Somaliland

‘আফ্রিকার শিং’ ভেঙে নয়া দেশের জন্ম! জলদস্যুদের মেগা উপহার দেবেন ট্রাম্প?

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েই ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’র দেশ সোমালিয়ার বিভাজন ঘটাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? চিনের উপর চাপ বাড়াতে ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত কতটা স্বস্তি দেবে নয়াদিল্লিকে?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০০
Share:
০১ ১৮

‘গন্ডারের খাঁড়া’র মতো দেখতে এক টুকরো ভূখণ্ড। যার এক পাশে খেলে বেড়াচ্ছে সমুদ্রের অনন্ত জলরাশি। ‘অন্ধকার মহাদেশ’-এর ওই এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জলদস্যুদের দল। সেই ভূভাগকেই এ বার নতুন দেশের স্বীকৃতি দিতে চলেছে আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’। সৌজন্যে সেখানকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

০২ ১৮

‘আফ্রিকার শিং’ বা ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’র কোলের দেশ সোমালিয়া। পূর্ব আফ্রিকার এই রাষ্ট্রটির নাগরিকদের একটা বড় অংশের জীবিকা নির্বাহ হয় জলদস্যুবৃত্তির মাধ্যমে। লম্বা সময় ধরে সেখানে চলেছে গৃহযুদ্ধ। যার সুযোগ নিয়ে এ বার দেশটিকে দু’টুকরো করার নীল নকশা ছকে ফেলেছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

Advertisement
০৩ ১৮

আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫) ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, কুর্সিতে বসার পর তাঁর প্রথম নজর পড়বে পূর্ব আফ্রিকায়। সোমালিয়ার স্বশাসিত এলাকা সোমালিল্যান্ডকে নতুন দেশের স্বীকৃতি দেবেন তিনি। ‘অন্ধকার মহাদেশে’ চিনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে এই মোক্ষম ‘ট্রাম্প কার্ড’ খেলার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর।

০৪ ১৮

১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হলে দেখা যায় সোমালিয়ার উত্তরাংশের জমি কব্জা করেছে সেখানকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বিরোধী গোষ্ঠী। তাঁরা এডেন উপসাগর সংলগ্ন ওই এলাকার নামকরণ করেন সোমালিল্যান্ড। সেই থেকে স্বশাসিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশাল ওই ভূখণ্ড। যদিও আলাদা দেশ হিসাবে এখনও একে স্বীকৃতি দেয়নি রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন।

০৫ ১৮

সোমালিল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থানের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি দেশ সেখানকার স্বশাসিত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। হয়েছে একাধিক বন্দর চুক্তিও। তালিকায় রয়েছে ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। এই আবহে ‘আফ্রিকার শিং’ বেয়ে এডেন সাগরে প্রতিপত্তি ছড়িয়ে দিতে সোমালিল্যান্ডের উপকূলে পাড়ি জমাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রও।

০৬ ১৮

সংবাদ সংস্থা ‘সেমাফোর’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসন সোমালিল্যান্ডকে আলাদা দেশ বলে স্বীকৃতি দিলে অশান্ত হতে পারে ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’র গোটা এলাকা। সে ক্ষেত্রে সোমালিয়ার পাশাপাশি ইথিওপিয়া, জিবুতি এবং এরিত্রিয়ার মাটি রক্তে ভেজার আশঙ্কাও রয়েছে। সোমালিয়ায় নতুন করে ছড়াতে পারে গৃহযুদ্ধ।

০৭ ১৮

শুধু তাই নয়, ট্রাম্প এই পদক্ষেপ করলে আমেরিকার সঙ্গে আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) সম্পর্কে চিড় ধরার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অল্প সময়ের জন্য হলেও সেটা অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আন্তর্জাতিক স্তরে যার চরম মূল্য দিতে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রকে।

০৮ ১৮

এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন হাডসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষক জোসুয়া মেসারভেই। তাঁর কথায়, ‘‘স্বশাসিত সোমালিল্যান্ড এটা প্রমাণ করেছে যে তাঁরা দেশ চালাতে সক্ষম। সেখানকার শাসকেরা স্বেচ্ছায় সোমালিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইবেন, এমনটা নয়। কিন্তু আলাদা দেশ হিসাবে সোমালিল্যান্ডকে সোমালিয়া আদৌ মেনে নেবে কি না, তার উপর নির্ভর করবে ওই এলাকার শান্তি।’’

