যে কোনও সাধারণ মানুষকে তারকা তৈরি করা ক্ষমতা রয়েছে সমাজমাধ্যমের। শুধু তা-ই নয়, সমাজমাধ্যম এই তারকাদের রোজগারের সুযোগও করে দেয়। এনে দেয় প্রভাব-প্রতিপত্তি। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের কয়েক জন তারকার বার্ষিক আয় কোটি কোটি টাকা। বিশেষ করে ইউটিউব তারকাদের আকাশছোঁয়া আয় দেখলে যে কোনও মানুষ হতবাক হয়ে যাবেন।
কিন্তু কী ভাবে এত টাকা উপার্জন করেন ইউটিউবারেরা? কোনও ইউটিউবারের যদি কমপক্ষে হাজার জন সাবস্ক্রাইবার থাকে এবং তাঁর ভিডিয়ো যদি চার হাজার ঘণ্টা দেখা হয়, তা হলে তাঁকে টাকা দেওয়া শুরু করে ইউটিউব।
সাবস্ক্রাইবার এবং ভিডিয়ো দেখার সময় বাড়লে বৃদ্ধি পায় টাকার পরিমাণও। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচার করেও বহু টাকা রোজগার করেন ইউটিউবারেরা। বেশির ভাগ ইউটিউবারেরই আয়ের ৫০ শতাংশ আসে বিজ্ঞাপন থেকে। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করেন ইউটিউবারেরা।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কী ভাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন ভারতের জনপ্রিয় ইউটিউবারেরা? তাঁদের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাই বা কত?
এই তালিকায় প্রথমেই নাম রয়েছে জনপ্রিয় ইউটিউবার গৌরব চৌধরির। তবে তিনি বেশি পরিচিত ‘টেকনিক্যাল গুরুজি’ নামে। গৌরবের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। কেবল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংক্রান্ত ভিডিয়ো তিনি ইউটিউবে আপলোড করেন।
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার গৌরব একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় কোডিং শেখেন। ২০১২ সালে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে চেয়েছিলেন গৌরব। কিন্তু তখন সম্ভব না হওয়ায় ২০১৫ সালে তিনি এই চ্যানেল শুরু করেন। ইউটিউব থেকে মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আয় করেন গৌরব।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইউটিউবার ভুবন বাম। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতশিল্পী হতে চাইতেন ভুবন। তবে বেশ কয়েকটি রিয়্যালিটি শো থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গায়ক হওয়ার জেদে বেশ কয়েক দিন দিল্লির বিভিন্ন রেস্তরাঁয় গান গাইতে শুরু করেন ভুবন।
এক সাংবাদিকের উপর ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিয়ো বানিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান ভুবন। সেই ভিডিয়ো তাঁকে ভারত এবং পাকিস্তান— উভয় দেশেই জনপ্রিয় করে তোলে। এর পর তিনি ‘বিবি কি ভাইনস’ নামে চ্যানেল শুরু করে ইউটিউব-যাত্রা শুরু করেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি ভুবনকে। বর্তমানে ইউটিউবে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা আড়াই কোটিরও বেশি।
অমিত ভড়ানা। হরিয়ানার এই জনপ্রিয় ইউটিউবার কলেজে পড়ার সময় নিজের রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজার মজার ভিডিয়ো তৈরি করতে শুরু করেন। ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এর পর ২০১২ তিনি ইউটিউবে যাত্রা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।
পাঁচ বছরের প্রচেষ্টার পর ২০১৭ সালে অমিতের ভিডিয়ো ভাইরাল হতে শুরু করে। ২০১৮ সালে ইউটিউবে অমিতের একটি ভিডিয়ো সারা বিশ্বের ১০টি সেরা ভিডিয়োর তালিকায় জায়গা করে নেয়। বর্তমানে তাঁর চ্যানেলে ২ কোটি ৪৩ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
মাত্র ১০ বছর বয়সে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলেছিলেন অজয় নাগের ওরফে ‘ক্যারি মিনাতি’। ফুটবল এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিয়ো তিনি ইউটিউবে আপলোড করতেন। কিন্তু তখন তিনি ততটা জনপ্রিয় হননি। সেই সময়ে, তাঁর চ্যানেলের নাম ছিল ‘অ্যাডিক্টেড এ১’।
এর পর অজয় ‘ক্যারি দেওল’ নামে আরও একটি চ্যানেল শুরু করেন। যেখানে অভিনেতা সানি দেওলকে নকল করা শুরু করেন তিনি। পরে চ্যানেলের নাম বদলে রাখেন ‘ক্যারি মিনাতি’। সেই চ্যানেলে তিনি ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিয়ো তৈরি করে আপলোড করতে শুরু করেন। বর্তমানে ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। সম্প্রতি অজয় দেবগনের ‘রানওয়ে ৩৪’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন ক্যারি। ইউটিউব থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি আয় করেন তিনি। মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি।
ইউটিউবার আশিস চঞ্চলানি চাইতেন অভিনেতা হতে। স্কুলে শিক্ষকদের গলা নকল করে তিনি বন্ধুদের মনোরঞ্জন করতেন ছোটবেলায়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অভিনেতার গলাও নকল করতেন। অভিনয়ের ‘ভূত’ তাড়াতে আশিসকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর বাবা।
তবে আশিস অভিনেতা হওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়েননি। নিজের আরও দক্ষতা বাড়াতে তিনি একটি স্টুডিয়োতে অভিনয় শিখতে যান। এর পর ২০১৪ সালে কলেজে পড়ার সময়েই একটি ইউটিউব ভিডিয়ো দেখে চ্যানেল খোলার সিদ্ধান্ত নেন আশিস। ওই বছরই তিনি তাঁর প্রথম ইউটিউব ভিডিয়ো আপলোড করেন।
বর্তমানে আশিস এক জন সফল ইউটিউবার। তিনি এতটাই সফল যে, ‘মেন ইন ব্ল্যাক ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি শহিদ কপূর এবং অক্ষয় কুমারের মতো বেশ কয়েক জন ভারতীয় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছেন। ইনস্টাগ্রামে তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি।
আশিসের মতো ইউটিউবার হর্ষ বেনীয়ালও ছোটবেলা থেকেই অভিনেতা হতে চাইতেন। কলেজে পড়াশোনা করার সময় ‘ব্রেন হিউমর’ নামে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করেন। ধীরে ধীরে তাঁর তৈরি করা ভিডিয়ো এবং ফটো ভাইরাল হতে শুরু করে। এর পর তিনি ইউটিউবেও একটি চ্যানেল খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন তাঁর বাবা-মা।
দৈনন্দিন জীবন এবং সামাজিক পরিস্থিতির উপর ভিডিয়ো বানিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান হর্ষ। ইউটিউবে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। টাইগার শ্রফ অভিনীত ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার ২’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
ফটোগ্রাফার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সন্দীপ মাহেশ্বরী। ‘ইমেজবাজার’ নামে একটি ছবির সংস্থা খোলেনও তিনি। কিন্তু এর পর ঠিক করেন, তিনি এমন কিছু করবেন যাতে মানুষের মনে অনুপ্রেরণা জাগানো যায়। তাই অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা (মোটিভেশনাল স্পিকার) হিসাবে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
শীঘ্রই তাঁর তৈরি করা ভিডিয়োগুলি ইউটিউবে আপলোড করতে শুরু করেন সন্দীপ। অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হিসাবে সারা দেশ জুড়ে নাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। তাঁর ভিডিয়োগুলিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ইউটিউবে সন্দীপের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা কোটির বেশি। তিনি ভারতের অন্যতম ধনী ইউটিউবারও বটে।