দেশের বড় থেকে ছোট, প্রায় প্রত্যেকটি শহর, জনপদে অন্তত একটি করে তাঁর বিপণি থাকেই। আর এই সংস্থার কথা বললে যোগগুরু রামদেবের কথাই মনে পড়ে। যদিও অনেকেরই অজানা যে, এই পতঞ্জলির সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন আরও এক জন। তিনি আচার্য বালকৃষ্ণ।দেশের বড় থেকে ছোট, প্রায় প্রত্যেকটি শহর, জনপদে অন্তত একটি করে তাঁর বিপণি থাকেই। আর এই সংস্থার কথা বললে যোগগুরু রামদেবের কথাই মনে পড়ে। যদিও অনেকেরই অজানা যে, এই সংস্থার সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন আরও এক জন। তিনি আচার্য বালকৃষ্ণ।
বালকৃষ্ণ এই আয়ুর্বেদ সংস্থার চেয়ারম্যান এবং সিইও। যোগগুরু রামদেবের ডানহাত তিনি।
দিনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা কাজ করেন বালকৃষ্ণ। তার পরেও সংস্থা থেকে কোনও বেতন নেন না। যদিও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি।
১৯৭২ সালের ৪ অগস্ট জন্ম বালকৃষ্ণের। তাঁর পরিবার নেপাল থেকে ভারতে এসেছিল। তবে কবে তাঁরা ভারতে এসেছিলেন, সেই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।
হরিয়ানার খানপুর গুরুকুলে রামেদবের সঙ্গে দেখা হয় বালকৃষ্ণের। সেখানে বালকৃষ্ণের থেকে উঁচু শ্রেণিতে পড়তেন রামদেব।
১৯৯৫ সালে রামদেব, বালকৃষ্ণ এবং আচার্য কর্মবীর দিব্য যোগ মন্দির ট্রাস্ট খোলেন। হরিদ্বারের কৃপালু বাগ আশ্রমে এই ট্রাস্ট তৈরি হয়।
২০০৬ সালে এই আয়ুর্বেদ সংস্থা তৈরি করেন রামদেব, বালকৃষ্ণ এবং আচার্য কর্মবীর। জানা গিয়েছে, ভক্তদের অনুদান এবং ঋণে এই সংস্থা তৈরি করা হয়। একটি সূত্রের খবর, এই সংস্থায় রামদেবের কোনও অংশীদারি নেই। তিনি শুধু ব্র্যান্ডের মুখ।
বরাবর সাদা ধুতি আর কুর্তায় দেখা যায় বালকৃষ্ণকে। পেশায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। দিনে ১৫ ঘণ্টা কাজ করেন। প্রচারের আলোয় থাকতে খুব একটা পছন্দ করেন না। টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে তাঁকে দেখা যায়।
সংস্থা থেকে কোনও বেতন নেন না বালকৃষ্ণ। তবে ফোর্বস পত্রিকার সম্পত্তি সূচক জানিয়েছে, ৩৬০ কোটি ডলারের মালিক বালকৃষ্ণ। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার সমান।
ভেষজ দাঁতের মাজন, ভোজ্য তেল থেকে প্রসাধনী, দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় বহু জিনিস বিক্রি করে এই তাঁদের সংস্থা।
এই সংস্থার বড় অংশীদার বালকৃষ্ণ। সূত্রের খবর, সংস্থার ৯৪ শতাংশ শেয়ারই বালকৃষ্ণের হাতে। ৩৪টি সংস্থার মাথা তিনি। সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তিনটি ট্রাস্টেরও শীর্ষে রয়েছেন তিনি।
সংস্থার মার্কেটিং এবং বিজ্ঞাপন কৌশল স্থির করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন বালকৃষ্ণ। উঁচু পদে কর্মী নিয়োগ থেকে পণ্য বিক্রির কৌশল, সবটাই সামলান একা হাতে।
বালকৃষ্ণের সংস্থার তৈরি সব পণ্যই ভারতীয় সংস্কৃতির কথা বলে। এগুলির মূল উপাদান ভেষজ। সেটাই এই পণ্যগুলির মূল ইউএসপি। আর এই ইউএসপি তৈরির নেপথ্যেও রয়েছেন বালকৃষ্ণ।
২০১২ সালে সংস্থার রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৬৩ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২৯-২০ অর্থবর্ষে সংস্থার রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ৯০২২ কোটি টাকা। অ্যামাজন, বিগ বাস্কেটের মতো ই-কমার্স সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি রয়েছে সংস্থার। এই সংস্থাগুলি তাদের পণ্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়।
২০১৯ সালে একটি ভোজ্য তেল প্রস্তুতকারী সংস্থা অধিগ্রহণ করেন বালকৃষ্ণ। নামও পাল্টে ফেলা হয় সংস্থার।
ব্যবসায়ে সফল বালকৃষ্ণ বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন। ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য ভুয়ো নথি তৈরি করিয়েছিলেন তিনি। দাবি করা হয়, হাই স্কুল এবং সম্পূর্ণ নন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশের নথি ভুয়ো। ওই স্কুল, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিতে নাকি বালকৃষ্ণের পাশ করার কথা লেখা নেই।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুয়ো নথির ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেয়েছেন বালকৃষ্ণ। তাঁর নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও প্রমাণের অভাবে ২ বছর পর সেই মামলা বন্ধ হয়ে যায়। তার পর ক্রমে ক্রমেই আড়েবহরে বৃদ্ধি পায় তাঁর সংস্থা, যার নেপথ্যে রয়েছেন বালকৃষ্ণ নিজে। বেতন না নিয়েই তিনি কোটিপতি।