বৃহস্পতিবারের তারিখ ছিল ০৮/০৮। আবার ২০২৪ সালের সংখ্যাগুলি যোগ করলেও ৮ হয়। ০৮/০৮/০৮ তারিখটি শুভ বলে দাবি করেন জ্যোতিষীদের একাংশ। এই শুভ দিনেই বাগ্দান সারলেন দক্ষিণী তারকা নাগা চৈতন্য এবং অভিনেত্রী শোভিতা ধুলিপালা। কানাঘুষো শোনা যায়, প্রাক্তন স্ত্রী সামান্থা রুথ প্রভুকেও নাকি কয়েক বছর আগে একই তারিখে প্রেম নিবেদন করেছিলেন নাগা।
২০১০ সালে ‘ইয়ে মায়া চেসাভে’ নামে একটি তেলুগু ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবিতে নাগার বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় সামান্থাকে। অধিকাংশের দাবি, এই ছবি শুটিং চলাকালীনই প্রথম আলাপ হয় নাগা এবং সামান্থার।
পেশাগত সূত্রে আলাপ হওয়ার পর পাঁচ বছর কেটে যায়। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে সম্পর্কে জড়ান নাগা এবং সামান্থা। প্রায় দু’বছর সম্পর্কে থাকার পর বাগ্দান পর্ব সারেন দুই তারকা।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আংটিবদল করেন নাগা এবং সামান্থা। সেই বছরেই অক্টোবরে গাঁটছড়া বাঁধেন দু’জনে।
নাগা এবং সামান্থা দু’জনে কিছু না জানালেও অধিকাংশের দাবি, ২০১৬ সালের ৮ অগস্ট নাকি অভিনেত্রীকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন নাগা। আট বছরের ব্যবধানে আবার একই তারিখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন তিনি।
সামান্থার সঙ্গে চার বছরের সংসার ছিল নাগার। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বিবাহবিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেন দু’জনে। সামান্থার সঙ্গে বিচ্ছেদের কয়েক মাসের মধ্যেই নাকি শোভিতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নাগা।
একাংশের দাবি, সামান্থার সঙ্গে নাগার বিচ্ছেদের নেপথ্যে ছিলেন তৃতীয় ব্যক্তি। এই তৃতীয় ব্যক্তিই নাকি শোভিতা। এমনটাই মনে করেন অনেকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নাগা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন,সম্পর্কে থাকাকালীন সামান্থাকে তিনি ঠকিয়েছিলেন। নাগা বলেছিলেন, “একটাই তো জীবন। সব রকম অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। তবে এখন বয়স হয়েছে। নিজেকে বুঝতে শিখেছি। এখন মনে হচ্ছে, এ বার থিতু হওয়ার সময় এসেছে। তবে হ্যাঁ, একটা সম্পর্কে থাকার সময় আমি সেই মানুষটিকে ঠকিয়েছি।”
অন্য দিকে শোভিতার সঙ্গে প্রেম নিয়ে কোনও দিনই সরাসরি মুখ খোলেননি নাগা। সংবাদমাধ্যমকে শুধু বলেছিলেন, “পর্দায় যে ধরনের চরিত্রে আমাকে দেখা যায়, তা দেখে মনে হয় যে আমি মানুষ হিসাবে খুব দৃঢ়চেতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তবে বাস্তবে আমি অল্পেই খুশি হয়ে যাই। আমার কাছে ভালবাসা মানে ভক্তি। আসলে আমি যখন কাউকে ভালবাসি তখন মনে হয় তাঁর মধ্যেই হারিয়ে যাই।”
নাগা এবং শোভিতার সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা চলছিল বহু দিন ধরেই। তবে দু’জনেই মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন। কয়েক বছর আগে লন্ডনের রেস্তরাঁর এক রন্ধনশিল্পী নাগার সঙ্গে তাঁর একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। ছবিতে পিছনের একটি আসনে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল শোভিতাকে। নাগা এবং শোভিতার সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা শুরু হওয়ায় সেই ছবি সমাজমাধ্যম থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ওই রন্ধনশিল্পী।
২০২২ সালের জুন মাসে শোভিতা এবং নাগাকে একসঙ্গে ইউরোপে দেখা যায়। ছবিশিকারিদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিলেন দুই তারকা। ছবিতে নাগা এবং শোভিতাকে ওয়াইন চেখে দেখার এক অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল। অধিকাংশের দাবি, দুই তারকা তখন থেকেই সম্পর্কে ছিলেন। এমনকি একসঙ্গে ইউরোপেও ঘুরতে গিয়েছিলেন তাঁরা।
নাগা এবং শোভিতার সমাজমাধ্যমের পাতায় শকুনের চোখ নিয়ে ঘোরাঘুরি করতেন নেটব্যবহারকারীরা। দু’জনে একসঙ্গে কোনও ছবি না দিলেও তাঁরা যে একসঙ্গে ঘুরতে যেতেন তা আন্দাজ করেছিলেন নেটব্যবহারকারীদের একাংশ।
নাগা এবং শোভিতা দু’জনেই সমাজমাধ্যমের পাতায় তাঁদের জঙ্গল সাফারি করতে যাওয়ার ছবি পোস্ট করেছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে নিজেদের ছবি দেননি। অথচ দুই তারকা একই জায়গায় তোলা নিজস্বী পোস্ট করেছিলেন। তা দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
২০২০ সালে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে শোভিতা প্রসঙ্গে নাগাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। শোভিতা সম্পর্কে কয়েকটি শব্দ বলতে বললে নাগা জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘আমার মুখের হাসিটুকুই এর উত্তর।’’
বৃহস্পতিবার বাগ্দান সারলেন নাগা এবং শোভিতা। বাগ্দানের ছবি নিজের সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন নাগার পিতা নাগার্জুন অক্কিনেনী। দুই তারকার বাগ্দান-পরবর্তী প্রথম ছবি পোস্ট করে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নাগার্জুন লেখেন “শোভিতা ধুলিপালার সঙ্গে আমাদের পুত্র নাগা চৈতন্যের বাগ্দানের খবর দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। সকাল ৯.৪২ মিনিটে ওঁদের বাগ্দান সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের পরিবারে শোভিতাকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা খুবই খুশি। যুগলকে অনেক শুভেচ্ছা। সারা জীবন ওঁরা ভালবাসায় এবং সুখে থাকুক। ঈশ্বর ওঁদের মঙ্গল করুন।”
বাগ্দান উপলক্ষে শোভিতা বেছে নিয়েছিলেন হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি ও ব্লাউজ়। খোঁপায় বাঁধা গোলাপি ফুল। নাগা চৈতন্যের পরনেও ছিল সাদা শেরওয়ানি।
নাগার্জুনই নাকি এক সময় শোভিতার সৌন্দর্য দেখে এমন অভিভূত হয় পড়েছিলেন যে, ক্যামেরার সামনে তাঁকে ‘হট’ বলতেও সঙ্কোচ বোধ করেননি নাগার পিতা। নাগা এবং শোভিতার বাগ্দান পর্বের পরে সেই পুরনো ভিডিয়োই সমাজমাধ্যমের চর্চায় উঠে এসেছে।
তেলুগু ছবি ‘গুড়াচারি’-তে অভিনয় করেছিলেন শোভিতা। ছবিটি সফল হওয়ার পরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানেই হবু পুত্রবধূকে ‘হট’ বলে সম্বোধন করেছিলেন নাগার্জুন। তখন অবশ্য অভিনেতা জানতেন না, ভবিষ্যতে শোভিতা তাঁর পুত্রবধূ হতে পারেন।
অনুষ্ঠানে শোভিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে নাগার্জুন বলেছিলেন, “শোভিতা ধুলিপালাকে সত্যিই দারুণ লেগেছে এই ছবিতে। আমার বলা উচিত নয়। তা-ও বলব, ও সত্যিই আবেদনময়ী। ওর মধ্যে আকর্ষণীয় একটা ব্যাপার আছে।”
শোভিতার সঙ্গে বাগ্দান সারার আগে প্রাক্তন স্ত্রী সামান্থাকে নিয়ে একটি বড় পদক্ষেপ করেন নাগা। অভিনেতার সমাজমাধ্যমে সামান্থার সঙ্গে একাধিক ছবি ছিল তাঁর। কখনও বাড়িতে, কখনও বা বেড়াতে গিয়ে সামান্থার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি তুলেছিলেন নাগা।
শোভিতার সঙ্গে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর ঠিক আগেই সামান্থার সঙ্গে তোলা ছবিগুলি সমাজমাধ্যম থেকে মুছে ফেলেন নাগা। তবে ‘মজিলি’ ছবির পোস্টার এবং সেটের কিছু ছবি এখনও রয়ে গিয়েছে নাগার সমাজমাধ্যমের পাতায়। সামান্থার সঙ্গে এই ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন নাগা চৈতন্য।