যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। এই প্রবাদবাক্যের সত্যতা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন ইন্দ্রা নুয়ী, ফাল্গুনী নায়ার, কিরণ মজুমদার শ, রোশনি নাদাররা। ভারতীয় বণিক মহলে এই নারীদের রাজ্যপাট মুকেশ অম্বানী, গৌতম আদানিদের থেকে নেহাত কম নয়! অন্দরমহলে আটকে না থেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো নিজেদের মেলে ধরেছেন দেশের এই মহিলা ধনকুবেররা।
একটা সময় ছিল যখন কোনও সংস্থার সিইও, উদ্যোগপতি, সিএফও পদে কোনও মহিলাকে ভাবাই যেত না। বরাবরই এই পদগুলি ছিল পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। তবে সে সব এখন অতীত। পুরুষদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে সংস্থার শীর্ষ পদে নিজেদের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন নারীরাও। দেশের সেই নারীশক্তির কথাই তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
প্রথমেই কথা বলা যাক, কিরণ মজুমদার শ-কে নিয়ে। বায়োকন লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠাতা তিনি। দেশের অন্যতম মহিলা ধনকুবের তিনি। ১৯৭৮ সালে নিজের সংস্থা তৈরি করেছিলেন কিরণ। সেই সংস্থার হাত ধরেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন।
বাণিজ্য পত্রিকা ‘ফোর্বস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়ের নিরিখে কিরণের বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাই (যারা জৈব ওষুধ তৈরি করে) ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
১৯৮৯ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পেয়েছেন কিরণ। ২০০৫ সালে পান ‘পদ্মভূষণ’। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণও আকাশছোঁয়া। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, কিরণের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
কিরণের মতোই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন উরভি এ পিরামল। স্বামী অশোক পিরামলের প্রয়াণের পর বণিক মহলে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেন উরফি। সালটা ১৯৮৪। তার পর থেকেই একাই ব্যবসা সামলাচ্ছেন অশোক পিরামল গ্রুপের চেয়ারপার্সন।
ব্যবসা সামলাতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতাও সামলাতে হয়েছে উরভিকে। যেমন, ২০০৫ সালে পরিবারে ভাঙনের পর ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। সেই ক্ষতে মেরামত করে ৬ বছরের মধ্যেই ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেন তিনি।
‘বিজ়নেস ওয়ার্ল্ড’ ম্যাগাজিন সূত্রে খবর, ২০২২ সাল পর্যন্ত উরভির বার্ষিক পারিশ্রমিক ছিল ১০ কোটি টাকা।
এইচসিএল টেকনোলজিসের শীর্ষে প্রথম মহিলা হিসাবে দ্যুতি ছড়িয়েছেন রোশনি নাদার মলহোত্র। ব্যবসায়িক পরিবারে বেড়ে ওঠা তাঁর। তাই পরবর্তী সময়ে পারিবারিক ব্যবসাতেই নিজের হাত পাকিয়েছেন রোশনি। এইচসিএলের প্রতিষ্ঠাতা শিব নাদারের একমাত্র কন্যা রোশনি।
২০২০ সালে ‘ফোর্বস’-এর বিশ্বের ১০০ জন ক্ষমতাবান মহিলাদের তালিকায় ৫৫তম স্থানে জায়গা পেয়েছিলেন রোশনি। দিল্লিতে তাঁর বেড়ে ওঠা। পড়েছেন বসন্ত ভ্যালি স্কুলে। পরে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক পাশ করেন। কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ পাশও করেন তিনি।
‘ইকোনমিক টাইমস’ সূত্রে খবর, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী রোশনির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
দেশের অন্যতম মহিলা ধনকুবের হলেন ফাল্গুনী নায়ার। জনপ্রিয় প্রসাধনী সামগ্রীর সংস্থা ‘নাইকা’র প্রতিষ্ঠাতা তিনি। রোশনির মতো ফাল্গুনীর পরিবারের সঙ্গেও ব্যবসার যোগ রয়েছে। তাঁর বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী।
‘বিজ়নেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী ফাল্গুনীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
ভারতীয়-আমেরিকান ইন্দ্রা নুয়ীও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নিজস্ব ছাপ রেখেছেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পেপসিকো সংস্থার সিইও পদে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ১৯৯৪ সালে এই সংস্থায় যোগ দেন তিনি। ২০০৬ সালে সংস্থার সিইও হন। ২০১৮ সালের ৬ অগস্ট সিইও পদে ইস্তফা দেন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব সামলেছেন।
ইন্দ্রার আমলেই সংস্থার বিক্রি বেড়েছিল ৮০ শতাংশ। তাঁরও সম্পদের পাহাড়। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্দ্রার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।