কোভিডকে সাধারণ সর্দিকাশি ভাবাটা একেবারেই ঠিক নয়। এর দীর্ঘকালীন প্রভাব পড়তে পারে শরীরের উপর। আবারও সতর্ক করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। কোভিড বিধি আবারও চালু করার প্রয়োজন কি না, তা নিয়েও মত প্রকাশ করলেন।
সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সৌম্যা। তাতেই জানিয়েছেন, কোভিডকে হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক নয়। এর জেরে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, মানসিক সমস্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
পাশাপাশি সৌম্যা এ-ও মনে করেন, ২০২০ সালে কোভিডের প্রথম ঢেউ এবং ২০২১ সালে ডেল্টার প্রভাবে তৈরি হওয়া তরঙ্গের পর থেকে দেশে চিকিৎসা পরিকাঠামো অনেকটাই উন্নত হয়েছে। আবার অতিমারির কোনও ঢেউ এলে অনায়াসে সামলে নিতে পারবে ভারত বলেও মনে করেন তিনি।
কিন্তু তা বলে পরিস্থিতিকে হেলাফেলা করলে চলবে না। এমনটাই মনে করেন সৌম্যা। তাঁর মতে, নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। বয়সে প্রবীণ এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের মাস্ক পরার অনুরোধও করেছেন বিজ্ঞানী।
দেশে আচমকাই বৃদ্ধি পেয়েছে কোভিড সংক্রমণ। বেশ কয়েকটি রাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তার জেরে ফিরে এসেছে সেই আতঙ্কের স্মৃতি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৩০০ জনই কেরলের বাসিন্দা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ২,৬৬৯। বুধবার দেশে কোভিডে নতুন করে সংক্রামিত হয়েছিলেন ৬১৪ জন। মে মাস থেকে দেশে এক দিনে এত জন সংক্রামিত হননি।
করোনা ভাইরাসের নতুন উপরূপ জেএন.১-এর কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ। তবে হু এ-ও জানিয়েছে, নতুন এই উপরূপ যে খুব মারাত্মক, এখনও তার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
তবে হু মনে করছে, উত্তর গোলার্ধে এখন শীতকাল। সে কারণে জেএন.১-এর প্রভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা। অনেক মানুষ এই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
কিন্তু হু-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী বিষয়টিকে ততটাও হালকা ভাবে দেখতে চান না। তিনি বার বার সতর্ক করেছেন যে, কোভিডকে সাধারণ সর্দিকাশি ভাবা একেবারেই ঠিক নয়।
কেরলের কোচির হাসপাতালে দেখা গিয়েছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ৩০ শতাংশ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের বাকি অংশেও এই ছবিই দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা। এই প্রসঙ্গে সৌম্যা জানান, গত চার বছর ধরে বার বার এ রকমই দেখা গিয়েছে। হু এই বিষয়ে আগেই সতর্কও করেছে।
জেএন.১ কতটা ভয়ঙ্কর, সেই নিয়েও মুখ খুলেছেন সৌম্যা। তিনি বলেন, ‘‘জেএন.১ হল ওমিক্রনের একটি উপরূপ। আশা করা যায়, ওমিক্রনের মতোই কাজ করবে নতুন এই উপরূপ, যা কিনা ততটাও ভয়ঙ্কর নয়। কিন্তু প্রত্যেক নতুন উপরূপই আরও একটু বেশি ছোঁয়াচে হয়। আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি রয়েছে, তাকে আক্রমণ করার বা এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে নতুন রূপটি।’’
সৌম্যা জানালেন, সে কারণেই ভাইরাসের নতুন উপরূপের মাধ্যমে নতুন করে অতিমারির ঢেউ তৈরি হয়। যাঁরা আগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদেরও নতুন করে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এর পরেই সৌম্যার হুঁশিয়ারি, সাধারণ সর্দিকাশির থেকে অনেকটাই আলাদা কোভিডের এই নতুন রূপ। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিসংখ্যান রয়েছে। সেই পরিসংখ্যান দেখে আমরা বলতে পারি যে, কোভিডে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বা একাধিক বার সংক্রামিত হয়েছেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, ডিমেনশিয়া, অবসাদ, মানসিক সমস্যা, পেশীতে ব্যথা, ক্নান্তি হতে পারে অনেক বেশি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাঁদের সমস্যা হতে পারে।’’
সে কারণেই সৌম্যার পরামর্শ, ‘‘কোভিডকে হালকা ভাবে নেবেন না। সংক্রমণকে এড়িয়ে যেতে পারলেই ভাল। কারণ, সংক্রামিত হয়ে সমস্যা বৃদ্ধি করা কাজের কথা নয়।’’
ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কোভিড টাস্ক ফোর্সের কোচেয়ারম্যান রাজীব জয়দেবন মনে করেন, কোভিড টিকা হয়তো সংক্রমণ রুখবে। কিন্তু তবু প্রশ্ন থেকেই যায় যে, নতুন এই উপরূপ কি আলাদা?
রাজীব মনে করেন, জেএন.১ কোভিডের এক ধাপ উন্নততর উপরূপের থেকে আলাদা। এই উপরূপ অনেক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।
এ বার কি মাস্ক পরার সময় এসে গিয়েছে? রাজীব মনে করেন, এক জায়গায় যদি ভিড় বেশি থাকে, বায়ু চলাচলের জায়গা কম থাকে, এ রকম বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরা উচিত। কোনও যান বাহনে অপরিচিত মানুষজনের সঙ্গে যাতায়াতের সময় মাস্ক পরা জরুরি। নয়তো অন্তত জানলা খুলে দেওয়া জরুরি।
নতুন উপরূপ জেএন.১-এর উপসর্গ কী? সৌম্যা জানিয়েছেন, জ্বর, কাশি হতে পারে সংক্রামিতদের। গন্ধ, স্বাদ না-ও পেতে পারেন। পাশাপাশি তিনি মনে করেন, এই উপরূপে আক্রান্ত হলে জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, খেতে অনীহা, বমি হতে পারে। পোস্ট কপি- কতটা ভয়ঙ্কর এই রূপ?