বয়স তখন সবেমাত্র ২। মুখে তখনও ঠিকমতো কথা ফোটেনি। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন শিলংয়ের বাসিন্দা দেবারতি চক্রবর্তী। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে প্রাণ হারান দেবারতির বাবা। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন তিনি।
বাবার মৃত্যুর পর মা-ই যেন সর্বক্ষণের সঙ্গী দেবারতির। মেয়ের জন্য কখনও বিয়েও করেননি দেবারতির মা। সন্তান যেন ‘দুধে-ভাতে’ থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে একা হাতে দেবারতিকে মানুষ করেছেন। তবে মায়ের বিয়ে দিয়ে চিরাচরিত প্রথা ভেঙে নেটাগরিকদের নজরে এসেছেন দেবারতি।
দেবারতি মায়ের নাম মৌসুমি চক্রবর্তী। ২৫ বছর বয়সে স্বামীকে হারান তিনি। তার পর মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান।
দিদার বাড়িতেই বড় হয়ে ওঠা দেবারতির। এক সাক্ষাৎকারে দেবারতি বলেছেন, ‘‘আমি মাকে সব সময় বিয়ে করতে বলতাম। কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হতেন না। মায়ের বিয়ে হলে আমার কী হবে, শুধু তা নিয়ে চিন্তা করে যেতেন।’’
দেবারতি জানিয়েছেন, তাঁর মাকে সকলে উপদেশ দিয়েছিলেন নিজের জীবন নতুন করে শুরু করার জন্য। কিন্তু মৌসুমি মনে করতেন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে না।
বিয়ে করার পর মৌসুমি তাঁর জীবনসঙ্গীকে সব সময় পাশে পাবেন ঠিক-ই, কিন্তু তাঁর মেয়ে কি জীবনসঙ্গীর মধ্যে নিজের বাবাকে খুঁজে পাবেন? দেবারতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এত বছর একা একা কাটিয়েছেন মৌসুমি।
বর্তমানে দেবারতি মুম্বইয়ে থাকেন। ফ্রিল্যান্স ট্যালেন্ট ম্যানেজার পদে কাজ করেন তিনি।
দেবারতি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমার এক কাকিমা হঠাৎ এক দিন আমাকে ফোন করে জানান যে, মাকে এক জন পছন্দ করেন।’’ জানতে পারি মায়ের সঙ্গে কিছু দিন আগেই তাঁর আলাপ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ মা যে জীবনে তাঁর ভালবাসা খুঁজে পেয়েছেন তা শুনে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।’’
দেবারতি বার বার তাঁর মাকে বোঝাতেন যেন মনের মানুষের সঙ্গে আগে ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
৫০ বছর বয়সে মৌসুমি বিয়ে করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা স্বপনকে। স্বপনের বয়সও ৫০ বছর।
চলতি বছরের মার্চ মাসে দেবারতি বিয়ে দেন মৌসুমির। টোপর মাথায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে স্বপন মেঘালয়ে এসেছিলেন মৌসুমিকে বিয়ে করতে। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে মায়ের বিয়ের ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।
বিয়ের সব রীতি মেনেই মায়ের বিয়ে দিয়েছেন দেবারতি। ইনস্টাগ্রামে বৌয়ের সাজে মায়ের ছবি পোস্ট করে দেবারতির মন্তব্য, তাঁর মাকে কনের সাজে ভীষণ সুন্দরী লাগছে।
দেবারতি জানিয়েছেন, মায়ের মতো আত্মবিশ্বাসী মহিলা তিনি জীবনে খুব কম দেখেছেন। দেবারতির মা প্রতিনিয়ত তাঁর জীবনে অনুপ্রেরণা দিয়ে যান।
দেবারতির বক্তব্য, বিয়ের পর তাঁর মায়ের জীবন বদলে গিয়েছে। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আগে মা সব কিছু নিয়েই বিরক্ত থাকতেন। এখন তিনি তাঁর জীবন উপভোগ করছেন। তাঁকে আনন্দে বাঁচতে দেখে আমিও খুশি।’’