স্কুলের পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্পগুজবে মেতে থাকে। ফুরসত পেলে ডার্ট বাইক নিয়ে রেসও লাগায়। একঝলকে আর পাঁচটা সাধারণ কিশোরের থেকে তাকে খুব একটা আলাদা করা যায় না। তবে ডেনিস মালিক বার্নস মোটেও আমেরিকার আর পাঁচটা কিশোরের মতো নয়। গত এপ্রিলেই তার ‘প্রমাণ’ দিয়েছে সে।
গত এপ্রিলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে একসঙ্গে ১৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে ডেনিস। সে খবর চাউর হতেই তা আমেরিকার জাতীয় শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে।
ডেনিস নয়, নিজের মধ্যনাম ‘মালিক’ই বেশি পছন্দের ১৬ বছরের এই কিশোরের। আপাতত আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে তারকা হয়ে উঠেছে লুইজ়িয়ানার নিউ ওরলিন্সের এই বাসিন্দা।
তারকা নয়, নিজেকে সাধারণ ছাত্র মনে করে ডেনিস। তবে ইদানীং তার বাড়ির ডাকবাক্সে যে হারে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপের চিঠি আসছে, তাতে সে নিজে কত দিন ‘সাধারণ’ থাকবে, তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নয় নয় করে মোট ৯০ লক্ষ ডলার অর্থমূল্যের স্কলারশিপ পেয়ে গিয়েছে ডেনিস। ভারতীয় অর্থমূল্যে যা প্রায় ৭৪ কোটি টাকা।
এপ্রিলের আগে নাকি ডেনিসের নামে বিশেষ চিঠিপত্র আসেনি। তবে গত মাসের কয়েক সপ্তাহ ধরে সে ছবিটা বদলে গিয়েছে। নিউ ওরলিন্সের ইন্টারন্যাশনাল হাইস্কুলের ছাত্রের বাড়িতে এখন চিঠির পাহাড়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সে সব বেশ গর্ব করেই দেখিয়েছে সে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে ডেনিস বলেছে, ‘‘এখন আমার ঘরে শুধু চিঠির পাহাড়। একমাত্র রবিবার বা ছুটির দিন ডাকবাক্সে আমার নামে কোনও চিঠি পড়ে না।’’
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, সে দেশের ইতিহাসে ডেনিসই প্রথম সিনিয়র স্কুলের ছাত্র যে ১৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপ পেয়েছে। এবং এতগুলি স্কলারশিপ মিলিয়ে ৯০ লক্ষ ডলারের বৃত্তি তার হাতের মুঠোয় এসেছে।
আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় ১ থেকে ৪-এর মধ্যে পড়ুয়াদের গ্রেড দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই সংখ্যার মাধ্যমেই বোঝা যায়, কোনও কোর্সে গড়ে কত উঁচুতে রয়েছে পড়ুয়া। হাইস্কুলে পড়াশোনার সময় বরাবরই ডেনিসের জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ়) ছিল ৪.৯৮।
জিপিএ-তে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী পড়ুয়া কোন স্তরে রয়েছে, তার মূল্যায়ন করা হয়। ডেনিসের এই কীর্তিতে গিনেস বুক অফ রেকর্ডসেও নাম উঠে গিয়েছে বলে দাবি তার স্কুল কর্তৃপক্ষের। নির্দিষ্ট সময়ের দু’বছর আগেই স্নাতক হতে পারবে সে।
স্বাভাবিক ভাবেই এ হেন কীর্তিতে যারপরনাই আপ্লুত ডেনিস। সিএনএন-এর কাছে একটি সাক্ষাৎকারে তার মন্তব্য, ‘‘এতগুলি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে প্রস্তাব পাওয়ায় আমার জিপিএ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েছে। আমার কাছে আর্থিক সাহায্যও আসতে শুরু করেছে।’’
জিপিএ-তে ৪.৯৮ পাওয়া যেন সহজ ব্যাপার! অন্তত ডেনিসের মন্তব্যে তেমনই মনে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার ওই স্কোর (৪.৯৮ জিপিও)-এ পৌঁছনোর পর যে সহজেই আর্থিক সহায়তা আসবে, তা তো তেমন আশ্চর্যের কিছু নয়।’’
ডেনিসের এই সাফল্যে নিজের অধ্যবসায়ের পাশাপাশি স্কুলের কাউন্সেলর ডেনিস জেমসেরও অবদান রয়েছে বলে দাবি তার। জেমসই তাকে বলেছিলেন, ‘‘দেখো মালিক, এক দিন তোমার লেটারবাক্সে স্কলারশিপের চিঠির বন্যা বইবে। চিঠি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন পিয়ন।’’
বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। ডেনিসের বাড়িতে আজকাল স্কলারশিপের চিঠির বন্যা বইছে। তবে ১৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৯০ লক্ষ ডলারের স্কলারশিপ পেলেও ১ কোটি ডলারের লক্ষ্যে ছুটছে সে।
ডেনিস জানিয়েছে, এতগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কলারশিপের আবেদন করার খরচ কী করে বাঁচাতে হয়, সে কৌশলও শিখিয়েছেন জেমস। তিনি যে কাউন্সেলর তথা মানুষ হিসাবেও উঁচুদরের, তা-ও জানিয়েছে ডেনিস।
জেমস অবশ্য ডেনিসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, ‘‘মালিক অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। নিজের লক্ষ্যে অবিচল। অন্যদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাও রয়েছে তার। সব কিছু শেখার আগ্রহও রয়েছে। মা-বাবার থেকেই নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে তার মধ্যে। ছেলেকে যথার্থ মানুষ করে তুলেছেন ওঁরা।’’
এতগুলি স্কলারশিপ পেলেও লাখ টাকার প্রশ্ন হল, পড়াশোনার জন্য কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেবে ডেনিস? সরাসরি সে উত্তর না দিলেও ডেনিস জানিয়েছে, কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার পর আইনের ডিগ্রি লাভ করতে চায় সে। ভবিষ্যতে মেধাস্বত্ব নিয়ে জটিল আইনি মারপ্যাঁচে দক্ষতা হাসিল করতে আগ্রহী বলেও জানিয়েছে ডেনিস।