প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ববাসী এতই এগিয়ে যে, এখন হাতের মুঠোয় অনেক কিছু পাওয়া যায়। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোক্তারা প্রাত্যহিক জীবন আরও সহজ করে তোলার ব্যাপারে ব্রতী হয়েছেন।
কিন্তু এক সময় যে অভিনব উদ্যোগ নিয়ে এই উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সংস্থা নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন, সেই সংস্থাগুলি থেকেই তাঁদের বের করে দেওয়া হয়।
কখনও উদ্যোক্তাদের আচরণে সংস্থার বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা অসন্তুষ্ট হয়ে থাকেন। আবার কোনও ক্ষেত্রে তাঁরা এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, যার পরিণতিতে সংস্থার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। এর ফলে ডিরেক্টর বোর্ডের সদস্যরা উদ্যোক্তাকেই সংস্থা থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নেন।
‘অ্যাপল’ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও স্টিভ জবস তাঁর বুদ্ধিমত্তার জোরেই সংস্থাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্টিভের মেজাজ সব সময় ঠিক থাকত না। ১৯৮০ সালে ‘অ্যাপল’ সংস্থার বোর্ডের সদস্যরা আলোচনা করেন, স্টিভ নিজের দায়িত্ব ঠিক মতো সামলাতে পারবেন না।
কারণ, তাঁর বয়স তুলনামূলক ভাবে কম এবং তিনি নাকি খুব সহজে রেগেও যেতেন। তাই স্টিভের পরিবর্তে তৎকালীন ‘পেপসি’ সংস্থার কার্যনির্বাহী জন স্কালিকে সিইও পদে নিযুক্ত করেন। বহু মতানৈক্যের পর স্টিভ আবার ‘অ্যাপল’-এ ফিরে আসেন।
২০০৯ সালে ‘উবর’ সংস্থার প্রতিষ্ঠা। তবে, গত পাঁচ বছর ধরেই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিন দিন বেড়েই চলছিল। কখনও যাত্রীরা গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, কখনও বা চুরির অভিযোগ।
এই সমস্যার সমাধান করতে ২০১৭ সালে ‘উবর’ সংস্থার বোর্ডের সদস্যরা ট্রাভিস কালানিককে কাজ ছাড়ার জন্য আবেদন জানান। কালানিকের ছেড়ে যাওয়ার পরে এই সংস্থা ধীরে ধীরে তার হারানো জমি ফিরে পেয়েছে।
ইভান উইলিয়ামস, নোয়া গ্লাস, জ্যাক ডর্সি এবং বিজ স্টোন ‘টুইটার’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ২০০৬ সালের দিকে সিইও পদে কর্মরত ছিলেন জ্যাক ডর্সি নিজেই। কিন্তু তিনি বোর্ডের বাকি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না।
তাঁর ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। তাই ২০০৮ সালে ইভান উইলিয়ামস জ্যাককে সিইও পদ থেকে বিতাড়িত করেন। অবশ্য এই ঘটনার সাত বছর পরে জ্যাক আবার সংস্থায় ফিরে আসেন।
‘টেসলা’-র সঙ্গে ইলন মাস্কের নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার চেয়ারম্যান পদে কর্মরত ছিলেন। ‘টেসলা’ সংস্থার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মার্ক এবেরহার্ড। মাস্ক ২০০৭ সালে তাঁকে সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেন।
সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে এবেরহার্ড জানান, এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়েছিল, তা তিনি জানেন না। কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই মাস্ক তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালে ডেভিড নেলম্যান ‘জেটব্লু’ বিমানসংস্থার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সিইও পদ থেকে সরে যেতে হয়। ২০০৭ সালের এক সময় আমেরিকার পূর্ব উপকূলে ঝড়ের সম্ভাবনার আগাম ঘোষণা করে।
নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দর থেকে সমস্ত বিমান বাতিল করে দিলেও ডেভিড সিদ্ধান্ত নেন, ‘জেটব্লু’ সংস্থার অন্তর্গত সব বিমানই চলবে। কিন্তু এর ফলে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন যাত্রীরা। অনেকে বিমানের ভিতরে, অনেকে আবার বিমানবন্দরেই আটকে থেকে যান। যাত্রীদের অকারণে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার দায়ে তাঁকে সিইও পদ থেকে সরানো হয়।
জামা, জুতো থেকে শুরু করে হাতঘড়ি— পুরুষদের যাবতীয় জিনিস পাওয়া যায় ‘মেন’স ওয়্যারহাউস’-এ। এই সংস্থার সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু ২০১৩ সালে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জর্জ জিমার সিইও পদ থেকে নিজে থেকে সরে যান। জর্জ জানান, সংস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করলেও বোর্ডের সদস্যরা তা শুনতেন না।
এই প্রসঙ্গে সংস্থার তরফে জানানো হয়, জর্জ বহু দিন ধরেই কাজ নিয়ে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলেন। কী ভাবে সব কিছু তাঁর দখলে আনবেন, সেই চেষ্টাই করতেন তিনি। এমনকি, পদত্যাগ করার দু’বছর পরেও তিনি তাঁর হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য প্রচুর চেষ্টা করেছিলেন।