০৯ ১৮

‘সেমাফোর’র বর্ষীয়ান সাংবাদিক ইয়ঙ্কা অ্যাডেগোক জানিয়েছেন, পৃথক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেতে আমেরিকার সঙ্গে ‘নিষ্ঠুর লেনদেন’ মানতে হবে সোমালিল্যান্ডকে। দেশটির কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সেখানে নৌসেনা ঘাঁটি নির্মাণ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষার সদর দফতর ‘পেন্টাগন’। এতে ‘ড্রাগন’-এর ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে সক্ষম হবে ওয়াশিংটন।

১০ ১৮

কিন্তু, কেন সোমালিয়া ভেঙে সোমালিল্যান্ড তৈরি করতে চাইবেন ট্রাম্প? এর উত্তর পেতে পিছিয়ে যেতে হবে অন্তত দু’বছর। ২০২২ সালে একটি সাক্ষাৎকারে আমেরিকার নৌসেনা প্রধান জানান, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেজিংয়ের দাদাগিরি বেড়েই চলেছে। ‘ড্রাগন’-এর দাপাদাপি মোকাবিলা করতে সেখানে ৬০ শতাংশ নৌসৈনিকদের মোতায়েন করতে হয়েছে।

১১ ১৮

ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে ভবিষ্যতে সেখানে আরও যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে পেন্টাগন। সেই সঙ্গে চলছে নতুন নৌসেনা ঘাঁটির খোঁজ। সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে এডেন উপসাগরে যা পেতে চাইছে ওয়াশিংটন। সেই কারণেই পৃথক রাষ্ট্রের লোভ দেখাতে চাইছেন ট্রাম্প, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

১২ ১৮

সোমালিয়ার প্রতিবেশী দেশ জিবুতির আবার অর্থনীতি সেনাঘাঁটি নির্ভর। আমেরিকা, চিন, জাপান এবং ফ্রান্স-সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রকে সৈনিক ছাউনি নির্মাণের জন্য জমি লিজ় দিয়ে রেখেছে জিবুতির সরকার। চিন সেখানে জায়গা পেয়ে যাওয়ায় এডেন ও আরব সাগরকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি পেন্টাগন। ফলে তখন থেকেই দ্বিতীয় ঘাঁটির খোঁজ চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।

১৩ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, আমেরিকার এই পাশার চাল উল্টে দিতে পারে চিন। কারণ, ইতিমধ্যেই অখণ্ড সোমালিয়ার কথা বলেছেন ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে বেজিং যে খোলাখুলি ভাবে মোগাদিশুর পাশে দাঁড়াবে, তা বলাই বাহুল্য।

১৪ ১৮

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে নৌঘাঁটি তৈরি করতে গেলে সোমালিয়ার সরকারকে প্রভাবিত করে অন্য জায়গায় সেনাছাউনি বসানোর মরিয়া চেষ্টা চালাতে পারে চিন। ফলে দুই মহাশক্তির মাঝে পড়ে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের ক্ষতবিক্ষত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১৫ ১৮

তৃতীয়ত, সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীনতা দিলে আফ্রিকার অন্যান্য দেশে চলা পৃথক রাষ্ট্রের দাবির আগুনে হাওয়া লাগার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। চলতি বছরের গোড়ার দিকে ইথিওপিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালায় সোমালিল্যান্ডের স্বশাসিত সরকার। সেখানে বেশ কয়েকটি চুক্তিও সই হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১৬ ১৮

চুক্তি অনুযায়ী, ইথিওপিয়াকে ১২ কিলোমিটার লম্বা উপকূলরেখা ইজারা দিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ৫০ বছরের জন্য ওই উপকূলবর্তী এলাকাকে সামরিক এবং বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে ইথিওপিয়া। পৃথক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলে আমেরিকার সঙ্গেও সোমালির স্বশাসিত সরকার একই ধরনের চুক্তি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৭ ১৮

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়েসলি কে ক্লার্ক একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের স্বার্থেই মোট সাতটি দেশ ভেঙে নতুন রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। সেগুলি হল, সিরিয়া, সুদান, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, ইরাক ও লেবানন।’’ এর মধ্যে সুদান ইতিমধ্যেই দু’টি দেশে ভেঙে গিয়েছে। আর তাই এ বার সোমালিয়ার পালা বলে মনে করা হচ্ছে।

১৮ ১৮

সোমালিল্যান্ড তৈরি করে সেখানে নৌঘাঁটি স্থাপন করলে আরব সাগরে আমেরিকার প্রভাব বাড়বে। অন্য দিকে এই এলাকায় দুর্বল হবে চিন। কিন্তু তার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের এই কাজকে ভারত কতটা সমর্থন জানাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদকে মদত দেবে ওয়াশিংটন। ভবিষ্যতে এর বিষ এশিয়ার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement