Farmer's Protest

Farmer's Protest: সিঙ্ঘু সীমানায় কৃষক আন্দোলনের ১৮ মাস: ৫ জুন, ২০২০-৯ ডিসেম্বর, ২০২১

১১ ডিসেম্বর, শনিবারের মধ্যেই সিঙ্ঘু সীমানা থেকে সরে যাবেন কৃষকেরা। কেন্দ্রকে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁবু খুলে নেওয়া হচ্ছে। আপাতত।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৫১
Share:
০১ ১৩

অগর ইরাদা নেক হো, অউর হঁসলা বুলন্দ, তো চট্টান ভি ঝুক যাতা হ্যায়! উদ্দেশ্য সৎ হলে আর বুকে সাহস থাকলে পাহাড়েরও মাথা নোয়ানো যেতে পারে। সিঙ্ঘু সীমানায় বলছিলেন এক কৃষক। কথাটা বর্ণে বর্ণে সত্য। গত ১৮ মাসে দেশের কৃষকরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কী ভাবে শান্তিপূর্ণ গণ আন্দোলন করেও সরকারকে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা যায়।

০২ ১৩

কেন্দ্রপ্রণীত তিনটি কৃষি আইনের বিরোধিতা করে পথে নেমেছিলেন দেশের অন্নদাতা কৃষকেরা। দাবি ছিল, যে কোনও মূল্যে আইন প্রত্যাহার করতে হবে। টানা দেড় বছর রোদ, জল, হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় রাজধানীর সীমানায় আন্দোলন করেছেন তাঁরা। দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সরকারের সঙ্গে। শর্ত না মানা হলে ফিরে গিয়েছেন আন্দোলনস্থলে। কিন্তু অবস্থানে অনড় থেকেছেন।

Advertisement
০৩ ১৩

কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া ছিল না। শুরুর দিকে কিছু রাজনৈতিক দল সমর্থন যোগাতে এসেছিল ঠিকই। তবে আন্দোলন যত গড়িয়েছে, ততই তাদের সংখ্যা কমেছে। শেষের দিকে দেখা পাওয়া যায়নি পুরনো অনেক মুখেরই। কৃষকরা কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন।

০৪ ১৩

সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতৃত্বে আন্দোলন। বাম-অবাম নির্বিশেষে দেশের সবক’টি কৃষক ইউনিয়ন যোগ দিয়েছিল তাতে। সরকার অবশ্য তাদের নিরস্ত করতে কোনও কসুর করেনি।

০৫ ১৩

দেশের বিভিন্নপ্রান্তে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ চলছিল কেন্দ্রীয় সরকার নতুন তিন কৃষি আইনের প্রস্তাব আনার পর থেকেই। সেই বিক্ষোভ প্রথম সংগঠিত রূপ নিল ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। দেশের কৃষকদের দিল্লি অভিযানে আহ্বান করলেন পঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকেরা। হাজারো কৃষক এসে পৌঁছলেন রাজধানীর সীমানায়। প্রশাসন তাঁদের উপর জলকামান ব্যবহারের নির্দেশ দিল। আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর কাঁদানে গ্যাসও ছুড়ল দিল্লি পুলিশ।

০৬ ১৩

রোদেজলে মাঠে চষে বেড়ানো কৃষকদের অবশ্য তাতে ছত্রভঙ্গ করা যায়নি। দ্বিগুণ উৎসাহে পরের দিনের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন তাঁরা। প্রশাসনও ততোধিক সতর্ক হল। কৃষকদের ঠেকাতে সাত স্তরে ব্যারিকেড দেওয়া হল সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমান্তের রাস্তায়। প্রতিটি স্তরে ঢালাই করে রাস্তায় পুঁতে দেওয়া হল ধারালো পেরেক। তবু রোখা গেল না কৃষকদের। রাজধানীর সীমান্তেই তাঁরা বসে পড়লেন আন্দোলনের দাবিদাওয়া নিয়ে।

