১০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। বহু চেষ্টা করেও এখনও উদ্ধার করা যায়নি উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে।
তবে প্রশাসনের তরফে লাগাতার চেষ্টা চলছে। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে সুড়ঙ্গের মধ্যে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে।
একাধিক অত্যাধুনিক খননযন্ত্র দিয়ে সুড়ঙ্গের মুখে আটকে থাকা পাথর সরানোর চেষ্টা করছেন উদ্ধারকারীরা। উদ্ধার অভিযানের সুবিধার্থে এ বার আসরে নামল ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও।
উদ্ধার অভিযানে গতি আনতে ঘটনাস্থলে আনা হয়েছে ডিআরডিও-র ‘রিমোট অপারেটেড ভেহিকেল (আরওভি)’ দক্ষকে। যা ঝুঁকিপূর্ণ ভূখণ্ডে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
আরওভি দক্ষ কী? ডিআরডিও-র মতে, দক্ষ এমন একটি বহুমুখী যন্ত্র, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
দক্ষ খুব সহজেই ‘ইম্প্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)’ বিস্ফোরক খুঁজে বার করে তা ধ্বংস করতে সক্ষম। পারমাণবিক ও রাসায়নিক দূষণযুক্ত জায়গা ঘুরে ক্ষতিকারক পদার্থ সরিয়ে ফেলতেও এই যন্ত্রের জুড়ি মেলা ভার।
১০০ থেকে ৫০০ মিটারের দূরত্বের মধ্যে একটানা তিন ঘণ্টা কাজ করতে পারে দক্ষ। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটেও (বিডিইউ) কাজ করে এই বিশেষ যন্ত্র।
একাধিক ক্যামেরা দিয়ে সজ্জিত দক্ষ অনায়াসে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে এবং খাড়া ঢালে চলাচল করতে পারদর্শী। বিস্ফোরণের প্রভাবে যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, তার জন্য টেকসই রবারের চাকা ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ ভাবে ডিজ়াইন করা একটি বাহক গাড়ি করে দক্ষকে অভিযানে পাঠানো হয়। নিজেকে বাঁকিয়ে দুর্গম থেকে দুর্গমতম এলাকায় অভিযান চালাতে পারদর্শী দক্ষ।
দক্ষ শব্দের অর্থ পারদর্শী, কর্মসমর্থ বা সজ্জন। আবার হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দক্ষ ছিলেন ব্রহ্মার পুত্র।
ডিআরডিও ২০ কেজি এবং ৫০ কেজি ওজনের ২টি রোবট ইতিমধ্যেই সুড়ঙ্গের ভিতরে পাঠিয়েছে।
এর আগে ‘আমেরিকান অগার’ নামে বিদেশি খননযন্ত্র এনে উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। অনায়াসেই সেই যন্ত্র ৭০ মিটার পাথর কেটে ফেলতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
খননযন্ত্রটি ঘণ্টায় ৫ মিটারেরও বেশি পাথর কাটতে পারবে বলেও মনে করছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। কিন্তু উদ্ধারকাজ চলাকালীন শক্ত পাথরের কারণে সেই যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর পর অন্য খননযন্ত্র দিয়েও শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি।
শ্রমিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে আনতে তাইল্যান্ড এবং নরওয়ের দু’টি সংস্থাকেও ডেকে পাঠিয়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার। ২০১৮ সালের জুন মাসে তাইল্যান্ডে বন্যার জলে ভেসে যাওয়ায় একটি গুহায় আটকে পড়ে ১২ জন খুদে ফুটবলার এবং তাদের কোচ।
অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাদের উদ্ধার করে এনে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয় তাইল্যান্ডের ওই উদ্ধারকারী সংস্থা। এ বার সেই সংস্থার অভিজ্ঞতাকেই উত্তরাখণ্ডে কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ভেঙে পড়ে। এর জেরে ওই সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। সেই ঘটনা ১০ দিনে পা দিয়েছে।
তবে আটকে থাকা শ্রমিকদের সুস্থ রাখতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না উদ্ধারকারীরা। সুড়ঙ্গপথে খাবারদাবার, ওষুধপত্র-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে।
সোমবার উদ্ধারকারী ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে একটি ছ’ইঞ্চি প্রশস্ত পাইপলাইন তৈরি করেছেন। যাতে শ্রমিকদের আরও বেশি পরিমাণে খাবার এবং জল সরবরাহ করা যায়।
আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের মনোবল অটুট রাখতে নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
এত কিছুর পরেও উদ্ধারকাজের প্রক্রিয়া ক্রমশ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ওই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমশ সংশয় তৈরি হচ্ছে।