শক্তি বাড়িয়ে মঙ্গলবারই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘূর্ণাবর্ত থেকে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা আরও শক্তি সঞ্চার করে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’তে। যা আছড়ে পড়তে পারে উপকূলবর্তী কোনও রাজ্যে। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এমনটাই পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বঙ্গোপসাগরের বুকে এখনও রয়েছে মোকা তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি। আপাতত দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে ঘূর্ণাবর্ত থেকে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবারই সেই নিম্নচাপ পরিণত হতে চলেছে গভীর নিম্নচাপে। এর পর বুধবার তা দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক বরাবর এগিয়ে যাবে।
‘মোকা’ আবহে চার রাজ্যে আগেই সতর্কতা জারি করেছিল মৌসম ভবন। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নামও।
তবে মৌসম ভবনের সোমবারের পূর্বাভাস, বাংলার দিকে না-ও আসতে পারে মোকা। পরিবর্তে তা চলে যেতে পারে বাংলাদেশের দিকে। ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে ওড়িশাতেও। তবে ‘মোকা’ তৈরি হওয়ার পর ঠিক কোন দিকে ধেয়ে আসবে তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারছে না হাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড় বাংলার দিকে ধেয়ে আসুক বা না আসুক, ‘মোকা’র প্রভাবে ইতিমধ্যেই গরম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে বাংলায়।
মোকার প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার চরম তাপপ্রবাহে পুড়তে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। তালিকায় রয়েছে কলকাতার নামও।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, মঙ্গলবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ চলবে। যার রেশ চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। আবহবিদরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বীরভূম এবং বাঁকুড়া— এই আট জেলায় তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বুধবার তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি তৈরি হবে দক্ষিণবঙ্গের প্রতিটি জেলায়। বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহ চলবে পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম এবং বাঁকুড়ায়। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, শুক্রবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে।
আবহবিদরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ রাজ্যে দখিনাবাতাস প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবর্তে রাজ্যে প্রবেশ করছে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক গরম বাতাস। এর ফলেই রাজ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
বাংলার দক্ষিণের জেলাগুলিতে আগামী কয়েক দিনে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা আবার ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁতে পারে।
মোকার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা আগামী কয়েক দিন ধরে বেশি থাকলেও এর প্রভাব পড়বে না উত্তরবঙ্গে। উল্টে আগামী কয়েক দিন উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলাতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে হাওয়া অফিস জানিয়েছে।
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে মঙ্গলবার কলকাতায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অস্বস্তি বাড়বে মানুষের। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩৯ ডিগ্রির আশপাশে।
মৌসম ভবন ইতিমধ্যে জানিয়েছে, ‘মোকা’ তৈরি হওয়ার পর তা ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক বরাবর এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। আগামী ১১ মে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিমেই থাকতে পারে ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ। দিক পরিবর্তন করতে পারে বৃহস্পতিবারের পর। বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় আচমকা পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে উল্টো দিকে বাঁক নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের পর মোকা ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে যাবে। ক্রমশ এগোবে বাংলাদেশ, মায়ানমার উপকূলের দিকে।
সমুদ্রে থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ক্ষয় হবে কি না এবং তা বাংলাদেশ, মায়ানমারের উপকূলে কেমন ধ্বংসলীলা চালাবে, সে বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট করেনি মৌসম ভবন।
তবে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার ফলে আন্দামানে ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলে মঙ্গলবার থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে মৌসম ভবন সূত্রে খবর।
আন্দামানে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগও। মঙ্গলবার ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার হাওয়া বইতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহবিদরা।
আন্দামানে ইতিমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পর্যটক এবং মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা জারি আছে। সতর্ক রয়েছে বাংলা এবং ওড়িশা-ও।