যত বারই মুখোমুখি লড়াই হয়েছে, তত বারই ভারতীয় সেনার হাতে নাস্তানাবুদ হয়েছে পাকিস্তান। মুখোমুখি লড়াইয়ে হেরে তাই পিছনের দরজা দিয়ে কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্মের ক্ষতি করতে চাইছে পাকিস্তান।
কিছু পরিসংখ্যান বলছে, কাশ্মীরে হিংসা-বলপ্রয়োগের সন্ত্রাসের বদলে ইদানীং এক নতুন সন্ত্রাস শুরু করেছে পাকিস্তান। এই সন্ত্রাসে আছে এক আজব ‘ভুলভুলাইয়া’।
সেই ভুলভুলাইয়ার পাকে এক বার পড়লে আর ফেরার পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তখন চারপাশে যা-ই হোক না কেন, ভুলভুলাইয়ার পথিক তার চোরাগলির ধাঁধায় ঘুরে মরতে থাকে।
কিন্তু কিসের ভুলভুলাইয়া? তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে একটি সমীক্ষা এবং তাতে প্রকাশ্যে আসা পরিসংখ্যান জানতে হবে। তাতে বলা হয়েছে মাদক সেবনের নিরিখে এই মুহূর্তে দেশে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভূস্বর্গ।
সমীক্ষা বলছে, গত একটি বছরেই এই আচমকা পরিবর্তন এসেছে। মাদক সেবনের দৌলতে এখন কাশ্মীরে অন্তত ৬ লক্ষ বাসিন্দা নানা রকম মাদক সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার পর সেরে উঠছেন কেউ কেউ। আবার কারও ক্ষেত্রে আসক্তি টেনে আনছে মৃত্যুকে।
এই সমীক্ষা ২০২২ সালের। এর আগে উপত্যকায় মাদকাসক্তির সমস্যা ছিল না, তা নয়। ২০১৯ সালে ৩৮৫০টি মাদকাসক্তির ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৩ হাজার ২০০তে। কিন্তু গত এক বছরে বাধনছাঁড়া হারে বেড়েছে আসক্তির পরিমাণ।
জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসে কাশ্মীরে ১৬৮১টি ড্রাগ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৭ জনের কাছে তাঁদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য বেআইনি মাদক পাওয়া গিয়েছে। বাকি ১৩২৪টি মামলা হয়েছে মাদক পাচারের অভিযোগে।
মাদকাসক্তিতে কাশ্মীর যে এখন পঞ্চম স্থানে, সেই হিসাব দিয়েছে খাস এমসের মাদকাসক্তির চিকিৎসা কেন্দ্র। তাদেরই করা সমীক্ষায় উঠে এসেছে ওই তথ্য। এমস জানিয়েছে, কাশ্মীরে মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই হেরোইনের নেশায় আক্রান্ত।
এঁদের ৯০ শতাংশের বয়স আবার ১৭ থেকে ৩৩ বছরের মধ্যে।
অর্থাৎ লক্ষ্য কাশ্মীর। কৌশলে তরুণ প্রজন্মকে দুর্বল করে দেওয়া। আর সময় মতো সেই দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া— এ ভাবেই বিষয়টিকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁরা বলছেন কাশ্মীরকে যে ভাবে হোক এই মায়াজালের মোহ ছিঁড়ে বেরোতেই হবে। ভূস্বর্গের পথে পথে তাই বার হচ্ছে মাদক-বিরোধী মিছিল। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে কি?
পুলিশ বলছে, হচ্ছে না। বরং নেশায় আসক্ত কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্মকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে মাঝে মধ্যে। সমস্যার গভীরতা বুঝে যত দিন না এই প্রজন্ম নিজেরা বুঝতে পারছেন তাঁদের কী করা উচিত, তত দিন এর সমাধান খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
কাশ্মীরের এই পরিস্থিতির সঙ্গে একটি সিনেমার মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই— ‘উড়তা পঞ্জাব’। মাদকাসক্তির জেরে আপন দুনিয়ায় উড়তে থাকা, ভালমন্দের জ্ঞান লোপ পাওয়া তরুণরা কতটা বেপথু হতে পারেন তা দেখা গিয়েছিল ওই সিনেমায়।
একই সঙ্গে দেখানো হয়েছিল, কী ভাবে পাক সীমান্তবর্তী পঞ্জাবে, সীমান্ত পেরিয়ে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ড্রাগের প্যাকেট। যা হাতে পেয়ে ভেসে যাচ্ছেন পঞ্জাবের তরুণ-তরুণীরা।
কাশ্মীরের এই মুহূর্তের পরিস্থিতি বিচার করলে বলতে হয় উপত্যকাও একই ভাবে ‘উড়ছে’।
যে সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে তাতে কাশ্মীরের মাদকাসক্তি ছাড়ানোর কেন্দ্র শ্রীনগরের এসএমএইচ এস হাসপাতালের একটি তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। যা বেশ ভয় পাওয়ানোর মতো।
ওই তথ্য বলছে, মাদকাসক্তির ছাড়ানোর ওই হাসপাতালে প্রতি দিন ১৫০ জন করে মাদকাসক্তি চিকিৎসার রোগী আসেন। এই রোগীদের অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণী।
সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানাচ্ছেন, প্রথমে বিষয়টাকে এতটা গুরুত্ব না দিলেও এখন তাঁরা অত্যন্ত চিন্তিত এই অবস্থা নিয়ে। কেন না আগে শুধু সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা থেকে এই ধরনের রোগীরা আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা থেকেই রোগীরা আসছেন চিকিৎসা করাতে।
সম্প্রতিই মাদক-সন্ত্রাসের কথা শিকার করেছেন কাশ্মীরের রাজ্যপাল মনোজ সিংহও। তিনি বলেছেন, এ ভাবেই পাকিস্তান ক্ষতবিক্ষত করছে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ তথা তরুণ প্রজন্মকে।
যদিও সমালোচকদের একাংশ বলছে, কাশ্মীরের অর্থনৈতিক সমস্যাও এর নেপথ্যে একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে।
যে রাজ্যে তরুণদের চাকরি বা কাজ পাওয়ার সমস্যা রয়েছে, সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই ভাল থাকার বিকল্প পথ খুঁজে নেবেন তাঁরা।
তবে কারণ যা-ই হোক, মাদকাসক্ত কাশ্মীর যাতে পাকিস্তানের এই রণকৌশলে দুর্বল না হয়ে যায়, আপাতত সেটাই নিশ্চিত করতে চান ভূস্বর্গের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।