সম্প্রতি রাজ্যের সদ্য অপসারিত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা এবং সোনা উদ্ধারের পর তাঁকেও ইডি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ন্যাশনাল হেরল্ড মামলায় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং তাঁর ছেলে রাহুল গাঁধীকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে ইডি। এ ছাড়াও জমি দুর্নীতি মামলায় শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতকেও ইডি গ্রেফতার করেছে। কারা এই ইডি? কী ক্ষমতাই বা রয়েছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে?
১৯৫৬ সালের ১ মে ইডি গঠন করা হয়। তবে সেই সময়ে এর নাম ছিল ‘এনফোর্সমেন্ট ইউনিট’।
অর্থ মন্ত্রকের উদ্যোগে এই বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা তৈরি হয়। দেশে অর্থ পাচার, আর্থিক তছরুপ-সহ যে কোনও ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি রুখতেই ইডি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ইডি বর্তমানে আর্থিক তছরুপ, নিয়ম বর্হিভূত আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে দুর্নীতির মামলাগুলির তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে।
১৯৫৭ সালে এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের নাম বদলে করা হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
আয়কর দফতরের প্রাক্তন প্রধান সঞ্জয় কুমার মিশ্রকে এই সংস্থার প্রধান করা হয়।
ইডির সদর দফতর দিল্লিতে। দিল্লির পর কলকাতা এবং বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই)-তে এই সংস্থার শাখা তৈরি করা হয়। পরে শাখা খোলা হয় মাদ্রাজেও (বর্তমানে চেন্নাই)। বর্তমানে দেশের প্রায় সব বড় শহরেই এই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার শাখা রয়েছে।
দেশের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারের পর থেকে একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে, তা হলে কি সিবিআইয়ের থেকেও বেশি ক্ষমতা আছে ইডির?
১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গাঁধীকে গ্রেফতার করা সিবিআইয়ের প্রাক্তন যুগ্ম পরিচালক এন কে সিংয়ের মতে, সিবিআইয়ের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ইডি। কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হলেও আর্থিক তছরুপ আইনের আওতায় ওই ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রয়েছে ইডির।
এমনকি, ইডির কোনও মামলায় গ্রেফতার করা হলে জামিন পাওয়াও খুব কঠিন। সিবিআই গ্রেফতার করলে বিশেষ শর্তে সেই ব্যক্তি মুক্তি পেতে পারেন।
কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে ইডি আধিকারিকেরা বিনা বাধায় যে কোনও জায়গায় অবাধ যাতায়াত করতে পারেন।
প্রয়োজনে যে কোনও মামলা জামিন অযোগ্য করে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে ইডির।
ইডির জিজ্ঞাসাবাদের কোনও সময়সীমা নেই। ইডি চাইলে কোনও ব্যক্তিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি এক মাস পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।
সাধারণ মানুষ তো বটেই, দেশের মন্ত্রী-আমলারাও কোনও আর্থিক দুর্নীতি করলে ইডির হাত থেকে ছাড় পান না। ইডি হেফাজতে বিশেষ কোনও সুবিধাও পান না আমলা-মন্ত্রীরা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ইডির ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হলেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যে কোনও অর্থ সংক্রান্ত মামলায় ইডি এখন চাইলে অবাধে যে কোনও জায়গায় তল্লাশি চালাতে পারে। এ ছাড়াও কোনও ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তাঁকে গ্রেফতার পর্যন্ত করতে পারে ইডি।
এটি ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব বিভাগের অংশ। আইআরএস, আইপিএস এবং আইএএস অফিসারদের পাশাপাশি ইডি আলাদা করেও কর্মী নিয়োগ করে।
ইডিতে প্রায় দু’হাজার আধিকারিক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ আধিকারিক অন্যান্য সংস্থা থেকে ডেপুটেশনে এসেছেন। বাকিরা ইডি-র নিজস্ব ক্যাডার।