Jyotipriya Mallick

লালু থেকে বালু, পশুখাদ্য থেকে রেশন! লালবাজারেও সিবিআই নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন ‘মহারথী’

‘বিহার-যোগের’ হদিস মিলল রেশন ‘দুর্নীতি’তে। পড়শি রাজ্যের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলা ও এ রাজ্যের রেশন বণ্টনে দুর্নীতি মামলা মিলে গেল ইডির তদন্তে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, পশুখাদ্য ‘দুর্নীতি’র মূল দুই অভিযুক্ত জড়িয়ে পড়েছেন রেশন ‘দুর্নীতি’তেও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:১১
Share:
০১ ১৫

‘বিহার-যোগের’ হদিস মিলল রেশন ‘দুর্নীতি’তে। পড়শি রাজ্যের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলা এবং এ রাজ্যের রেশন বণ্টনে দুর্নীতি মামলা মিলে কার্যত গেল ইডির তদন্তে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, পশুখাদ্য ‘দুর্নীতি’র মূল দুই অভিযুক্ত জড়িয়ে পড়েছেন রেশন ‘দুর্নীতি’তেও। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা রাজ্যের মন্ত্রী ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (রাজ্য-রাজনীতিতে যিনি বালু নামেই বেশি পরিচিত) ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেও দাবি করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র।

০২ ১৫

শনিবার সকাল থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত কলকাতায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের এক ঠিকানায় ‘অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেড’ নামে একটি প্যাকেটজাত আটা তৈরি সংস্থার দু’টি অফিসে তল্লাশি-অভিযান চালায় ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ওই সংস্থার আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৫

ইডি সূত্রে খবর, অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডের যে দুই ডিরেক্টরের নাম জড়িয়েছে রেশন দুর্নীতি মামলায়— দীপেশ চন্দক ও হিতেশ চন্দক। এঁদের নাম জড়িয়েছিল ১৯৯৬ সালে বিহারের পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলাতেও। যে মামলায় পরে গ্রেফতার হয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব।

০৪ ১৫

ইডির একটি সূত্রের দাবি, এই অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডের দুই ডিরেক্টর দীপেশ এবং হিতেশ ১৯৯৬ সালে বিহারের পশু খাদ্য দুর্নীতি মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে ওই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে তাঁরা ছাড়া পেয়ে যান। দীপেশই বয়ান দেন যে, তিনি লালুপ্রসাদ যাদবকে ৬০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।

০৫ ১৫

ঘটনাচক্রে, কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এই দীপেশকে এক সময়ে গ্রেফতার করেছিল লালবাজারও। চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তদন্তকারীদের কাছে দীপেশ যে বয়ান দিয়েছিলেন, তা পরে পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলার তদন্তের স্বার্থে বিহারের আদালতেও পাঠানো হয়েছিল।

০৬ ১৫

লালবাজার সূত্রেই খবর, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতা পুলিশের তৎকালীন এসি (দক্ষিণ) তপনকুমার প্রামাণিক আলিপুর আদালতে জানিয়েছিলেন, দীপেশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ১৯৯৬ সালে সিবিআইয়ের ৩৬ (এ) মামলার সঙ্গে যুক্ত।

০৭ ১৫

কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, বয়ানের নথি অনুযায়ী, দীপেশ তাদের জানিয়েছেন, তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বিহারে পশুখাদ্য সরবরাহ করতেন। ১৯৯৬ সালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত যায়। তাতে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদের সঙ্গে তিনিও জড়িয়ে পড়েন এবং আত্মগোপন করেন। পরে তাঁকে সিবিআইয়ের ধানবাদের তৎকালীন এসপি রাকেশ আস্থানা রাজসাক্ষী করেছিলেন বলে কলকাতা পুলিশকে সেই সময় জানিয়েছিলেন দীপেশ।

০৮ ১৫

ঘটনাচক্রে, রাজ্যে সারদা-নারদ তদন্তের গতি বাড়িয়ে ছিলেন রাকেশই। লালবাজার সূত্রের দাবি, জেরার সময় দীপেশ দাবি করেছিলেন, ২৩ বছর আগে ওই মামলায় লালুপ্রসাদকে জড়াতে ‘ভূমিকা’ ছিল ওই সিবিআই অফিসারের।

