বড়দিন হোক বা নতুন বছরের উদ্যাপন, যে কোনও উৎসবেই একই বায়না পুত্রের। অন্য কোনও পশু নয়, সে পোষ মানাতে চায় অক্টোপাসকে। দেখতে দেখতে আট বছরের জন্মদিনও পার হয়ে যায় তার। তবুও ইচ্ছা বদল হয় না তার। তাই পুত্রের শখ পূরণ করতে জন্মদিন উপলক্ষে অক্টোপাসই উপহার দিলেন তরুণ চিকিৎসক। কিন্তু এই ঘটনার পরেই বিপদে পড়লেন তিনি।
৩৬ বছরের ক্যামেরন ক্লিফোর্ড পেশায় দন্ত্যচিকিৎসক। আমেরিকার ওকলাহামার বাসিন্দা তিনি। তাঁর পুত্র ক্যালের যখন তিন বছর বয়স, তখন থেকেই অক্টোপাস নিয়ে আগ্রহ জন্মেছিল তার।
তিন বছর বয়স থেকে বাড়িতে অক্টোপাস পুষতে চাইত ক্যাল। ক্যামেরন ভেবেছিলেন, পুত্রের শৈশবের এই ইচ্ছা ক্ষণিকের। কয়েক দিন পর আবার নতুন কোনও ইচ্ছা দানা বাঁধবে তার। কিন্তু আট বছরে পা দিয়েও ক্যালের ইচ্ছার কোনও পরিবর্তন হয় না।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যামেরন জানান, দিনের পর দিন অক্টোপাস পোষার ইচ্ছা জাঁকিয়ে বসেছিল ক্যালের। তিনি বলেন, ‘‘বড়দিন থেকে শুরু করে জন্মদিন— যে কোনও উৎসবেই আমাদের কাছে ক্যাল একটিই জিনিস চাইত— তা হল অক্টোপাস। তাই ও যখন ন’বছরে পা দিল, তখন জন্মদিন উপলক্ষে ওকে অক্টোপাস উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’’
অক্টোপাস কিনতে বাড়ির কাছাকাছি একটি অ্যাকোয়ারিয়াম সেন্টারে যোগাযোগ করেন ক্যামেরন। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে সেখান থেকে ‘ক্যালিফর্নিয়া টু-স্পট’ প্রজাতির একটি স্ত্রী অক্টোপাস কিনে বাড়ি নিয়ে যান ক্যামেরন।
স্ত্রী অক্টোপাসের নাম রাখা হয় টেরান্স। অক্টোপাস উপহার পাওয়ার পর যারপরনাই খুশি হয় ক্যাল। কিন্তু কয়েক দিন পর অনেকটাই ওজন বেড়ে যায় টেরান্সের।
টেরান্সের শারীরিক বৃদ্ধি লক্ষ করে অবাক হয়ে যান ক্যামেরন। কিছু দিন পার হতে না হতেই ক্যামেরন দেখেন একসঙ্গে ৫০টি ডিম পেড়েছে টেরান্স। তা দেখেই চমকে যান ক্যামেরন।
একসঙ্গে ৫০টি অক্টোপাস কী ভাবে রাখবেন, তা চিন্তা করেই ভয় পেয়ে যান ক্যামেরন। সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। বিশেষজ্ঞেরা জানান, সাদা পুঁতির মতো ডিমগুলি থেকে প্রথমে সাদা কোষ তৈরি হয়। তার পর সেখান থেকে জন্ম নেয় শিশু অক্টোপাসেরা। তবে টেরান্সের ক্ষেত্রে নাকি সে সুযোগ কম বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞেরা।
বিশেষজ্ঞেরা জানান, সব ডিম ফুটে শিশু অক্টোপাসের জন্ম নেবে না। এমনকি কয়েকটি ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনোর পর মারা যাবে টেরান্স। এমনটাই ক্যামেরনকে জানান সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা।
ক্যামেরন জানান, টেরান্সের পুরো যাত্রাই ছবি এবং ভিডিয়োর মাধ্যমে ধরে রাখতে শুরু করেন তিনি। এমনকি ক্যামেরন সমাজমাধ্যমেও সেগুলি পোস্ট করতে শুরু করেন।
সাক্ষাৎকারে ক্যামেরন বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কী করব। ক্যালের সব কিছু জুড়ে টেরান্স রয়েছে। আমি নিজেই ওকে উপহার দিয়েছিলাম। এখন আমি মুখ ফিরিয়ে দিতে পারি না।’’
টেরান্স এবং তার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশেষ ধরনের ‘সল্ট ওয়াটার’ অ্যাকোয়ারিয়াম কেনেন ক্যামেরন। তার পাশাপাশি জল সরবরাহের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় খাবারও অনলাইন মাধ্যম থেকে কেনেন তিনি। ক্যামেরন জানান, প্রায় এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ হয় তাঁর।
৫০টি শিশু অক্টোপাসের জন্য ৫০টি আলাদা আলাদা অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরি করেন ক্যামেরন। এতগুলি অ্যাকোয়ারিয়াম রাখার কারণে বাড়িরও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয় ক্যামেরনের। বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। সব মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায় তাঁর।
টেরান্স ডিম পাড়ার দু’মাসের মধ্যে ২৫টি শিশু অক্টোপাস জন্ম নেয়। সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা অনুমান করেছিলেন যে ডিম ফোটার পরেই মারা যাবে টেরান্স। ক্যালেন্ডারে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পার হয়ে গিয়েছে। এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে টেরান্স।
সারা বাড়ি জুড়ে অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরি করে সমাজমাধ্যমেও নজর কেড়েছেন ক্যামেরন। টিকটক মাধ্যমে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা চার লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।