বিশ্বকাপের জেরে বিশ্ব জুড়ে এখন ফুটবল ঝড়। সম্প্রতি সেরা ষোলোর দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে জার্মানি। এ বার নতমস্তক হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চ ছাড়লেও ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪— চার বার ফুটবলে বিশ্বকাপে বিশ্ব সেরার তকমা পেয়েছে এই দেশ। তবে, ১৯৭৪ জার্মানি বিশ্বকাপ জিতলেও সেই বারের বিশ্বকাপে দুর্নামও জুটেছিল এই দেশের কপালে।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছিল পশ্চিম জার্মানি (তখনও বার্লিনের দেওয়াল ভাঙা হয়নি) এবং নেদারল্যান্ডস।
১৯৭৪ সালের ৭ জুলাই মিউনিখে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে দু’গোলে হারিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি।
তবে খেলা শেষে জার্মানির বিরুদ্ধে এক মারাত্মক অভিযোগ আনে নেদারল্যান্ডস। অভিযোগ ওঠে, বিশ্বকাপ ফাইনালের ঠিক আগে নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়রা যে হোটেলে ছিলেন সেখানে নগ্ন মহিলাদের পাঠিয়েছিল জার্মানির এক সংবাদপত্র।
দলের খেলোয়াড়দের যৌনতার ফাঁদে ফেলতেই জার্মানির ওই সংবাদপত্র এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগ ছিল, নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়দের টোপ দিয়ে মনঃসংযোগ নষ্ট করতে এই ঘৃণ্য কাজ করেছিল ওই সংবাদপত্র।
১৯৭৪-এ নেদারল্যান্ডসের ফুটবল দল প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠে। তাদের খেলা প্রথম ফাইনালের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই কাণ্ড ঘটানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ফাইনালের ঠিক পাঁচ দিন আগে জার্মানির সংবাদপত্র ‘বিল্ড’ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়দের হোটেলে নগ্ন যুবতীদের নিয়ে একটি সুইমিং পুল পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে এ-ও দাবি করা হয়, এই মহিলাদের জোগাড় করেছিলেন দলেরই এক খেলোয়াড়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যে সব মহিলার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়রা উদ্দাম যৌনতায় মেতেছিলেন, তাঁরা সকলেই স্থানীয়।
বিল্ড দাবি করে, প্রতিবেদনের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য তাঁদের কাছে ওই পুল পার্টির প্রচুর ছবি আছে। কিন্তু সেই ছবিগুলি কখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
ফাইনালের ঠিক আগে এক সাংবাদিক বৈঠকে নেদারল্যান্ডসের প্রশিক্ষককে এই প্রতিবেদন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রিনাস মাইকেলস জানান, এই প্রতিবেদনে সত্যি কথা লেখা নেই। পুরো বিষয়টি গুজব বলেও উড়িয়ে দেন তিনি।
মাইকেলস দাবি করেন, ফাইনালের আগে এই প্রতিবেদনের সাহায্যে ষড়যন্ত্র করেছে পশ্চিম জার্মানি। আর যদি মহিলারা এসেও থাকেন, তা ওই সংবাদপত্রের তরফে পাঠানো হয়েছিল বলেও দাবি করেন মাইকেলস।
খেলোয়াড়রাও এই গুজবকে অস্বীকার করেন। নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে বলে প্রমাণ করার জন্যই জার্মানি এই মিথ্যা কথা রটিয়েছিল বলেও দাবি করে নেদারল্যান্ডস।
১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডসের ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জোহান ক্রুইফ। তাঁর নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডস দলের পারফরম্যান্স ছিল দেখার মতো। তাঁকেও এই কেলেঙ্কারিতে জোড়া হয়।
যদিও ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে যে দাবি করা হয়েছিল, তার সত্যতা কখনও প্রমাণিত হয়নি।
অন্য দিকে, অভিযোগের তির ঘুরে যায় জার্মানির ওই সংবাদপত্রের বিরুদ্ধেই। নেদারল্যান্ডসের সমর্থকরা দাবি করেন, ওই সংবাদপত্রের তরফে যৌনতার জাল পাতা হয়েছিল। আর সেই কারণেই সব প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
তবে এই ঘটনায় পশ্চিম জার্মানির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জেতা পশ্চিম জার্মানি দলের অধিনায়ক ছিলেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। তিনিও এই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।
তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই ঘটনা অন্যতম বিতর্কিত হিসাবে এখনও পরিচিত। নেদারল্যান্ডসের সমর্থকেরা এর অভিঘাত এখনও ভুলতে পারেননি।