বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার জন্য সরকার নির্বাচন করবে সে দেশের জনগণ। সেই সঙ্গে নির্বাচিত হবেন দেশের চার প্রদেশের শাসক। এই ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানের রাজনীতি টালমাটাল। অর্থনীতি এবং সামাজিক দিক থেকেও একাধিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে ভারতের এই পড়শি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন পাকিস্তানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তান রয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্র। কেন্দ্রীয় আইনসভা ছাড়াও চারটি প্রাদেশিক আইনসভায় ভোট হবে পাকিস্তানে। এখানেই ভারতের নির্বাচনের সঙ্গে তার প্রধান ফারাক। একসঙ্গে দু’টি ভোটই হয় পড়শি দেশে।
উল্লেখ্য, ভারতে সম্প্রতি ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি চালু করার ডাক দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তাতে এক বারেই সব ভোট আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচনের সঙ্গে সেই নীতির কিছুটা মিল রয়েছে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভায় মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এই ৩৩৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬টি আসনে প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে। বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ৫৪৩টি আসনে প্রার্থী নির্বাচিত হন।
পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় আইনসভার সংরক্ষিত ৭০টি আসনের মধ্যে ৬০টি আসনে প্রার্থী হবেন মহিলারা। বাকি ১০টি আসন দেশের অ-মুসলমান প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। উল্লেখ্য, ভারতের সংসদে ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ১৪ শতাংশ।
আইনসভায় কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা কতটা, তার ভিত্তিতে ঠিক করা হয় সংরক্ষিত আসনগুলিতে কারা নির্বাচিত হবেন। কোন দলের কত জন প্রার্থী সংরক্ষিত আসনে বসতে পারবেন, তা রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্ত আসনের অনুপাতের মাধ্যমে ঠিক হয়।
২৬৬টি আসনের মধ্যে পঞ্জাব প্রদেশে ১৪১টি, সিন্ধ প্রদেশে ৬১টি, বালুচিস্তানে ১৬টি এবং খাইবার পাখতুনখোয়াতে ৪৫টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া, রাজধানী ইসলামাবাদে রয়েছে তিনটি আসন।
২০১৮ সালে শেষ বার ভোট হয়েছে পাকিস্তানে। সে বার ৩৪২টি আসন ছিল কেন্দ্রীয় আইনসভায়। ভোট হয়েছিল ২৭২টি আসনে।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে মোট ৪৪টি দল লড়াই করছে। কেন্দ্রীয় আইনসভার জন্য মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫,১২১ জন। প্রাদেশিক আইনসভায় ১২,৬৯৫ জন প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন এ বছর।
৫,১২১ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। পুরুষ প্রার্থী রয়েছেন ৪,৮০৬ জন। মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ৩১২ জন। এ ছাড়া, দু’জন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীও ভোটে লড়ছেন।
ভারতের মতোই পাকিস্তানেও ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নাগরিক ভোট দেওয়ার অধিকারী। এ বছর সেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লক্ষ।
বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যাবে গণনা। রাতেই কিছু কিছু কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল জানা যাবে। সম্পূর্ণ এবং বিস্তারিত ফলাফল ঘোষণা করা হবে শুক্রবার।
অনেক প্রার্থী কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না হয়েই ভোটে লড়ছেন পাকিস্তানে। ভোটের পর সেই নির্দল প্রার্থীরা যে কোনও দলে যোগ দিতে পারবেন।
কী ভাবে পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন? ভোটের ফল ঘোষণার পরে কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য হিসাবে যাঁরা নির্বাচিত হলেন, তাঁরাই হাউসের প্রধানকে নির্বাচন করেন। সেখানেও পৃথক ভোট হয়। বর্তমানে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকর।
৩৩৬টি আসনের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হয় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য অন্তত ১৬৯ জনের সমর্থন প্রয়োজন হয় তাঁর।
প্রাদেশিক আইনসভার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোটাভুটির মাধ্যমে যে কোনও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচন করে থাকেন। ভারতের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আলাদা। ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীই প্রধানমন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে মূলত তিনটি দলের প্রাধান্য রয়েছে— পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজ (পিএমএল-এন), পাকিস্তানস পিপ্লস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান তেহরক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
গত কয়েক বছরে পাক রাজনীতিতে পিএমএল-এনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দলকে নেতৃত্ব দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর ভাই শাহবাজ শরিফ।
নওয়াজের দলের সমর্থনে রয়েছে আর এক দল পিপিপি। এই দলটিকে নেতৃত্ব দেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাবল ভুট্টো। দক্ষিণ পাকিস্তানে পিপিপি যথেষ্ট শক্তিশালী।
পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তানে সরকার গড়ার মতো জনপ্রিয়তা নেই ভুট্টোর। তবে তিনি নওয়াজের নেতৃত্বে জোট সরকারের অংশ হতে পারেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে তৃতীয় উল্লেখযোগ্য দল পিটিআইয়ের নেতা ইমরান খান। তিনি এ বছর নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। বর্তমানে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে ইমরান কারাবন্দি।
খাতায়কলমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও পাকিস্তানের ভোটে পাক সেনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটে তাদের প্রভাব থাকবেই। পাকিস্তানের সরকারকে অতীতে একাধিক বার প্রভাবিত করেছে সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের মতো চলতি বছরেই ভোট হবে ভারতেও। ২০১৯ সালের পর এ বছর ভারতে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে আর কয়েক মাসের মধ্যেই। ইতিমধ্যে ভোটের সুর বাজতে শুরু করেছে ভারতের অলিগলিতেও। যদিও নির্বাচন কমিশন এখনও ভোটের দিন ঘোষণা করেনি।