০৭ ১৩

তাঁবু খাটিয়ে তৈরি হল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনস্থল। সেখানে দিনে রাতে নিয়ম করে যোগ দিতে শুরু করলেন কৃষকেরা। তৈরি করা হল বক্তৃতামঞ্চও। সেখানে প্রতিদিন দেশের বিদ্বজ্জন থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আসতে শুরু করলেন। কৃষকদের সহানুভূতি জানাতে এলেন রাজনৈতিক নেতারাও।

০৮ ১৩

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবস্থান। খিদে-পেটে তো সম্ভব নয়। প্রথম প্রথম বাড়ি থেকে রুটি-ডাল-ঘি নিয়ে আসছিলেন কৃষকেরা। পরে আন্দোলনস্থলেই বসল লঙ্গরখানা। পঞ্জাব-হরিয়ানা থেকে তো বটেই, দিল্লি থেকেও আসতে শুরু করল খাবারের জোগান। কোনওদিন বেশি কোনওদিন কম। তবু তা দিয়েই আন্দোলনকারীদের দেড়টি বছর টিকিয়ে রেখেছিলেন লঙ্গরখানার কর্মীরা।

০৯ ১৩

অনেক সময়েই রাত কাটাতে হত ট্রেলারে। এক একটি ট্রেলারে আটজনের গা-ঘেঁষে ঘুম। শীতের রাতে ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে এর মধ্যেই শহিদ হলেন বহু কৃষক। কুয়াশা কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ির ধাক্কাতেও মারা গেলেন অনেকে। সরকারের খাতায় অবশ্য এই শহিদদের সংখ্যা লেখা নেই। কৃষকদের দেওয়া হিসেব বলছে— মোট ৭০০ জন মারা গিয়েছেন।

১০ ১৩

নাছোড় কৃষকদের বাধ্য হয়েই আলোচনার জন্য ডাকল কেন্দ্র। কৃষক নেতারা গেলেনও। কিন্তু সমাধানসূত্র পাওয়া গেল না। সমঝোতায় রাজি হলেন না কৃষকেরা। কেন্দ্রও জানিয়ে দিল, কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে না। এমন ১১ দফা কেন্দ্র-কৃষক বৈঠক ব্যর্থ হল। তবু কৃষকরা হাল ঢাড়লেন না। ছাড়লেন না আন্দোলনও।

১১ ১৩

শেষে হার মানল কেন্দ্রই। পাহাড় মাথা নোয়ালো। গত ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে। দেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে ব্যর্থতার কারণ জানাতে গিয়ে মোদী বললেন, তাঁরই দোষ যে তিনি কিছু কৃষককে কৃষি আইনের উপকারিতা বোঝাতে পারেননি।

১২ ১৩

মোদীর বিবৃতির পর সিঙ্ঘু সীমানায় উৎসবে মাতলেন কৃষকেরা। তবে জানিয়ে দিলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে তখনই, যখন মোদীর প্রতিশ্রুতি কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হবে। এ ছাড়াও কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, শহিদ কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি, বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী প্রত্যাহার, মামলা প্রত্যাহার-সহ আরও ছ’টি দাবি পেশ করা হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। সেগুলোও মেটানোর কথা বলা হয়েছিল।

১৩ ১৩

৯ ডিসেম্বর কৃষকদের সেইসব দাবিও মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। কৃষিসচিবের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রস্তাব কিসান মোর্চার কাছে পাঠানো হয়েছে। তাতে কৃষকদের দাবি মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় কৃষক সংগঠনগুলি। তার ভিত্তিতে কৃষকরা সিঙ্ঘু সীমান্ত থেকে খুলে নিচ্ছেন তাঁবু। আপাতত। ১১ ডিসেম্বর, শনিবারের মধ্যেই সিঙ্ঘু সীমানা থেকে সরে যাবেন কৃষকেরা।

ছবি: রয়টার্স ও পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement