বিশ্বকাপ ফাইনালের মহারণে নামছে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা। রবিবারের রাতের ম্যাচে যতই লড়িয়ে দেওয়া হোক আলভারেজ় বা গ্রিজ়ম্যানকে, আসল বিশ্বের নজর কিন্তু মেসি এবং এমবাপের দিকে। ৩৫ বছরের লিওনেল মেসি অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তবে এখনও পর্যন্ত মেসি কোনও বিশ্বকাপ দিতে পারেননি আর্জেন্টিনাকে। অন্য দিকে ফ্রান্সের হয়ে ফাইনালে এমবাপের রয়েছে ‘তিনে তিন’ জয়ের নজির।
গত বারের বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স দলেও ছিলেন এমবাপে। ছিলেনই না শুধু, বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের নজর কেড়ে নেন। চার বছর গড়াতে না গড়াতেই এমবাপে এখন ফ্রান্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা। এবং এমবাপের ফ্রান্স আবারও ফাইনালে। জিতলে, পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের নজিরে পেলের ব্রাজিলকে ছোঁবে এমবাপের ফ্রান্স।
বিশ্বকাপে এমবাপেকে ফ্রান্সের ‘তুরুপের তাস’ বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। দেশের হয়ে যে ক’টি ফাইনালে এমবাপে খেলেছেন, তার একটি ম্যাচও ফ্রান্স হারেনি। কাতার বিশ্বকাপের মহারণেও যদি আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফ্রান্স কাপ জেতে, তা হলে এমবাপের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ থাকবে।
২০১৮-এর বিশ্বকাপে এমবাপের বয়স ছিল ১৮ ছুঁই ছুঁই। পুরো বিশ্বকাপে অনবদ্য খেলে ফ্রান্সকে ফাইনালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন তিনি। দুরন্ত খেলেন ফাইনালেও।
ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৪-২ গোলে জিতেছিল ফ্রান্স। ফ্রান্সের করা চারটি গোলের একটি গোল এমবাপে করেছিলেন। খেলার ৬৫ মিনিটে এসে তিনি ওই গোলটি করেন। বাকি তিনটির মধ্যে দু’টি করেছিলেন পোগবা এবং গ্রিজ়ম্যান। একটি সেমসাইড গোল করেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার মারিয়ো মাঞ্জুকিচ।
২০১৬ সালে উয়েফা ইউরোপীয় অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ফ্রান্স জিতেছিল। ফ্রান্সের সেই বিজয়ী দলে ছিলেন এমবাপে। ফাইনালে ইতালিকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ট্রফি জিতে নিয়েছিল ফ্রান্স। যদিও ফাইনালে এমবাপে কোনও গোল করেননি। তবে পুরো চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন এমবাপের পারফরম্যান্স ছিল দেখার মতো।
২০২১-এর উয়েফা নেশনস লিগের ফাইনালে স্পেনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এমবাপেরা।
উয়েফা নেশনস লিগের ওই ফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে দু’টি গোল করেছিল ফ্রান্স। যার মধ্যে একটি এমবাপে করেছিলেন। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে, ৮০ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি। অন্যটি করেছিলেন বেঞ্জেমা।
ক্লাবের হয়ে অবশ্য বলার মতো রেকর্ড এখনও নেই এমবাপের। ক্লাবের হয়ে খেলার সময় মোনাকোকে একটি এবং প্যারিস সঁ জঁ (পিএসজি)-কে দু’টি ফাইনাল জিতিয়েছেন তিনি। তাঁর খেলা ক্লাব রানার আপও হয়েছে তিন বার।
এমবাপে মোনাকো ছেড়ে পিএসজি-তে যোগ দেওয়ার পর ২০১৭-১৮, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ সালের ফ্রেঞ্চ কাপ, ‘ক্যুপ দা ফ্রান্স’ চাম্পিয়নশিপ জেতে পিএসজি।
এমবাপে পিএসজি-তে যোগ দেওয়ার পর ২০১৮-১৯ থেকে শুরু করে পিএসজি পর পর তিন বার ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ অর্থাৎ, ‘ট্রফি দা চ্যাম্পিয়নস্’ জেতে। ফ্রেঞ্চ লিগ কাপ জেতে দু’বার।
তবে এমবাপে দলে থেকেও ২০১৯-২০ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ২০১৮-১৯-এর ফ্রেঞ্চ কাপে ফাইনালে উঠে রানার আপ হয়েছিল পিএসজি। এমবাপে, মোনাকো-তে খেলার সময় ২০১৬-১৭-র লিগ কাপের ফাইনালে হেরে যায় সেই ক্লাব।
২০১৮-র বিশ্বকাপ থেকেই ফুটবল ‘সম্রাট’ পেলের সঙ্গে তুলনা শুরু হয়েছে এমবাপের। এমবাপে ১৮ বছরের কম বয়সি দ্বিতীয় খেলোয়াড় যিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছেন। প্রথম জন স্বয়ং পেলে। ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলের হয়ে পেলে দু’টি গোল করেছিলেন।
২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপে সেই এমবাপের মুখোমুখি হচ্ছেন মেসি। তবে এমবাপেকে যাঁর সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেই পেলে কিন্তু ২০১৯ সালে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর চোখে সেরা খেলোয়াড় মেসি। আবার মেসি এবং পেলে, দু’জনেরই জার্সি নম্বর ১০। দেশের হয়ে এমবাপেরও জার্সি নম্বর ১০।
বিশ্বকাপের মহারণে আর্জেন্টিনার রক্তচাপ বাড়ানো এমবাপেই আবার ক্লাব ফুটবলে এখন মেসির সতীর্থ। রবিবারের ফাইনালে কে জিতবেন, সে দিকেই মুখিয়ে বিশ্ব। (ছবি: রয়টার্স এবং এএফপি।)