সঞ্জয় লীলা ভন্সালী থেকে অনুরাগ বসু, রোহিত শেট্টি থেকে ফারহা খান— বলিপাড়ার খ্যাতনামী পরিচালকদের কেরিয়ারের ঝুলিতে হিট ছবি থাকলেও বক্স অফিসে ব্যর্থও হয়েছে তাঁদের একাধিক ছবি। কিন্তু ছবি ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা দমে যাননি। বলিপাড়ায় ‘কামব্যাক’ করেছেন সেই বলি পরিচালকেরা।
২০০৮ সাল থেকে বলিপাড়ায় প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চিল্লর পার্টি’ ছবির হাত ধরে পরিচালনায় হাতেখড়ি বিকাশ বহেলের। এই ছবিতে বিকাশের সঙ্গে সহ-পরিচালনা করেছিলেন বলি পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি।
‘কুইন’, ‘শানদার’, ‘সুপার ৩০’ এবং ‘গুডবাই’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবি রয়েছে বিকাশের কেরিয়ারের ঝুলিতে। ২০২৩ সালে বিকাশের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘গণপত’। টাইগার শ্রফ, কৃতি শ্যাননের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। তবে এই ছবি মুক্তির পর বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
কেরিয়ারে ‘গণপত’-এর মতো ফ্লপ ছবি যোগ হওয়ার পর চলতি বছরে তাঁর পরিচালনায় ‘শয়তান’ ছবিটি মুক্তি পায়। অজয় দেবগন এবং আর মাধবন অভিনীত এই ছবিটি বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে।
২০০৩ সালে ‘জ়মিন’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেন রোহিত শেট্টি। কিন্তু কেরিয়ারের প্রথম ছবিই বক্স অফিসে মন্দ ব্যবসা করে। তিন বছরের বিরতির পর ‘গোলমাল’ ছবির হাত ধরে ‘কামব্যাক’ করেন তিনি। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
২০০৪ সালে শাহরুখ খান অভিনীত ‘ম্যায় হুঁ না’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। তার তিন বছর পর ২০০৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় শাহরুখ অভিনীত ‘ওম শান্তি ওম’। দু’টি ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ফারহা খান। দু’টি ছবিই বক্স অফিসে হিট হয়।
‘ওম শান্তি ওম’ মুক্তির তিন বছর পর ২০১০ সালে মুক্তি পায় অক্ষয় কুমার এবং ক্যাটরিনা কইফ অভিনীত ‘তিস মার খান’। ছবিটির পরিচালকের আসনে ছিলেন ফারহা। বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় ‘তিস মার খান’।
চার বছর পরিচালনা থেকে বিরতি নেওয়ার পর ২০১৪ সালে শাহরুখ অভিনীত ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবির হাত ধরে আবার ফিরে আসেন ফারহা। ফারহা পরিচালিত এই ছবিটি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। পরে অবশ্য আরও কোনও ছবি পরিচালনা করেননি তিনি।
১৯৯৬ সালে ‘খামোশি: দ্য মিউজ়িক্যাল’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর। তার পর ‘হম দিল দে চুকে সনম’, ‘দেবদাস’ এবং ‘ব্ল্যাক’-এর মতো সফল ছবি কেরিয়ারের ঝুলিতে ভরেন সঞ্জয়।
২০০৭ সালে সঞ্জয়ের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সাওয়ারিয়া’। এই ছবির মাধ্যমে অভিনয়জগতে আত্মপ্রকাশ করেন দুই তারকাসন্তান— রণবীর কপূর এবং সোনম কপূর। কিন্তু এই ছবি ব্যবসা করতে পারেনি।
‘সাওয়ারিয়া’ মুক্তির তিন বছর পর ২০১০ সালে মুক্তি পায় সঞ্জয় পরিচালিত ‘গুজ়ারিশ’। হৃতিক রোশন এবং ঐশ্বর্যা রাই অভিনীত এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। পর পর দু’টি ছবি ব্যর্থ হওয়ার পর তিন বছরের বিরতি নেন সঞ্জয়।
২০১৩ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সঞ্জয়ের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘গোলিয়োঁ কি রাসলীলা রাম-লীলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘পদ্মাবত’ এবং ‘গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’র মতো ছবি। প্রতিটি ছবিই বক্স অফিস থেকে ভাল উপার্জন করে। বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটির পর্দায়ও পা রেখেছেন সঞ্জয়। চলতি বছরের ১ মে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে সঞ্জয় পরিচালিত ওয়েব সিরিজ় ‘হীরামন্ডি’।
২০০৯ সালে ‘লাক বাই চান্স’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনা শুরু করেন জাভেদ আখতারের কন্যা জ়োয়া আখতার। এই ছবিটি বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। দু’বছর পর ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জ়িন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় ‘কামব্যাক’ করেন জ়োয়া।
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার পরিচালনায় ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রং দে বসন্তি’ ছবিটি বক্স অফিসে হিট করে। কিন্তু তিন বছর পর রাকেশ পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘দিল্লি-৬’ বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
‘দিল্লি-৬’ মুক্তির পর পরিচালনা থেকে চার বছরের বিরতি নেন রাকেশ। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভাগ মিল্খা ভাগ’ ছবির সাফল্যে পরিচালক হিসাবে ‘কামব্যাক’ করেন তিনি।
২০০৩ সালে ‘সায়া’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনা শুরু করেন অনুরাগ বসু। তার পর ‘মার্ডার’, ‘গ্যাংস্টার’ এবং ‘লাইফ ইন অ্যা… মেট্রো’ ছবিগুলির পরিচালনা করে খ্যাতি পান তিনি।
২০১০ সালে রাকেশ রোশনের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অনুরাগ পরিচালিত ‘কাইট্স’। হৃতিক রোশন এবং বারবারা মোরি অভিনীত এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। দু’বছর পর ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বরফি!’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় ‘কামব্যাক’ করেন পরিচালক।
১৯৯৩ সালে যশ চোপড়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘পরম্পরা’। এই ছবিটি বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করতে পারেনি। একই বছরে ‘ডর’ ছবি নিয়ে হাজির হন যশ। শাহরুখ খান, সানি দেওল এবং জুহি চাওলা অভিনীত এই ছবিটি বক্স অফিস থেকে দারুণ আয় করে।
‘জব উই মেট’, ‘রকস্টার’, ‘ককটেল’ এবং ‘হাইওয়ে’র মতো একাধিক সফল ছবি কেরিয়ার ঝুলিতে রয়েছে পরিচালক ইমতিয়াজ় আলির। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জব হ্যারি মেট সেজল’ এবং ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লভ আজ কাল’ ছবি দু’টি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় ইমতিয়াজ়ের।
চার বছর পর ২০২৪ সালে আবার পরিচালনায় ফিরে আসেন ইমতিয়াজ়। তবে বড় পর্দায় নয়, ওটিটির জগতে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ইমতিয়াজ়ের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘অমর সিংহ চমকিলা’। দিলজিৎ দোসাঞ্জ এবং পরিণীতি চোপড়া অভিনীত এই ছবিটি দর্শকের মনে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে।