সমুদ্রের শহর গোয়া। আরব সাগরের তীরে দেশের অন্যতম বিলাসবহুল এই সৈকতে বছর বছর বহু মানুষ ছুটি কাটাতে যান। অনেকের মতে গোয়ার সৌন্দর্য হার মানায় দেশের অন্য সব সমুদ্রঘেঁষা শহরকে।
প্রদীপের এক দিকে আলো থাকলে আঁধার লেগে থাকে অন্য ধারে। গোয়াতেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধের নানা চক্র। যৌনতার ফাঁদ পেতে সেখানে পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হিন্দি সংবাদ সংস্থা ‘দৈনিক ভাস্কর’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোয়ায় বেড়ে উঠেছে যৌন প্রতারণা চক্র। সুকৌশলে যৌনতার লোভ দেখিয়ে সেখানে প্রতারণা করা হচ্ছে বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের সঙ্গে। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
গোয়ার এই প্রতারকেরা সমুদ্রের ধারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ‘স্পা’ বা ‘বডি মাসাজ সেন্টার’-এর প্রলোভন দেখান বলে অভিযোগ। বলা হয়, মাত্র ৩ হাজার টাকায় মিলবে ‘বিশেষ’ পরিষেবা।
ইচ্ছুক পর্যটকদের তিন রকমের ‘অফার’ দেওয়া হয়। ৩ হাজার এবং ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে বিশেষ কায়দার ‘বডি মাসাজ’-এর কথা বলা হয়। এ ছাড়া, ৫ হাজারের বিনিময়ে মেলে ‘সম্পূর্ণ পরিষেবা’।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ, পরিষেবায় ইচ্ছা প্রকাশ করলে বিশেষ ‘স্পা’-তে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। তার পর সেখান থেকে পছন্দসই যে কোনও মহিলাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পান তাঁরা।
কিন্তু অভিযোগ, প্রতারকদের কথা শুনে এক বার সেই স্পা-তে গিয়ে পৌঁছলে সেখান থেকে সহজে বেরিয়ে আসা মুশকিল। বরং টাকা খরচ হয়ে যায় জলের মতো।
৩ হাজারের বিনিময়ে পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে টাকার অঙ্ক ক্রমশ বাড়তে থাকে। অভিযোগ, ৩ হাজার টাকায় ১০ মিনিটের বেশি স্পা-তে থাকতে দেওয়া হয় না। যৌন পরিষেবার জন্য কখনও ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়, কখনও আবার খরচ করতে হয় তার চেয়েও বেশি।
এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, স্পা-তে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। তার পর হাতে মদের গ্লাস নিয়ে তাঁর কাছে আসেন এক নারী। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আসে আরও ৫ হাজারের বিল।
এখানেই শেষ নয়, এর পর আসে আস্ত মদের বোতল, সঙ্গে ১০ হাজার টাকার নতুন বিল। না চাইলেও এই মদ্যপান আবশ্যিক। দিতে হয় টাকাও। অভিযোগ, কখনও ২০ হাজার, কখনও ২৫ হাজার টাকা খুইয়ে প্রতারণাচক্রের জাল থেকে বেরোতে পেরেছেন পর্যটকেরা।
কোনও কোনও পর্যটককে যৌনতা নয়, সারা রাত নাচগান এবং অবাধ উদ্যাপনের প্রলোভন দেখান প্রতারকেরা। তার পর একই কায়দায় তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয় মোটা টাকা।
অভিযোগ, গোয়ার এই প্রতারণা চক্রের বিষয়ে প্রশাসন সম্পূর্ণ উদাসীন। ‘দেনিক ভাস্কর’-এর ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পুলিশের মদতেই নাকি রমরমিয়ে চলছে লোক ঠকানোর কাজ। এই ব্যবসা থেকে স্থানীয় পুলিশও কমিশন লাভ করে বলে দাবি।
প্রতারণা চক্রে যে মহিলাদের কাজে লাগানো হয়, তাঁদের অধিকাংশ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দা। এ ছাড়া, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, মুম্বই এমনকি বিদেশ থেকেও মেয়েদের নিয়ে আসা হয় যৌন ব্যবসায় কাজে লাগানোর জন্য।
ভুক্তভোগীদের দাবি, যে মহিলাদের ‘বিশেষ’ পরিষেবা দেওয়ার কথা, তাঁরা অধিকাংশই এই পেশায় অত্যন্ত বিরক্ত। বাধ্য হয়ে তাঁদের এই কাজ করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা পরিস্থিতির শিকার।
ফলে এই মহিলাদের অনেককেই পর্যটকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখা যায়। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি মহিলারা এই চক্রের কেন্দ্রে, দাবি ভুক্তভোগীদের।
দৈনিক ভাস্করের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাঁরা প্রতারকদের ডেরায় হানা দেন বলে খবর। কিন্তু সেখানে ‘আপত্তিকর’ কিছুই পাওয়া যায়নি, জানিয়েছেন গোয়া পুলিশের অপরাধ দমন শাখার ডেপুটি সুপার ভালসন।
তবে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, অন্য দিন ফের অতর্কিতে ওই ডেরায় হানা দেবে তারা। প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেলে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
গোয়ার স্থানীয় সমাজকর্মীরা দাবি করছেন, পুলিশ প্রশাসন দুর্নীতিগ্রস্ত। সেই কারণেই তাঁদের নাকের ডগায় প্রতারণার জাল বিছিয়েছেন দুষ্কৃতীরা।