যে কোনও সংস্থায় তথ্য পাচার বা তথ্য ফাঁস আইনবিরুদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধের গুরুত্ব বিচার করে শাস্তির পরিমাণ স্থির করা হয়। কিন্তু সেই সংস্থা যদি হয় ইলন মাস্কের?
টেসলা কর্তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তাঁর সংস্থার গোপন তথ্য পাচার হচ্ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। সেই দুষ্কর্মে জড়িত ছিলেন সংস্থারই এক কর্মী। ইলনের কানে খবর পৌঁছয়, টেসলার নানা গোপনীয় তথ্য কোনও এক কর্মী ফাঁস করে দিচ্ছেন।
এর আগেও এক্স (সাবেক টুইটার)-এর কর্মীদের মেল পাঠিয়ে সতর্ক করেছিলেন সংস্থার মালিক ইলন। সতর্কতামূলক মেলে কর্মীদের উদ্দেশে মাস্ক লিখছিলেন, তথ্য ফাঁসে জড়িত কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
তিনি অধীনস্থ কর্মীদের জানিয়েছিলেন, এক্স (সাবেক টুইটার)-এর কয়েকটি গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়েছে, কর্মীরা সংস্থারই স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করছেন এবং তথ্য গোপন রাখার চুক্তি ভঙ্গ করে চলেছেন।
এ ধরনের প্রবণতা রুখতে কড়া পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন সংস্থার প্রধান। মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারের কোনও গোপন তথ্য ফাঁস হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মাস্ক।
ইলেকট্রনিক সেই সতর্কবার্তায় বিশ্বের অন্যতম এই ধনী লিখেছিলেন, অসাবধানে যদি কেউ কিছু তথ্য বলে ফেলেন, তা হলে কোনও সমস্যা নেই। তবে জ্ঞানত সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললে তার জন্য আইনানুযায়ী উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
একই ঘটনা ঘটেছিল ইলনের মালিকানায় থাকা বৈদ্যুতিন গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা টেসলার ক্ষেত্রে। ২০১৯ সালে, টেসলা তাদের কর্মীদের গোপনীয় তথ্য ফাঁস বন্ধ করার জন্য সতর্ক করে একটি ইমেল পাঠিয়েছিল।
সমাজমাধ্যম এক্সের এক ব্যবহারকারী সরাসরি ইলনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনি কী ভাবে সেই কর্মচারীকে হাতেনাতে ধরে ছিলেন যিনি টেসলার গোপনীয় তথ্য ফাঁস করেছিলেন এবং বিক্রি করেছিলেন?’’
এই মুহূর্তে এক্সে ইলনের অনুগামীর সংখ্যা ১৬ কোটি ৪০ লক্ষ। বিপুল সংখ্যক অনুগামীর কারণে সেই টুইট ইলনের কাছে পৌঁছনো ছিল কঠিন।
তবে সেই বার্তাটি এড়িয়ে যাননি টেসলা কর্তা। প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি সেই কর্মচারীকে শনাক্ত করেছিলেন। এই কাজটি করার জন্য তিনি একটি বিশেষ পদ্ধতিও প্রয়োগ করেছিলেন। কী ছিল সেই বিশেষ পদ্ধতি?
সাধারণ একটি ইমেলের মাধ্যমেই সমাধান হয়ে যায় সমস্যাটির। ২০০৮ সালে একটি ঘটনা ঘটেছিল টেসলায়।
অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে একটি ইমেল পাঠানো হয়েছিল সংস্থার সকল কর্মীকে। দেখতে অভিন্ন হলেও প্রতিটি ইমেলের বাক্যগুলিতে একটি-দু’টি ফাঁকা জায়গা বসিয়ে একটি কোড তৈরি করা হয়েছিল।
‘ক্যানারি ট্র্যাপ’ শব্দবন্ধটি তথ্য ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি একটি কৌশল, যা ফাঁস হওয়া তথ্যের উৎস শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে একটি সংবেদনশীল নথির নানা সংস্করণ দেওয়া হয় এবং কোন সংস্করণটি ফাঁস হল তা দেখা হয়।
এই পদ্ধতিতে তিনি টেসলার কর্মীকে শনাক্ত করেন। ফাঁস হওয়া তথ্য পুনরুদ্ধার করার পরেও অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন মাস্ক। কেন ব্যবস্থা নেননি? মজার ছলে এরও উত্তর দিয়েছিলেন ইলন।
মাস্কের দাবি, সেই সময় নিজের জীবন ও কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাই এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করার কোনও সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। তবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় ওই কর্মীকে।
সম্প্রতি স্পেসএক্স, টেসলা, এক্স (সাবেক টুইটার), দ্য বোরিং কোম্পানি, নিউরালিঙ্ক এবং এক্সএআইয়ের মতো সফল সংস্থার কর্ণধার মাস্ক জানিয়েছিলেন, এই সংস্থাগুলির দায়িত্ব নিতে প্রতি দিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় তাঁকে।
দুনিয়ার অন্যতম দামি গাড়ি সংস্থা টেসলা। বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারক টেসলা মোটর্সে মাস্ক একজন প্রাথমিক বিনিয়োগকারী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এর সিইও হন তিনি।