‘ড্রাগন’ নিয়ে মানুষের আগ্রহ বহু দিনের। এই আগ্রহের জন্যই ‘লর্ড অব দ্য রিংস’, ‘হবিট’, ‘হ্যারি পটার’-সহ বিভিন্ন ছবিতে ড্রাগনের উপস্থিতির জন্য দর্শকের আরও বেশি করে আকর্ষণ করে।
সম্প্রতি ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’ নামে একটি সিরিজের মুক্তির পরে তা নিয়ে দর্শকরা মেতে রয়েছেন। তবে, মানুষের মনে একটি প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে— সত্যিই কি ড্রাগনের অস্তিত্ব রয়েছে?
সুমেরীয়, বৌদ্ধ, চিন, জার্মানের প্রাচীন গ্রন্থে এক ধরনের প্রাণীর উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও স্পষ্ট ভাবে বলা নেই যে, সেই প্রাণীগুলি আদতেও ড্রাগন নামের কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এমনকি, এই নামেরও উল্লেখ করা হয়নি কোনও পুরাণেই।
রহস্যজনক ভাবে কোনও জায়গায় আগুন লেগে গেলে লোকে ভাবতেন, ড্রাগন তার মুখ দিয়ে আগুন বের করে এই জায়গাগুলি পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে।
চিন দেশের পৌরাণিক কাহিনিতে ড্রাগনের মতো এক ধরনের প্রতীক ব্যবহার করা হত। রাশিচক্রেও এই চিহ্নের ব্যবহার রয়েছে।
চিন দেশের লোকেরা মনে করতেন, এই ধরনের একটি জন্তু জলের তলায় থাকত।
বুদ্ধির দিক দিয়ে তুখোড় ছিল এরা। অর্ধ-দেবতা বলেও মানতেন অনেকে।
চিন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন রাজবংশে নিজেদের পরিচয় দিতে এই প্রতীক ব্যবহার করা হত।
কিন্তু পশ্চিমী দেশের ভাবনার মিশ্রণের ফলে ড্রাগনকে ‘শয়তান’-এর সঙ্গে তুলনা করা হতে থাকে।
কিছু কিছু পুরাণে অবশ্য ড্রাগনকে শক্তির প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
ব্যাবিলনীয় একটি পুরাণগ্রন্থে ড্রাগনকে ‘তিয়ামত’ নামের এক দেবীর সন্তান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই গ্রন্থ অনুযায়ী, তিয়ামত দেবীর ১১টি সন্তান ছিল। কিন্তু তাদের যে ‘ড্রাগন’ বলা হত, তা কোথাও উল্লেখ ছিল না।
প্রতীচ্য সংস্কৃতিতে ‘ড্রাগন’ বলতে ডানা ও শিংযুক্ত চারপেয়ে এক বিশালাকার জন্তুকে বর্ণনা করা হয়েছে। এই জন্তুরা মুখ দিয়ে আগুন বের করতে পারত বলে উল্লেখ রয়েছে।
আবার, প্রাচ্য সংস্কৃতির পৌরাণিক কাহিনি ঘাঁটলে জানা যায়, সাপের মতো দেখতে এই জন্তুটির চারটি পা থাকলেও তাদের কোনও ডানা ছিল না।
নৃতত্ত্ববিদ ডেভিড ই জোনসের মতে, পুরাকালে ১০০ জনের মধ্যে ৩৯ জন সাপ দেখে ভয় পেত। তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। যে অঞ্চলে সাপের অস্তিত্বই বিরল, সেখানেও সাপের ভয়ে বাচ্চারা জড়সড় হয়ে থাকত।
ইন্দো-ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে কথিত আছে, এক বজ্রদেবতা সাপের মতো দেখতে বিশালাকার চেহারার এক জন্তুকে মেরেছিল। সেই জন্তুটির একটি নয়, তিন তিনটি মাথা। এই অদ্ভুত প্রাণীটিই নাকি ড্রাগন।
জাপানের পুরাণে কোথাও কোথাও ড্রাগনকে জলের দেবতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবার, ভিয়েতনামে ড্রাগনকে রাজকীয়তার প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।
তবে, জীবাশ্ম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সময় বিশেষে মাটি খুঁড়ে এমন জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে, যা গবেষণা করে জানা যায়, এই জীবাশ্ম ডাইনোসরের নয়।
আকারে ডাইনোসরের চেয়েও বিশাল। তবে, প্রত্নতত্ত্ববিদের ধারণা, প্রাচীন কালে এমন জন্তুর অস্তিত্ব ছিল, যা আকারে বিশাল। বড় আকারের কুমির এর সমগোত্রীয়।
ড্রাগনের যে প্রতীক ব্যবহার করা হয়, সংস্কৃতি বিশেষে তার সংজ্ঞা আলাদা। তবে, কি সব রূপকথাই মিথ্যা? ড্রাগনের অস্তিত্ব নিয়ে বহু প্রশ্ন এখনও রয়েই গিয়েছে।