১৯৯৯ সাল। আমেরিকার আলাবামা অঞ্চলের ঘটনা। সন্দেহের বশে তিন জন সহকর্মীকে খুন করেন পেশায় ট্রাকচালক অ্যালান ইউজিন মিলার।
অ্যালান নাকি সমকামী।কর্মক্ষেত্রে বাকি সহকর্মীদের মধ্যে অ্যালান সম্পর্কে এই মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিন জন। রাগে তিন কর্মীকেই মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন অ্যালান।
টেরি জার্ভিস, লী হোল্ডব্রুকস এবং স্কট ইয়ান্সি— তিন জনের বুকে গুলি করে খুন করেন অ্যালান। খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা ওঠায় সেই মামলার রায় বের হয় চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর।
আদালতের তরফে অ্যালানকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এই শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিও ভয়ানক।
নির্দেশ দেওয়া হয়, অ্যালানের শরীরে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে তাঁকে মেরে ফেলা হবে।
ইঞ্জেকশন নিতে ভয় পান অ্যালান। তাই অন্য কোনও পদ্ধতিতে তাঁকে হত্যা করার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
কিন্তু অ্যালানের অনুরোধ রাখা হয়নি। বরং মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ আহারে যেন কোনও ত্রুটি না থাকে, সে দিকে বেশি নজর রেখেছিলেন এগজিকিউশন দলের সদস্যরা।
ইঞ্জেকশন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে অ্যালানকে মাংসের লোফ, চাকওয়াগন স্টেক, কমলালেবুর রস, চিজ, আপেল, আলু, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ম্যাকারনি-সহ আরও অনেক কিছু খাইয়েছিলেন তাঁরা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সেই দিন রাত ১২টার আগে অ্যালানকে শাস্তি দিতে হত।
নির্দেশ দেওয়ার পর ১২টা বাজতে মাত্র তিন ঘণ্টা বাকি ছিল। তাই অ্যালানকে আরও বেশি করে খাওয়ানো হচ্ছিল।
পরে তাঁকে চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয় ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁর শরীরে সূচ ফোটানোর জন্য শিরা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বহু চেষ্টা করার পরেও শিরা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন সকলে। এ দিকে সাজার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় অ্যালানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অ্যালান জানান, ২০১৮ সালে তিনি নাইট্রোজেন হাইপক্সিয়া পদ্ধতির মাধ্যমে মৃত্যু চেয়েছিলেন। এই পদ্ধতিতে অক্সিজেনের বদলে শুধু নাইট্রোজেন গ্যাস ভর্তি বদ্ধ ঘরে কোনও মানুষকে আটকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়।
অ্যালানের দাবি, হেফাজতে থাকাকালীন সেলের ঘর থেকেই একটি কাগজে লিখে তিনি এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
কিন্তু আলাবামা জেলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, অ্যালানের তরফে এরকম কোনও অনুরোধ পাননি তাঁরা।
পুলিশের দাবি, মৃত্যুদণ্ড এড়াতে নানা ছলচাতুরি করতেন অ্যালান।
বর্তমানে অ্যালান আবার জেলে তাঁর আগের ঠিকানায় ফিরে গিয়েছেন। পরবর্তী মামলার রায় না আসা পর্যন্ত হেফাজতেই থাকবেন তিনি।