সোমবার তারকা-দম্পতিদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেন সুনীল শেট্টির কন্যা আথিয়া এবং ক্রিকেটার লোকেশ রাহুল। ঘরোয়া পরিবেশে গোপনীয়তা বজায় রেখে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন তাঁরা। ৪ বছর ধরে দীর্ঘ সম্পর্কে থাকার পর অবশেষে গাঁটছড়া বাঁধেন দু’জনে। কিন্তু মায়ানগরীতে এমন বহু তারকা জুটি রয়েছেন, যাঁরা একসঙ্গে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবেন বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু পরিবারের অমত থাকায় তার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন বলিপাড়ার এই তারকারা।
পৃথ্বীরাজ কপূরের কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন শশী। অভিনয়ের পাশাপাশি থিয়েটারও চুটিয়ে করেছিলেন তিনি। পৃথ্বী থিয়েটার এবং জিওফ্রে কেন্ডালের শেকসপিয়ারানা থিয়েটার দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শশী। থিয়েটার সূত্রেই তাঁর আলাপ হয় পৃথ্বী থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা এবং অভিনেত্রী জেনিফার কেন্ডালের সঙ্গে।
১৯৫৬ সালে কলকাতার একটি হোটেলে অতিথি হিসাবে এসেছিলেন জেনিফার। শশীর সঙ্গে ওই হোটেলেই দেখা হয় জেনিফারের। ক্ষণিকের আলাপচারিতা বন্ধুত্বে গড়াতে বেশি সময় লাগেনি। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রণয়ের সম্পর্কে পরিণত হয়।
শশী এবং জেনিফার দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে জেনিফারের বাবা আপত্তি জানান। কিন্তু শশীর সঙ্গে ঘর করবেন বলে ১৯৫৮ সালে মুম্বইয়ে আসেন জেনিফার। ওই বছর জেনিফার এবং শশী বিয়ে করেন। ১৯৮৪ সালে কর্কটরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জেনিফার। শশী প্রয়াত হন ২০১৭ সালে।
আশি এবং নব্বইয়ের দশকে শক্তি কপূর তাঁর অভিনয়গুণে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে অভিনয় জগতে পা রাখার পর তিনি এখনও পর্যন্ত ৬০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। কৌতুকাভিনেতা বা খলনায়ক— শক্তি দু’রকম চরিত্রেই ছিলেন সাবলীল। তবে, তাঁর ‘রোম্যান্টিক লাইফ’ সিনেমার চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না।
বলিপাড়ার একসময় নামকরা অভিনেত্রী ছিলেন তেজস্বিনী এবং পদ্মিনী কোলহাপুরে। তাঁদের বড় দিদি শিবাঙ্গীর প্রেমে পড়েছিলেন শক্তি। দু’বছর চুটিয়ে প্রেমও করেছিলেন দু’জনে। কিন্তু কখনও তাঁদের সম্পর্ক আলোর প্রচারে আসেনি। অবশেষে তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে দু’জনের বাড়িতে জানান।
কিন্তু শক্তি এবং শিবাঙ্গীর বাবা-মা তাঁদের বিয়েতে মত দেননি। একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবেন না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান দু’জনে। ১৯৮২ সালে শিবাঙ্গীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শক্তি।
১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবির নায়িকা ভাগ্যশ্রী এক সময়ে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ২১ বছর বয়সে হিমালয় দাসানির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
তবে ভাগ্যশ্রী এবং হিমালয়ের প্রেমকাহিনি দীর্ঘ দিনের। একই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন দু’জনে। স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বেড়াতে গিয়েই ভাগ্যশ্রীকে প্রেম নিবেদন করেন হিমালয়।
হিমালয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান ভাগ্যশ্রী। বহু বছর সম্পর্কে থাকার পর বিয়ে করবেন বলে নিজেদের বাড়িতে জানান তাঁরা। কিন্তু তাঁদের বাড়ি থেকে এই বিয়েতে মত দেওয়া হয়নি। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান দু’জনে। ১৯৯০ সালে হিমালয়কে বিয়ে করেন ভাগ্যশ্রী।
১৯৮৮ সালে মনসুর খানের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল আমির খান এবং জুহি চাওলা অভিনীত ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’। এই হিন্দি ছবি আমিরের অভিনয়জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও নয়া মোড় আনে। এই ছবিতেই একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রিনা দত্ত।
একই ছবিতে অভিনয় সূত্রে আলাপ হয় আমির এবং রিনার। দু’জনের পরিচয় প্রেমের সম্পর্কে গড়িয়ে যায়। কিন্তু তাঁদের বাবা-মা এই সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন দু’জনে।
১৯৮৬ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন আমির এবং রিনা। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০০২ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় দু’জনের। বিবাহবিচ্ছেদের ৩ বছর পর ২০০৫ সালে কিরণ রাওকে বিয়ে করেন আমির। কিন্তু ২০২১ সালে কিরণের সঙ্গেও বিবাহবিচ্ছেদ হয় অভিনেতার।
টেলিভিশনের তারকা জুটি গুরমীত চৌধরি এবং দেবিনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই তালিকায় রয়েছেন। ২০০৬ সালে বিয়ে করেন দুই টেলি তারকা। দেবিনার বান্ধবীর প্রেমিকের বন্ধু ছিলেন গুরমীত। সেই সূত্রেই আলাপ হয় দু’জনের।
অভিনয়ে নামবেন বলে একসঙ্গে কেরিয়ার গড়তে শুরু করেন গুরমীত এবং দেবিনা। বন্ধুত্ব কখন যে ভালবাসায় পরিণত হয়, তা বুঝতে পারেননি দু’জনের কেউ-ই। অবশেষে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে জানান।
কিন্তু বাড়ি থেকে তাঁদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় তাঁরা কাউকে না জানিয়ে ২০০৬ সালে বিয়ে করেন। দু’জনে নিজেদের কেরিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের বাড়ি থেকেও এই সম্পর্ক মেনে নেয়। ২০১১ সালে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে গাঁটছড়া বাঁধেন তাঁরা।