প্রাথমিক ভাবে কথা ছিল, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির বছরেই ২০২২ সালে চালু হয়ে যেতে পারে দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পিছিয়ে যায় আরও এক বছর।
রেল সূত্রে খবর মিলেছিল, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বুলেট ট্রেন চালু হতে পারে। গত এপ্রিল মাসে রেল জানায়, মাত্র ২৬ শতাংশ কাজ হয়েছে প্রকল্পের।
বুধবার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়ে দিলেন, আর বছর দুয়েকের মধ্যেই ‘স্বপ্নপূরণের’ বুলেট ট্রেন চালু হয়ে যাবে। ২০২৬ সালের অগস্ট থেকেই দৌড় শুরু করবে গুজরাতের সুরাত থেকে বিলিমোরা পর্যন্ত। এই পথটি ৫০ কিলোমিটার লম্বা।
দুর্ঘটনা এড়াতে এই ট্রেনে কী কী ব্যবস্থা রয়েছে, সেই সম্পর্কেও কথা বলেন অশ্বিনী। রেলমন্ত্রী জানান, দু’টি ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকছে বুলেট ট্রেনে। যাতে চালকের কাছে আগেই সতর্কবার্তা পৌঁছে যায়।
গত জুন মাসে ওড়িশার বালেশ্বরে যে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এই ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী।
অশ্বিনী জানান, বুলেট ট্রেনে ‘গজরাজ’ ব্যবস্থাও থাকবে। রেললাইন দিয়ে হাতি, গরু পারাপার করার সময় অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। ‘গজরাজ’ প্রযুক্তিই তা আটকে দেবে বলে জানান রেলমন্ত্রী।
২০১৭ সালের অক্টোবরে গুজরাতের সাবরমতী স্টেশন থেকে ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
তখনই জানা যায়, প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে এই মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেন প্রকল্পে।
বুলেট ট্রেনের জন্য তিনটি ডিপো তৈরি হবে। একটি মহারাষ্ট্রে, দু’টি গুজরাতে। গুজরাতে একটি হবে সুরাত এবং অন্যটি সাবরমতীতে।
মুম্বই থেকে আমদাবাদ বুলেট ট্রেনে যেতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। এখন ভুজ এসি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে সময় লাগে ছ’ঘণ্টা ১০ মিনিট। প্রতি ঘণ্টায় এই ট্রেনের গতি থাকবে ৩২০ কিলোমিটার।
রেলসূত্রে জানা গিয়েছে, ঠাণেতে ২১ কিলোমিটার পথ জলের তলা দিয়ে যাবে বুলেট ট্রেনটি। ওই পথের নাম হবে মুম্বই-আমদাবাদ হাই-স্পিড রেল (এমএএইচএসআর) করিডোর। এই করিডোর তৈরির খরচ পড়েছে ১.০৮ লক্ষ কোটি টাকা।
প্রথমে লক্ষ্য ছিল, ২০২২ সালের মাঝামাঝিই শেষ হবে কাজ। কারণ, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি ২০২২ সালে। সে বছরের ১৫ অগস্টে বুলেট ট্রেনের উদ্বোধন করার কথা ভেবেছিল মোদী সরকার।
এই প্রকল্পের জন্য ভারতকে ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসাবে দিচ্ছে জাপান। অত্যন্ত কম সুদে, মাত্র ০.১ শতাংশ হারে। প্রকল্পের জন্য জাপান থেকে অন্তত ১০০ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং বিশেষজ্ঞ ভারতে চলে এসেছেন ২০১৭ সালের শেষেই।
প্রতি ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার বেগে চলে জাপানের বুলেট ট্রেন শিনকানসেন। পাঁচ দশক পেরিয়েও জাপানে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি এই ট্রেনে। রেল সূত্রে খবর, বুলেট ট্রেন প্রকল্পে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা ওই ট্রেনের প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। জাপানে গিয়েও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন অনেকে।
বুলেট ট্রেন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় হাই স্পিড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও তৈরি হয়েছে বরোদায়। রেল সূত্রে খবর, এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।