জন্মের সময় পরিবারের লোকেরা তাঁর নাম রেখেছিলেন অন্তিম। বাংলায় যার অর্থ শেষ। অর্থাৎ পরিবার চেয়েছিল আর যেন মেয়ে সন্তান না হয়।
পরিবারের বাকি তিন সন্তানই মেয়ে। খুব আশা করেছিলেন যে চতুর্থ সন্তান ছেলে হবে। কিন্তু আবারও জন্ম হল কন্যাসন্তানের। ফলে তাঁর জন্ম হওয়ার পরই আনন্দের বদলে একটা বিষণ্ণতার আবহ তৈরি হয়েছিল পরিবারে। সেই চতুর্থ সন্তানের নাম রাখা হল অন্তিম।
যে কন্যাসন্তানের জন্মের সময় এত বিষণ্ণতা, এত তাচ্ছিল্য, সেই সন্তানই যে এক দিন পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে, তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি পঙ্ঘল পরিবার।
নাম অন্তিম পঙ্ঘল। বয়স ১৮। হরিয়ানার মহিলা কুস্তিগীর। দেশের প্রথম মহিলা কুস্তিগীর হিসাবে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনার পদক জিতেছেন।
হরিয়ানার হিসার জেলার ভগানা গ্রামে পঙ্ঘল পরিবারে জন্ম অন্তিমের। বাবা রামনিবাস পঙ্ঘল এবং মা কৃষ্ণা কুমারী।
দেশের প্রথম মহিলা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ীর নাম অন্তিম কেন, তার নেপথ্যেও রয়েছে একটি কাহিনি।
প্রসঙ্গত, যে বগানা গ্রামে জন্ম অন্তিমের, সেই গ্রামের একটি প্রথা রয়েছে। আর সেই প্রথা হল, যে পরিবারে কন্যাসন্তানের সংখ্যা বেশি, সেই পরিবারে শেষ কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয় কাফি বা অন্তিম। পঙ্ঘল পরিবারের ইচ্ছা ছিল শেষ সন্তান যেন ছেলে হয়।
চতুর্থ সন্তানও মেয়ে হওয়ায় পঙ্ঘল পরিবারের অন্য সদস্যরা অখুশি হলেও, অন্তিমের বাবা-মা কিন্তু বরাবরই তাঁকে আগলে রেখেছেন। তাঁর সমস্ত ইচ্ছাপূরণে সমর্থন করেছেন।
এক সংবাদমাধ্যমকে অন্তিমের মা কৃষ্ণা কুমারী বলেন, “মেয়ের নাম অন্তিম রাখা হয়েছে এই কারণে যাতে পরবর্তীতে কোনও কন্যাসন্তানের জন্ম না হয়। কেননা, আগেই তিন মেয়ে সন্তান রয়েছে। কিন্তু অন্তিমকে আমরা সব সময় আগলে রেখেছি।”
কৃষ্ণা কুমারী আরও বলেন, “বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার আগে মেয়ে বলে গিয়েছিল, বাড়িতে ফিরবে সোনার পদক নিয়েই। কথা রেখেছে।”
অন্তিমের তিন দিদি সরিতা, মীনু এবং নিশাও অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে যুক্ত। অন্তিমের বড়দি সরিতা জাতীয় স্তরের কবাডি খেলোয়াড়।
অন্তিমদের পরিবারের পাঁচ একর জমি রয়েছে। সেখানে তাঁর বাবা চাষ করেন। বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য মায়ের সঙ্গে সেখানে যেতেন। যাতায়াতের পথে গ্রামের একটি আখড়ায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কুস্তি করতে দেখতেন অন্তিম। আর সেখান থেকেই একটু একটু করে কুস্তির প্রতি তাঁর আকর্ষণ জন্ম নেয়।
মেয়ের কুস্তির প্রতি টান আছে বোঝার পর রামনিবাসও অন্তিমকে একটি আখড়ায় ভর্তি করিয়ে দেন। অন্তিম বলেন, “আমি সব সময়ই কুস্তি করতে চাইতাম। বাবাকে খাবার দিতে যাওয়া-আসার সময় গ্রামের ছেলেমেয়েদের কুস্তি করতে দেখে বেশ ভাল লাগত।”
অন্তিম আরও বলেন, “বাবা আমাকে কোনও দিন অন্তিম নামে ডাকেনি। কিন্তু সব সময় আমাকে বলত যে, তোর জন্য আমি এমন কিছু করতে চাই যেটা আগে কেউ কখনও করেনি এই গ্রামে।”
হিসারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য মেয়েকে একটি আখড়ায় ভর্তি করিয়েছিলেন রামবিলাস। ২০১৫ সাল থেকে কোচ রোশনী দেবীর কাছে প্রথম কুস্তি শেখা শুরু করেন অন্তিম।
২০১৮ সালে জাতীয় স্তরে অনূর্ধ্ব-১৫ প্রতিযোগিতায় জেতেন অন্তিম। তার পর জাপানে অনূর্ধ্ব-১৫ এশিয়ান রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। ২০২০-তে ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন তিনি। তার পর ২০২২-এ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা।