ইংল্যান্ডের শিল্প তালুকে আজকাল প্রায়শই গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। না! এ কোনও দুষ্কৃতীর কাজ নয়। বরং গুলি চালাচ্ছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। উদ্দেশ্য— অপ্রচলিত উপায়ে দূষণহীন জ্বালানি তৈরি করা।
‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’ নামে অক্সফোর্ডের এক সংস্থার দাবি, ভবিষ্যতে অপ্রচলিত জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পারে তাদের গবেষণা। মিটতে পারে চিরাচরিত জ্বালানির জন্য হাহাকার। কমতে পারে পরিবেশ দূষণের মাত্রা।
অপ্রচলিত জ্বালানি উৎপন্ন করতে পিস্তলের মতো দেখতে একটি ৭০ ফুটের যন্ত্র তৈরি করেছেন ওই নিউক্লিয়ার ফিউশন সংস্থার বিজ্ঞানীরা। ‘বিগ ফ্লেন্ডলি গান’ নামের ওই পিস্তলটি অবশ্য ‘প্রোটোটাইপ’। ভবিষ্যতে অফুরন্ত জ্বালানির সমস্যা মেটাতে এটিই কি তাঁদের অস্ত্র? ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’-এর অন্তত তেমনই দাবি।
অক্সফোর্ডের ওই সংস্থার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরেই গবেষণাগারে অপ্রচলিত জ্বালানি তৈরি করার কাজে লেগে পড়েছেন তাঁরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’ জানিয়েছে, প্রায় দশ মাস ধরে ওই পিস্তলটির নকশা বানিয়ে তা গড়ে তুলতে খরচ হয়েছে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যায় প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা। এমন ‘অস্ত্র’ নাকি বিশ্বের কোথাও নেই।
৭২ ফুট লম্বা ইস্পাতের ওই পিস্তল থেকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ কিলোমিটার গতিবেগে গুলি ছোড়া যায় বলে জানিয়েছে ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’। যা দিয়ে অফুরান দূষণহীন জ্বালানি উৎপন্ন করা সম্ভব বলে দাবি তাদের।
বিজ্ঞানীদের আরও দাবি, পারমাণবিক ফিউশন তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। সংস্থার পরীক্ষাগারে গুলি ছোড়াছুড়ি করেই নাকি ভবিষ্যতে নতুন জ্বালানি উপহার দিতে পারবে সংস্থাটি।
কী ভাবে কাজ করে এই পিস্তলটি? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই পিস্তল থেকে একটি গুলি ছুড়তে প্রায় ৩ কেজি গানপাউডার প্রয়োজন। সে জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পিস্টনও কাজে লাগে।
একটি ব্যারেলে রাখা হাইড্রোজেন গ্যাসে চাপ সৃষ্টি করতে করতে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে যায় ওই পিস্টনটি। এর পর তা একটি শঙ্কু আকৃতির খোপে পৌঁছে যায়। এর পর একটি ধাতব ঢাকনার মধ্যে দিয়ে তা বিস্ফোরণ ঘটায়। তার আগে অবশ্য ওই খোপের গ্যাসকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় ভেঙে দেয়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভ্যাকুয়াম চেম্বার থেকে বেরিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ কিলোমিটার গতিতে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করে পিস্তলের গুলি। লক্ষ্যবস্তু অবশ্য একটি নিউক্লিয়ার ফিউশন। এতে ওই ফিউশনের নিউক্লিয়াসগুলি একসঙ্গে ফিউজ় হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে আসে। এই মুহূর্তটি অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী।
অক্সফোর্ডের ওই সংস্থাটি জানিয়েছে, পৃথিবীকে আলোকিত করতে এ ভাবেই শক্তি উৎপাদন করে সূর্য। এবং প্রায় একশো বছর ধরে এই কায়দাই রপ্ত করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। যাতে তার সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে জ্বালানি উৎপন্ন করা যায়।
২০৩০ সাল নাগাদ তাঁদের চুল্লি থেকে কৃত্রিম উপায়ে জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’-এর সিইও নিক হকার। এর পরের দশকে তা পাওয়ার গ্রিডে পৌঁছে যেতে পারে।
প্রচলিত উপায়ে জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে উৎপন্ন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে যে ভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তা-ও নাকি রুখতে পারে এই জ্বালানি।
নিকের আরও দাবি, এই উপায়ে তৈরি বিদ্যুৎ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য। এবং তুলনামূলক ভাবে সস্তা হবে।