বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের কাছে তিনি অতি পরিচিত। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্ততির শিক্ষা দেওয়া হয় তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে। রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও অলক পাণ্ডের সফর চমকে দেবে আপনাকে। কী ভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ড্রপ আউট এক ছাত্র শুধু টিউশন পড়িয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি সংস্থার মালিক হলেন?
অলক পাণ্ডের জন্ম ইলাহাবাদে। জ্ঞান হওয়া ইস্তক পরিবারে প্রবল অর্থকষ্ট দেখে এসেছেন অলক। সেই পরিবারের ছেলেই আজ কোটিপতি-শিক্ষক!
তখন অলক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সংসারের অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছল যে এক মাত্র ভিটেও বিক্রি করতে বাধ্য হলেন তাঁর বাবা। পুরো পরিবার উঠে গেল একচিলতে ভাড়াবাড়িতে।
প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে পরিবারকে। অল্প বয়সে লড়াই শিখে যায় ছোট্ট অলকও। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি শুরু করে গৃহশিক্ষকতা। প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন কিশোর অলক।
পড়ানোকে বেছে নিয়েছিলেন পরিস্থিতির চাপে, সংসারে নিজের কিছু অবদান রাখতে। কিন্তু টিউশন পড়ানোই হয়ে উঠল অলকের নেশা। পড়াতে তাঁর ভীষণ ভাল লাগত।
নেশাকেই পেশা করে ফেললেন তরুণ অলক। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘টাকার দরকারে পড়ানো শুরু করেছিলাম। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পড়ানো আমার ভাল লাগতে শুরু করল। একে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম তখনই।’’
পড়াশোনাতে বরাবরই ভাল অলকের ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা হয়নি শুধু টাকার জন্য। ছোট থেকে অভাবের সঙ্গে লড়াই করা যুবক সিদ্ধান্ত নেন, আর নয়। এ বার পরিবারের হাল ফেরাতেই হবে।
ইলাহাবাদে ফিরে কাজ নিয়েছিলেন একটি কোচিং সেন্টারে পড়ানোর। মাস গেলে মাইনে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
তার মধ্যেই অন্য কিছু করার ভাবনা থেকে ২০১৭ সালে ইউটিউবে চ্যানেল খোলেন অলক। সে বছরই ওই কোচিং সেন্টারে পড়ানোর কাজ ছেড়ে দেন।
অলকের পূর্ণ সময়ের কাজ হয়ে দাঁড়ায় ইউটিউবে পদার্থবিদ্যার প্রশিক্ষণ। কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বাড়তে থাকে।
শুরুতে অলকের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ছিল চার হাজার। ২০১৯ সালে সেটাই বেড়ে দাঁড়ায় ২০ লক্ষ!
এই ইউটিউব চ্যানেলের সদস্যসংখ্যা আরও বাড়তে থাকে কোভিড পরিস্থিতিতে।
করোনা পরিস্থিতিতে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ। সবাই তখন বাড়িবন্দি। এই সময়ে অলক নিয়ে এলেন নতুন অ্যাপ।
হুড়মুড় করে বাড়তে থাকে অ্যাপের সদস্য সংখ্যা। এক দিন এক ধাক্কায় দু’লক্ষ ‘হিট’ হওয়ার পর অ্যাপটাই বন্ধ হয়ে যায়! মাত্র চার দিনে ৩৫ হাজার পড়ুয়া নাম লেখান সেখানে।
সে দিনের কথা ভাবলে এখনও অবাক হয়ে যান অলক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পড়ুয়ারা ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল চাপে অ্যাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে তো ভাবতে পারেন, তাঁরা ঠকেছেন! এই দুর্ভাবনা গ্রাস করেছিল।’’ সিদ্ধান্ত নেন সব টাকা ফেরত দেওয়ার। এ ভাবেই ‘লাইভ ক্লাস’ বন্ধ রেখে রেকর্ডিং সেশনের আয়োজন করেন অলক।
কিছু দিনের মধ্যে অবস্থার বদল আসে। প্রযুক্তিগত সমস্যা কেটে যায়। আবার হু-হু করে পড়ুয়ারা নাম লেখান অলকের অ্যাপের সদস্য হওয়ার জন্য।
অলকের অ্যাপের সাফল্য দেখে একটি বড় সংস্থা তাঁকে ৭৫ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল। শর্ত, তাদের হয়ে কাজ করতে হবে। যদিও হেলায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি।
এখন অলকের স্টার্ট আপ সংস্থায় কাজ করেন মোট ১৯ হাজার কর্মী। তার মধ্যে রয়েছেন ৫০০ জন শিক্ষক, ২০০ জন অধ্যাপক এবং ২০০ জন বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। অ্যাপ সামলাতে কাজ করেন ১০০ জন প্রযুক্তিবিদ।
অভাবের তাড়নায় যে ছেলেটির পড়াশোনা অসমাপ্ত থেকে গিয়েছিল, তিনি এখন ভারতের অন্যতম ‘ইউনিকর্ন’ চালান। অর্থাৎ, সংস্থার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। গৃহশিক্ষক থেকে সংস্থার সিইও, অলকের সফর অনুপ্রেরণা দেবে অন্যদেরও।