চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে খুনি। তবু প্রমাণের অভাবে কিছু করতে পারছে না পুলিশ। খুনি ধরতে তাই এক অভিনব পন্থা নিল তারা। বোকা বানিয়ে গ্রেফতার করা হল দুই অভিযুক্তকে। সমাধান হল দিল্লির মঙ্গলপুরিতে চন্দ্রভান নামে ৩৫ বছর বয়সি যুবকের খুনের।
চন্দ্রভান খুন হওয়ার পর তদন্তে নেমে প্রমাণের অভাবে পুলিশের কাছে এই খুনের কিনারা করা অসাধ্য বলেই মনে হয়েছিল। স্রেফ একটি মিথ্যা কথা বলে এই দুই অভিযুক্তকে নিজেদের জালে আনে দিল্লি পুলিশ।
তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত দুই যুবকের সঙ্গে চন্দ্রভানের খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছিল না। বার বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেও ছেড়ে দিতে হচ্ছিল দুই অভিযুক্তকে।
মৃত যুবকের খুনের পিছনে যে ৩৫ বছর বয়সি রং মিস্ত্রি রাজু এবং ৩২ বছর বয়সি সেলস্ম্যান প্রদীপের হাত আছে তা নিয়ে মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত ছিল দিল্লি পুলিশ।
শেষে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরতে অভিনব ফন্দি খুঁজে বার করে পুলিশ। দুই অভিযুক্তকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানায়, এই খুন যে তারা করেছে এই নিয়ে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
পুলিশ আধিকারিকরা তাদের জানান, তারা যে এই খুন করেছে তা নাসার একটি নজরদারি উপগ্রহে স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে। আর তা শুনেই ঘাবড়ে যায় সন্দেহের তালিকায় থাকা এই দুই যুবক।
প্রথমে খানিক আমতা আমতা করলেও, পুলিশ চাপ দেওয়ায় অভিযুক্তরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে। তারা পুলিশকে জানায়, চন্দ্রভান নিয়মিত তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। এই নিয়ে তাদের মধ্যে প্রথমে ঝগড়া এবং পরে হাতাহাতি হয়। এর পরই রাগের বশে চন্দ্রভানকে খুন করে অভিযুক্ত দুই যুবক।
আসলে কিন্তু নাসার ও রকম কোনও উপগ্রহই নেই । ফলে তাতে কোনও ভাবে খুনের ঘটনা ধরা পড়েনি। কিন্তু পুলিশ আধিকারিকরা এমন রং চড়িয়ে বলেন যে, তা সত্যি বলেই মনে করে অভিযুক্তেরা।
গত ৫ এপ্রিল আউটার রিং রোডের কাছে একটি পার্কে ওই যুবকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর যায় মঙ্গলপুরি থানায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে ওই যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে খুনের মামলা দায়ের করে পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পারবিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, খুন হওয়া যুবক চন্দ্রভান মঙ্গলপুরির বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, তাঁকে শেষ বার মোটরবাইকে অন্য দুই যুবকের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল।
তদন্তে নেমে বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়। সিসিটিভি দেখে পুলিশের নজর পড়ে মঙ্গলপুরি এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ এবং রাজুর উপর।
কিন্তু অন্য সন্দেহভাজনদের সঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলে তারা খুন করার কথা অস্বীকার করে।
অপরাধীদের হাতেনাতে ধরতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কথা মাথায় আসে পুলিশের। নাসার উপগ্রহের কথা বলে খুনের কথা স্বীকার করিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
অপরাধীরা জানায়, চন্দ্রভান মত্ত অবস্থায় প্রায়ই তাদের গালিগালাজ করতেন। চন্দ্রভানকে তাই ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে ৪ এপ্রিল মদ খাওয়ার অজুহাতে পার্কে নিয়ে যায় খুনিরা। সেখানেই তাঁকে পিটিয়ে খুন করে প্রদীপ এবং রাজু।