ঘুম থেকে উঠে দেখেন, মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা। প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি কেন এ রকম হচ্ছে। চিকিৎসকের কাছে ছোটেন তরুণ। গিয়ে যা জানতে পারেন, তাতে তিনি হতবাক। তাঁর মাথায় নাকি আটকে রয়েছে আস্ত বুলেট! তার পরেও দিব্যি বেঁচে রয়েছেন তিনি। কে মেরেছে গুলি? তরুণ মনে করতে পারেননি। যদিও শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তের হাজতবাস হয়েছে।
ওই তরুণ আমেরিকার ফ্লোরিডার সেন্ট লুইসি কাউন্টির বাসিন্দা। নাম মাইকেল ময়লান। বয়স ৪৫ বছর। স্ত্রী এপ্রিলের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকতেন। সুখী দাম্পত্য ছিল তাঁদের।
এক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অসম্ভব কষ্ট শুরু হয় তাঁর। ডান কানের পিছনটা টনটন করতে শুরু করে।
যন্ত্রণা ক্রমেই বাড়তে থাকে। স্ত্রী এপ্রিলকে অনুরোধ করেন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী তাঁকে ফ্লোরিডার এক হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করেন। তার পর তাঁরা যা জানান, তাতে চোখ কপালে ওঠে মাইকেলের।
সেন্ট লুসি কাউন্টির শেরিফ কেন মাস্কারা জানিয়েছেন, চিকিৎসক অনেক ক্ষণ ধরে পরখ করেন মাইকেলকে। তার পর বলেন, ‘‘আপনার বোধ হয় গুলি লেগেছে।’’ জবাবে মাইকেল বলেছিলেন, ‘‘অসম্ভব।’’
চিকিৎসকের সঙ্গে যখন মাইকেলের এ সব কথাবার্তা চলছে, তখন ঘর থেকে পালিয়ে যান এপ্রিল। তাতেই একটু খটকা লেগেছিল চিকিৎসকের। মাইকেল যদিও তখনও কিছু বোঝেননি।
পরে অস্ত্রোপচার করে মাইকেলের মাথা থেকে বুলেট বার করেন চিকিৎসকেরা। মাইকেল সেরে গেলেও ভেঙে পড়েন মাইকেলের স্ত্রী এপ্রিল।
এপ্রিল জানান, গুলিটি করেছিলেন তিনিই। আগের রাতে। মাইকেল তখন ঘুমাচ্ছিলেন। সে সময় গুলি করেন তিনি।
কেন গুলি করেছিলেন এপ্রিল? তাঁর দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে গুলি করেননি। ভুল করে গুলি চালিয়েছিলেন। রেগে গিয়েছিলেন স্বামীর উপর।
কেন রেগে গিয়েছিলেন? এপ্রিল জানিয়েছেন, আগের রাতে স্বামী খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দেখে বেশ রেগে যান তিনি। রাগে গুলি চালিয়ে দেন। সেই গুলি গেঁথে যায় মাইকেলের মাথায়।
অস্ত্র আইন ভাঙার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে এপ্রিলকে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু অভিযোগ আনা হয় এপ্রিলের বিরুদ্ধে।
এপ্রিলকে গ্রেফতারের পর পরোয়ানা নিয়ে পুলিশ তাঁদের বাড়িও তল্লাশি করে। এপ্রিল এবং মাইকেলের বাড়ি থেকে একটি বন্দুক এবং রক্তের দাগ লাগা কিছু ছেঁড়া কাপড়ের খোঁজ পায় পুলিশ। তাদের ধারণা, ওই কাপড় দিয়েই মাইকেলের কানের পিছন থেকে রক্ত মুছে ফেলা হয়েছিল।
কিন্তু মাইকেল এ সব টের পাননি কেন? আদৌ কি সত্যি কথা বলছেন যুগল? চিকিৎসকদের দাবি, কোনও কিছুতে লেগে ছিটকে গুলি ঢোকে মাইকেলের মাথায়। ফলে তার অভিঘাত ছিল অনেক কম। তাই বরাতজোরে বেঁচে যান তিনি।
কিন্তু তিনি কিছুই টের পেলেন না কী ভাবে? চিকিৎসকদের একাংশের মতে, গুলি লেগে সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে যান মাইকেল। ঘুম থেকে উঠে মাথা যন্ত্রণা হওয়ার যে তত্ত্ব তিনি দিচ্ছেন, তা হয়তো তাঁর জ্ঞান ফেরার পর, ঘুম ভাঙার নয়। বুলেটের অভিঘাতে তাঁর স্মৃতির একাংশ লোপ পেয়েছিল বলেও মনে করেন অনেকে। তবে সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।