০৯ ১৫

লালবাজার সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাঁচীতে পাঠানোর জন্য আলিপুর আদালতে যে নথি পেশ করা হয়েছিল, তাতে দীপেশ দাবি করেছেন, সেই সময়ে শিলিগুড়ির সিপিএম নেতাদের একাংশের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ ছিল তাঁর। তাঁদের এক জনের সূত্রেই আস্থানার সঙ্গে যোগাযোগ।

১০ ১৫

কলকাতা পুলিশকে দেওয়া বয়ানে ব্যবসায়ীর দাবি, প্রায় ১৫ দিন ধরে আস্থানা তাঁকে জেরা করেন। নথি অনুযায়ী, দীপেশ তাঁর বয়ানে দাবি করেন, পশুখাদ্য মামলা থেকে বাঁচতে রাজসাক্ষী হওয়ার প্রস্তাব দেন রাকেশই।

১১ ১৫

কলকাতা পুলিশের নথি বলছে, চন্দক জেরায় জানান, ২০১৮-র মে মাসে রাঁচীর সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত আরসি-৩৮(এ)/ ৯৬ মামলায় তাঁর এবং সিবিআই অফিসার এ কে ঝা-র সাক্ষ্যগ্রহণ করতে অস্বীকার করে। উল্টে তাঁদের অভিযুক্ত হিসেবে নথিভুক্ত করে। পরে উচ্চ আদালত তাতে স্থগিতাদেশ দেয় বলে জানিয়েছিলেন দীপেশ।

১২ ১৫

সেই দীপেশই এ বার জড়িয়ে পড়লেন রেশন দুর্নীতি মামলায়। ইডির ওই সূত্রেরই দাবি, দীপেশ ও হিতেশও বালুর ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের দুই আপ্ত-সহায়ক অমিত দে এবং অভিজিৎ দাসের সঙ্গেও সংস্থাটির ডিরেক্টরদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রেরই দাবি, রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া বাকিবুর রহমানের চালকলের মতো অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডেরও নাম রয়েছে খাদ্য দফতরের প্যানেলে।

১৩ ১৫

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় খাদ্য নিগমের (এফসিআই বা ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) রেশনের গম ভাঙানোর জন্য খাদ্য দফতরের বরাত পেত এই সংস্থা। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রেশনের ভাল গুণমানের গম ওই সংস্থাকে সরবরাহ করা হত। রেশনের ন্যায্য মূল্যের গম খোলা বাজারের দামের থেকে অনেকটা কম দরে বিক্রি করা হত ওই সংস্থাকে। বাজারদরের তুলনায় কম দামে সেই গম কিনে আটাকলে তা থেকে আটা তৈরি করে প্যাকেটজাত করে পরে বাজারে বিক্রি করা হত বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থার সূত্র।

১৪ ১৫

ইডি-র গোয়েন্দাদের সূত্রে দাবি, জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ এই ধরনের আরও কিছু সংস্থা রয়েছে। রেশন বণ্টন দুর্নীতির সিন্ডিকেট অর্থাৎ ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, রেশন দোকানের মালিক এবং খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে নাকি সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন বালু। তদন্তকারীদের সূত্রে এ-ও দাবি করা হচ্ছে, গত দু’মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলার সূত্রে তল্লাশি-অভিযানে বাজেয়াপ্ত নথি যাচাই করে জানা গিয়েছে, দুর্নীতির কোটি-কোটি টাকার একটি বড় অংশ জ্যোতিপ্রিয়ের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হত।

১৫ ১৫

মন্ত্রীর দুই আপ্ত-সহায়ককেও প্রায় পাঁচ থেকে ছ’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তাঁদের বয়ান লেখা হয়েছে। ওই দু’জনের বাড়ি থেকেও উদ্ধার হওয়া নথি যাচাই করা হয়েছে। ইডি সূত্রের দাবি, সেই সব নথি যাচাই করতে গিয়েই অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেডের দুই ‘মহারথী’ দীপেশ ও হিতেশের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের যোগাযোগের বিষয়টি জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement