ছিলেন গ্যাংস্টার। পা রেখেছিলেন রাজনীতিতেও। নির্বাচিত হন সংসদে। আর এ সবের পাশাপাশি ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে তাঁর সাম্রাজ্য। গত সপ্তাহে শনিবার পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আতিক আহমেদ। তাঁর মৃত্যুর পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, আতিকের যে বিরাট আর্থিক সাম্রাজ্য ছিল, তার কী হবে? আদৌ কি সেই অর্থভান্ডারের হদিস মিলবে?
গত ১৩ এপ্রিল ঝাঁসির বারবনীতে পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হয়েছেন আতিকের কনিষ্ঠ পুত্র আসাদ। তার ঠিক ২ দিনের মাথায়, ১৫ এপ্রিল পুলিশের সামনেই আতিক এবং তাঁর ভাই আশরফকে প্রয়াগরাজের একটি হাসপাতালের বাইরে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় আততায়ীরা।
আতিকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন তাঁর ভাই আশরফ। মৃত্যু হয়েছে তাঁরও। ফলে আতিকের সম্পত্তির হদিস কী ভাবে মিলবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তদন্তকারীরা। আতিককে যাঁরা আর্থিক সাহায্য করেছিলেন, তাঁদেরই বা কী ভাবে পর্দাফাঁস হবে, এই নিয়েই এখন সংশয়ে তদন্তকারীরা।
অপহরণ, খুন, খুনের চেষ্টা-সহ ১০০টিরও বেশি অপরাধের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন আতিক। অপরাধের পাশাপাশি আতিকের আর্থিক সম্পত্তির বহরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আতিকের সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকার দাবি করেছে যে, আতিকের ১১৬৯ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রে খবর, এর মধ্যে আতিকের ৭৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি ৪১৭ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তবে অনেকেরই ধারণা, এই পরিমাণ সম্পত্তি আতিকের সাম্রাজ্যের একটা অংশ মাত্র। তদন্তকারীদের ধারণা, আতিকের আরও সম্পত্তি রয়েছে। তবে তার হদিস কী ভাবে মিলবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
সূত্রের খবর, দিল্লি, মুম্বই, প্রয়াগরাজ, লখনউ, কানপুরের মতো বিভিন্ন শহরে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ করেছে আতিকের পরিবার।
এখানেই শেষ নয়। পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আতিক বিনিয়োগ করে থাকতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
তবে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় আতিক উল্লেখ করেছিলেন যে, স্থাবর, অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ২৫ কোটি টাকা।
আতিকের আর্থিক সাম্রাজ্য বিস্তারের উৎস কী? তার তদন্ত শুরু করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গত এপ্রিল মাসে প্রয়াগরাজ-সহ একাধিক এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই তল্লাশি অভিযানের সময়ই আতিকের ১১৬৯ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
আতিকের মৃত্যুর পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, যে আর্থিক তদন্ত শুরু হয়েছিল, তার কী হবে? এর পর আতিক সংক্রান্ত তথ্য মিলবেই বা কী করে?
আতিকের ভাইয়ের মৃত্যুর পর এক জন নজরে রয়েছেন তদন্তকারীদের। তিনি আতিকের স্ত্রী শায়িস্তা পারভিন। বহু বছর ধরে আতিকের কার্যকলাপ সম্পর্কে সবটাই জানেন তিনি। উমেশ পাল হত্যায় শায়িস্তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ।
আতিকের মৃত্যুর পর এখন শায়িস্তাকে ধরতে মরিয়া তদন্তকারীরা। উত্তরপ্রদেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন আতিক-জায়া শায়িস্তা। তাঁর সম্পর্কে যে কোনও তথ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সে রাজ্যের পুলিশ।
তদন্তকারীদের ধারণা, শায়িস্তাকে ধরতে পারলেই আতিকের আর্থিক সাম্রাজ্যের তদন্তের অগ্রগতি সম্ভব হবে।