১৮ জুন আলো এবং ফুলের সাজে সেজে উঠেছিল মায়ানগরী। বেজে উঠেছিল বিয়ের সানাই। ধর্মেন্দ্রের নাতি অর্থাৎ সানি দেওলের পুত্র কর্ণ দেওল তাঁর দীর্ঘকালীন প্রেমিকা দৃশা আচার্যের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন সে দিন।
বলিপাড়ার কয়েক জন তারকা নিমন্ত্রিত না হলেও কর্ণ-দৃশার বিয়ের অনুষ্ঠানে নেমে এসেছিল নক্ষত্রের ঢল। বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের মানালিতে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন নবদম্পতি। কিন্তু সানি যেন পুত্রের বিয়ের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।
হিমাচল প্রদেশের দশাল গ্রাম সানির প্রিয় জায়গা। শুটিং বা কাজের চাপ না থাকলে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে ছুটি কাটাতে চলে যান। কখনও সুযোগ পেলে একান্তে সময় কাটাতে চলে যান সেখানে।
দশাল গ্রামে নিজের নামে একটি বাড়ি লিজ় নিয়েছেন সানি। গ্রামটি তাঁর এত আপন, কিন্তু তাঁর জীবনের এক সুখকর মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পারলেন না এই গ্রামের বাসিন্দারা। দশালের বাসিন্দারা মুম্বই আসেননি তো কী হয়েছে, অভিনেতা নিজেই চলে গিয়েছেন সেখানে। পুত্রের বিয়ে হয়েছে বলে কথা! কর্ণ-দৃশার বিয়ের উপলক্ষে তাই গ্রামবাসীদের পাত পেড়ে খাওয়ালেন তিনি।
গ্রামবাসীদের আপ্যায়ণে কোনও রকম ত্রুটি রাখেননি সানি। দশাল গ্রামের সংস্কৃতি অনুযায়ী কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠান হলে সেখানে ‘হিমাচলী ধাম’ নামে এক মহাভোজের আয়োজন করা হয়। সানিও তার অন্যথা করেননি।
হিমাচলী ধামের তালিকাও ছিল নজরকাড়া। বলিপাড়া সূত্রে খবর, দামি মাশরুম ব্যবহার করে একটি বিশেষ পদ রান্না করা হয়েছিল গ্রামবাসীদের জন্য।
হিমালয়ের পাদদেশে গুচি মাশরুম স্বাদে অতুলনীয়। তবে তার দামও আকাশছোঁয়া। এই মাশরুম দিয়েই একটি পদ রান্না করা হয়েছিল। এই মাশরুমের এক কেজির দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
হিমাচলী ধামের আয়োজন করার জন্যও বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন। যে কেউ এই রান্না করতে পারেন না। এর জন্য গ্রামে রয়েছে বিশেষ রাঁধুনি।
গ্রামের প্রথা অনুযায়ী যে রাঁধুনিরা জাতিতে ব্রাহ্মণ, তাঁরাই শুধুমাত্র হিমাচলী ধামের আয়োজন করতে পারেন। ‘বোটি’ নামে পরিচিত তাঁরা। রান্নার সময় কড়া নিয়মকানুনও পালন করতে হয় তাঁদের।
হিমাচলী ধামের কোনও পদেই পেঁয়াজ এবং রসুন ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত একাধিক নিরামিষ পদ পরিবেশন করার নিয়ম থাকে। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাংসের পদও দেখা যায় হিমাচলী ধামে।
শালপাতার উপর ভাত, ডাল, রাজমা এবং কড়ি পরিবেশন করা হয়। তার পাশাপাশি কালে চানা কি খট্টা, বুড় কি কড়ি এবং গুড় দেওয়া হয়।
হিমাচলী ধামের খাদ্যের তালিকায় বদল এনেছিলেন সানি। তালিকায় ছিল গুচি কা মাদরা, রাজমা, ডাল চানা।
খাদ্যের তালিকা ছিল আরও লম্বা। কফির পাশাপাশি ছিল নানা মুখরোচক তেলেভাজা। কড়ি পকোড়া, সেপু ভড়ি, খট্টা কদ্দুর মতো খাবারও নজর কেড়েছিল।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দশাল গ্রামে হিমাচলী ধামের প্রতিটি পদ রান্নার দায়িত্বে ছিলেন শেফ নরেশকুমার মিশ্র। তিনি নিজেও এক জন ‘বোবটি’ হওয়ায় রান্না করতে পেরেছেন।
শুধুমাত্র দশাল গ্রামে সানির মহাভোজের দায়িত্ব নেননি নরেশ। এর আগেও বলিপাড়ার বহু তারকার সঙ্গে কাজ করতে দেখা গিয়েছে নরেশকে।
সানির এই আয়োজনে যেন দশাল গ্রামে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। কানাঘুষো শোনা যায় ওই গ্রামের এক জন বাসিন্দাও নিমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েননি। সুদূর পাহাড়ি গ্রামবাসীদের সঙ্গে আনন্দভাগ করার মুহূর্তেও সমালোচনার শিকার হন সানি।
মুম্বইয়ে কর্ণের বিয়ে উপলক্ষে কর্ণ জোহর, অজয় দেবগন, হেমা মালিনী, ডিম্পল কপাডিয়ার মতো তারকাদের নিমন্ত্রণ করেননি সানি। এমনকি তাঁর প্রতিবেশী অমিতাভ বচ্চন, আদিত্য চোপড়া এবং রানি মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন না নিমন্ত্রিতদের তালিকায়। যেখানে প্রতিবেশীদের নিজের আনন্দে শামিল করেননি, সেখানে হিমাচল প্রদেশের একটি গ্রামে গিয়ে এমন আয়োজন করছেন সানি, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বলিপাড়ায়।