দিকে, গত কয়েক দিনের বিপর্যয়ের পর আদানির সম্পত্তির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাঁর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন অম্বানী।
ব্লুমবার্গের পরিসংখ্যান বলছে এই মুহূর্তে বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ফরাসি শিল্পপতি বার্নার্ড আর্নল্ট। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
ধনীতমদের তালিকায় তাঁর পরেই রয়েছেন টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ লক্ষ কোটি টাকা।
তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে জেফ বেজোস এবং বিল গেট্স। তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ১০ লক্ষ কোটি টাকা এবং ৯ লক্ষ কোটি টাকা।
৮ লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ওয়ারেন বাফে। ষষ্ঠ এবং সপ্তম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে ল্যারি এলিসন এবং ল্যারি পেজ। তাঁদের সম্পদের পরিমাণ যথাক্রমে ৮ লক্ষ ১২ হাজার কোটি এবং ৭ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় অষ্টম থেকে দশম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে স্টিভ বালমের (৭ লক্ষ ৯ হাজার কোটি টাকা), সারগে ব্রিন (৭ লক্ষ ৫ হাজার কোটি) এবং কার্লস স্লিম (৬ লক্ষ ৯৯ হাজার কোটি)।
এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি এখনও আদানি। তবে শেয়ার বাজারে পতনের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে সেই তকমা হারাতে পারেন তিনি।